চাঁদপুর

সামাজিক নিরাপত্তা সংকটে চাঁদপুরের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়

চাঁদপুর জেলার ৮টি উপজেলায় শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন স্থানে রয়েছে নানা শ্রেণি পেশায় নিয়োজিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়।

তাদের জীবন মান নিয়ে তাদের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এদেশের সনাতন ধর্মালম্বী সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় স্থানীয়ভাবে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। যার ফলে সংখ্যালঘুরা সর্বক্ষেত্রে আতঙ্কে ও সংজ্ঞার মধ্যে থাকতে হয়।

তবে বড় ধরনের কোন সমস্যা সৃষ্টি হলে তারা তাৎক্ষণিক প্রশাসনকে ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে ঘটনা সম্পর্কে অবগত করলে তারা হস্তক্ষেপ করে থাকে। যার ফলে সংখ্যালঘুরা প্রশাসনের সহযোগিতায় কিছুটা নিরাপত্তা পেলেও সংকটে রয়েছে তাদের সামাজিক মর্যাদা ও নিরাপত্তা।

চাঁদপুর জেলায় সকল ধর্মের সিকি কোটি মানুষের বসবাস। এর মধ্যে ইসলাম ধর্মীয় ও সনাতন ধর্মীয় এ দুই সম্প্রদায়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি। সনাতন ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক সম্প্রদায়ের লোকের বসবাস এ জেলার ৮টি উপজেলাতেই রয়েছে।

এসব সংখ্যালঘুদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ‘সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার জন্য কোন কমিটি নেই। তাদের নিরাপত্তার জন্য প্রশাসন ছাড়া কেউ এগিয়ে আসে না। এদেরকে সব সময় সমাজ প্রধানরা নি¤œ বর্ণের মানুষ ধরে তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করে থাকে। এরা এদের নিরাপত্তার জন্য সমাজ প্রধানদের কাছে গেলে তাদের কথা শুনতে চায় না। সংখ্যালঘুরা সব সময় বসবাস করতে হয় আতঙ্ক ও সংজ্ঞার মধ্যে। অনেক সংখ্যালঘু বড় মানের ব্যবসায়ী ও অনেক সম্পদের মালিক রয়েছেন। তারা এলাকার প্রভাবশালী ও সমাজ প্রধানদের নিয়মিত ও মাসোহারা দিয়ে ব্যবসা ও সম্পদ রক্ষা করে চলছেন। তারা স্বাধীনভাবে নিজেদের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে চলতে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। সংখ্যালঘুরা জানান, স্থানীয় পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা তাদের কথা শুনে না বা শুনার চেষ্টাও করে না।

তবে এদের মধ্যে অনেকে বৃদ্ধ ভাতা, বিধবা ভাতা, মাতৃত্বকালীন দুধ ভাতাসহ অনেক ধরণের সরকারি ভাতার সুবিধা পেলেও পাননি সামাজিক পর্যন্ত।

স্থানীয়ভাবে চাঁদপুরে সংখ্যালঘুদের জন্য কোন মানবিক কমিটি নেই। তবে সংখ্যালঘুদের কথা বলার জন্য জেলা পর্যায়ে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ নামে একটি শক্তিশালী সংগঠন কাজ করছে। তাদের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি রয়েছে।

এ সম্প্রদায়ের বিষয়ে পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার জানান, ‘সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও তাদের জান মাল রক্ষায় প্রশাসন সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এরা যেন কোনো ক্ষেত্রে বঞ্চিত না হয় সে জন্যে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়ার পুলিশ সচেষ্ট আছে।’

চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার্স ইনচার্জ ওয়ালি উল্যাহ অলি বলেন, ‘সব ক্ষেত্রেই সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। তারা এখনও প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতার মধ্যেই সর্বক্ষেত্রে সর্ব জায়গায় সমান ন্যায় ও নিষ্ঠার সাথে সহযোগিতা চাইলেই পাচ্ছে।’

চাঁদপুর হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা জীবন কানাই চক্রবর্তী জানান, ‘চাঁদপুরের প্রশাসন সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছে। যার জন্যই তারা এখনও বসবাস করতে পারছে। আমরা যখনই প্রশাসনের কাছে হস্তক্ষেপ কামনা করি তখনই তারা আমাদের ব্যাপারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।’

