দেশের কোথাও কোথাও মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার শৈত্যপ্রবাহ বহমান রয়েছে। সারাদেশে বেড়েছে কুয়াশার প্রকোপ। প্রায় সারা দেশই যেন কম-বেশি কুয়াশার চাদরে ঢাকা।
প্রচণ্ড শীতের কারণে রোগবালাই বেড়েছে। শীতজনিত নানা রোগে হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর ঘটনা অব্যাহত আছে। শনিবার দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আর সরকারি হিসাবে ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৫৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা জানান, শৈত্যপ্রবাহ আগের মতো না থাকলেও শীতের অনুভূতিটা আগের চেয়ে এখন বেশি। এর প্রধান কারণ তিনটি- ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার মধ্যকার পার্থক্য কম, কুয়াশার প্রকোপ ও বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্য।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রায় সারা দেশেই দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কম কিন্তু সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আগের (শৈত্যপ্রবাহকালীন) চেয়ে বেড়েছে। সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য যত কম থাকবে, শীতের অনুভূতি তত বেশি থাকবে। যদি ওই পার্থক্য ১০ ডিগ্রি বা এর নিচে নামে, তবে সেটা হাড়ে লাগার মতো শীতের অনুভূতি হবে।
বিএমডির এক বুলেটিনে দেখা যায়, প্রায় সারা দেশেই সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে গেছে। যদিও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আগের চেয়ে বেড়েছে কিন্তু উল্লিখিত পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকায় শীতের অনুভূতি কমছে না। বুলেটিনে দেখা যায়, শনিবার ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সর্বনিম্ন ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ, উভয়ের পার্থক্য ১০ ডিগ্রির নিচে। চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২০ দশমিক ৮ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি।
এভাবে দেশের অন্যান্য স্থানে তাপমাত্রার পার্থক্য কম-বেশি এমনই ছিল। আবার শৈত্যপ্রবাহকালে যেখানে তাপমাত্রা প্রায় ২ ডিগ্রির কাছে চলে গিয়েছিল, সেখানে শনিবার ছিল ৭ ডিগ্রি (পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়)। দেশের খুব অল্প এলাকায়ই মাঝারি বা মৃদু শৈত্যপ্রবাহ আছে। কিন্তু শীতের অনুভূতি যেন বেড়েছে।
আবহাওয়াবিদরা আরও জানান, দিনের দুই তাপমাত্রার পার্থক্য এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়, যদি সূর্যের কিরণকাল কম হয় বা সূর্যের আলো ধরণীতে পৌঁছতে না পারে। শীত মৌসুমে দিন এমনিতেই ছোট। সেই সঙ্গে প্রায় সারা দেশেই কমবেশি কুয়াশা আছে। এর আস্তরণ ১০০-২০০ মিটার।
ওই কুয়াশা প্রায় সারাদিন ধরেই কোথাও না কোথাও আছে। এমন পরিস্থিতিতে সূর্যের আলো ভূপৃষ্ঠে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। আবার দেশের কিছু স্থানে দুপুরের পর কুয়াশা কেটে গেলেও মিষ্টি রোদ আর সেভাবে ভূপৃষ্ঠ গরম করতে পারেনি।
অপরদিকে কয়েক দিন ধরে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণও বেশি। শনিবার সকালের পর্যবেক্ষণে বাতাসে ৯৯ শতাংশ জলীয় বাষ্প পাওয়া গেছে। সাধারণত ৮০ শতাংশ জলীয় বাষ্প থাকলেই তা কুয়াশা তৈরির জন্য উপযুক্ত হয়। এসব মিলিয়ে শীতের অনুভূতি বেশি।
আবহাওয়াবিদরা মনে করেন, সাধারণত বয়স, বাতাসের গতি, কুয়াশার প্রকোপ, সূর্যের কিরণকাল ইত্যাদির ওপর শীতের অনুভূতি নির্ভর করে। বয়স বেশি হলে শীতের অনুভূতি বেশি হয়। যত কম হবে অনুভূতি তত কম হয়ে থাকে। বাতাসের গতি কম থাকলেও শীতের অনুভূতি ও প্রকোপ বেশি মনে হয়।
এদিকে কুয়াশার কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে দিনের বেলায় স্পষ্টভাবে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। কোথাও কোথাও পরিস্থিতি এমন যে, ভোর ও সন্ধ্যায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো পড়ছে কুয়াশা। ঘন কুয়াশায় ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। দিনের বেলা গাড়ির হেডলাইট জ্বালিয়েও বেশি দূরের জিনিস দেখা যাচ্ছে না। দৃষ্টিসীমা কমে যাওয়ায় রেল চলাচলেও বিঘ্ন ঘটেছে। দেশের বিভিন্ন স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়া রেল গন্তব্যে দেরিতে পৌঁছেছে। ফেরি ঘাটেও দেখা দিচ্ছে বিপর্যয়।
বিএমডির এক বুলেটিনে বলা হয়, মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং কোথাও কোথাও তা দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
বিএমডি বলছে, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। তা ১-২ ডিগ্রিও হতে পারে। এ প্রক্রিয়া আরও এক সপ্তাহ অব্যাহত থাকবে। ২০ জানুয়ারির পর তাপমাত্রা আবার কমতে থাকবে। ২৪ জানুয়ারি নাগাদ ফের শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে।
এদিকে শীত কমে যাওয়ার পাশাপাশি প্রাদুর্ভাব ঘটেছে শীতজনিত নানা রোগের। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ শীতজনিত রোগী বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ন্যাশনাল হেলথ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টারের তথ্যমতে, শনিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় এআরআইয়ে (অ্যাবস্ট্রাক্টিভ রিসপারেটরি ইনফেকশন) আক্রান্ত হয়েছে ১২৬ জন।
এ রোগে মৃত্যু ঘটেছে ১ জনের। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ৩৯০ জন এবং নিউমোনিয়া, আমাশয়, জ্বর ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হয়েছে ১৪০ জন। তবে এসব রোগে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি বলে নিশ্চিত করেছেন অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
আবহাওয়া ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১২ :৫৫ পিএম, ১৪ জানুয়ারি ২০১৮, রোববার
এইউ