রেলওয়ে হরিজন কলোনীর শ্রী শ্রী মহাবীর রাধাকৃষ্ণ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক বিধান চন্দ্র দাস (জনি) বলেন, ‘চাঁদপুরে প্রান্তিক হরিজনদের নিরাপত্তায় স্থানীয়ভাবে এখনও কোন নিরাপত্তার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় নাই। স্থানীয় কোন মানবিক কমিটি সংখ্যালঘুদের জন্য এখনও সৃষ্টি হয়নি। স্থানীয়ভাবে সাধারণ উদ্যোগ সময়ের মধ্যে এদেশে যখন কোন সংখ্যালঘুদের উপর হামলা ও নির্যাতন হয় সে প্রেক্ষাপটে স্থানীয় প্রান্তিক হরিজনরা নিজেদের নিরাপত্তায় সর্বদা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মোকাবেলা করে বসবাস করে থাকে। সরকার বর্তমানে সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা প্রদান করে যাচ্ছে। বর্তমানে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে চাঁদপুরে প্রান্তিক হরিজনরা নিজেদের মধ্যে ও স্থানীয় জনগণের সকলের উপস্থিতির মাধ্যমে একটি মানবিক কমিটির মাধ্যমে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধির অংশ গ্রহণে মানবিক কমিটি গঠন করে নিরাপত্তা প্রদান করতে পারে।

পুরান বাজার হরিজন যুব ক্লাবের সভাপতি শ্যামল চন্দ্র দাস হরিজন জানান, সংখ্যালঘু নিরাপত্তায় স্থায়ীভাবে কোন উদ্যোগ নেই। নিজস্ব সমস্যা সৃষ্টি হলে সামাজিকভাবে হরিজনদের পঞ্চায়েত কমিটি আছে তারাই সমাধান করে থাকেন। নিরাপত্তার জন্য কোন স্থানীয় কমিটি সরকারি বেসরকারি কেহই সৃষ্টি করেনি। স্থানীয়ভাবে নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনিক ও সামাজিক কোন কমিটি নেই। পুরাণ বাজার পুলিশ ফাঁড়ির থেকে দায়িত্বরত কর্তারা এসেও কোন নজরদারী বা সমন্বয় করেন না। কোন সমস্যার সৃষ্টি হলে সবাই একত্রিত হয়ে সমাধান চাই। কোন কোন সমস্যা সমাধান হয় আবার কোন কোন সমস্যা সমাধান হয় না। নিজেদের মধ্যেই উদ্যোগ নিয়ে সংখ্যালঘু নিরাপত্তার সমাধান প্রশাসনের কাছে চাইলে ফলাফল ভালভাবেই পেয়ে থাকি। আমাদের নিরাপত্তা বিধানে স্থানীয় ভাবে কোন সহযোগিকতা নাই। প্রান্তিক জনগণ সংজ্ঞ্যার মধ্যে থাকতে হচ্ছে। তারা এলাকার প্রভাবশালীদের নির্যাতনের ভয়ে আতঙ্কে থাকে। তারা নিরাপত্তা পাচ্ছে না। তাই দিন ও রাত আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করতে হয়। প্রশাসনের কাছে কোন কিছু নিয়ে তাদের সহযোগিতা চাইলে তারা সঠিকভাবে নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করে এবং সঠিক সমাধান দেয়। স্থানীয় পৌরসভা যদি সব সময় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর খোঁজখবর নেয় তাহলে এরা উপকৃত হতো।

হরিজন সমাজ উন্নয়ন সংস্থার চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি আকাশ দাস হরিজন জানান, ‘চাঁদপুরে প্রান্তিক হরিজন ও সংখ্যালঘুদের জন্য স্থানীয় ভাবে কোন নিরাপত্তা উদ্যোগ নেওয়া হয় না। স্থানীয় ভাবে কোন মানবিক কমিটি গঠন করা হয়নি। আমাদের এখানে কোন সমস্যা সৃস্টি হলে আমরা তা দলবদ্ব ভাবে প্রতিবাদ করা হয়।’

প্রতিবেদক- মাজহারুল ইসলাম অনিক
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৮: ৪৩ পিএম, ১৬ এপ্রিল ২০১৭, রোববার
ডিএইচ

Share