সাবেক প্রধানমন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরীর ছেলে আমানউল্লা মিজান রাজু চৌধুরীর বিরুদ্ধে কর ফাঁকি ও চেক জালিয়তির ৫ মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী হিসেবে গ্রেফতার করেছে গুলশান থানা পুলিশ।
মামলার ওয়ারেন্ট ভূক্ত আসামী হয়ে রাজু চৌধুরী দীর্ঘদিন যাবত ঢাকা গুলশানের ফ্ল্যাট বাসা ছেড়ে চাঁদপুর পুরানবাজার নিজ বাড়িতে অবস্থান করেছিলেন তিনি।
শনিবার (৯ জুন) দুপুরে গুলশান থানার এসআই শামিম গুলশানে রাজু চৌধুরীর ফ্ল্যাট বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে।
শুক্রবার রাতে তিনি চাঁদপুর থেকে ঢাকায় আসলে খবর পেয়ে গুলশান থানা পুলিশ তার বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করতে সক্ষম হয়।
গত বুধবার (২৩ মে) দিনগত রাতে চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করতে গিয়ে বাড়িতে খুঁজে পায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
রাজু চৌধুরী জমি বিক্রীর নামে গুলশানের ব্যবসায়ী শামীমের কাছ থেকে ৪২ লক্ষ টাকা নেয়। শামীম বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে ৩টি মামলা দায়ের করে। সেই ৩টি মামলার মধ্যে ২ টি মামলায় ৬ মাস করে রাজু চৌধুরীর বিরুদ্বে ১ বছরের সাজা প্রদান করে আদালত। এছাড়া কর ফাঁকি মামলায় তার সাজা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ। সাজা প্রাপ্ত আসামী হয়ে রাজু চৌধুরী বেশ কয়েক মাস পালিয়ে থাকার পর পুলিশ অবশেষে তাকে আটক করতে সক্ষম হয়।
অপরদিকে এর পূর্বে মামলার ওয়ারেন্টে কপি পেয়ে গুলশান থানার এসআই শামিম ও ফেরদৌস আলম সঙ্গীয় পুলিশ ফোর্স নিয়ে আসামী রাজু চৌধুরীর বাসায় বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়ে তাকে খুজে পায়নি। পুলিশ আসার পূর্বেই খবর পেয়ে সে জানতে পেরে রাজু চৌধুরী চাঁদপুরে তার নিজ বাড়িতে এসে গা ঢাকা দিয়ে থাকতো।
গুলশান থানা সূত্রে জানা যায়, আমানউল্লা মিজান রাজু চৌধুরীর বিরুদ্ধে কর ফাঁকি ও চেক জালিয়তিসহ বেশ কয়েকটি মামলার ওয়ারেন্ট রয়েছে। ঢাকা জজ আদালত ও টাংগাইল জজ আদালত থেকে এ পর্যন্ত ৫ মামলার ওয়ারেন্টের কপি গুলশান থানায় এসেছে। পুলিশ রাজু চৌধুরীকে আটক করতে তার বাসায় বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা যায়নি। তিনি গ্রেফতার আতঙ্কে চাঁদপুরে পালিয়ে থাকতেন।
গুলশান থানার এসআই ফেরদৌস আলম জানান, টাংগাইলের হানিফ উদ্দিন আহাম্মেদের ছেলে মামুনুর রশিদ পিন্টুর কাছ থেকে ৫২ লক্ষ টাকা প্রতারনা করে নেওয়ায় রাজু চৌধুরীর বিরুদ্ধে চেক জালিয়তি মামলার ওয়ারেন্ট জারি করেছে আদালত। টাংগাইল কোটের মামলা নং সি.আর ৭৬৩/১৭। ওয়ারেন্টের স্মারক নং ৩২০,তারিখ-২৫/৪/১৮। এছাড়া রাজু চৌধুরীর বিরুদ্ধে কর ফাঁকির মামলা ওয়ারেন্ট রয়েছে। সে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর ফাঁকি দিয়ে সরকারের কয়েক কোটি টাকার কর থেকে বঞ্চিত করেছে। রাজু চৌধুরী বহু লোকের কাছ থেকে প্রতারনা করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
প্রতারনার শিকার টাংগাইলের পিন্টু জানায়, আমানউল্লা মিজান রাজু চৌধুরী পাথর দেওয়ার কথা বলে ৪২ লাখ টাকা প্রতারনা করে নেয়। পরে পাথর না দিয়ে টাকা পরিশোধ করতে ২০১৭ সালের মে মাসের নয় তারিখে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে তার একাউন্টের ১৮-১১৫২০১৭-০১ হিসাব নাম্বার থেকে ৪২ লাখ টাকার একটি চেক দেয়। যার চেক নাম্বার ৭৫৪৪৮২৩। রাজু চৌধুরী টাকা না দিয়ে উল্টো তার আত্মীয় এক এমপির নাম ভাঙ্গিয়ে ভয় ভীতি দেখিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়ায় অবশেষে রাজু চৌধুরী ও তার স্ত্রী বেনজীর চৌধুরী আইভির বিরুদ্ধে টাংগাইল জজ কোটে চেক জালিয়তি মামলা দায়ের করি।
এছাড়া রাজু চৌধুরী মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানার শামসুদ্দিন বেপারীর ছেলে আমানউল্লা নামে এক নিরীহ যুবককে পুলিশে চাকুরি দেবার নামে প্রাতারনা করে ৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। টাকা ফিরত না পেয়ে টাকার শোকে ঐ ছেলের মা জাহানারা বেগম স্টোক করে মারা যায়। ক্ষতিগ্রস্থ আমানউল্লা জানায়, আমার বোন জামাতা রমজান ঢাকায় এশিয়া টিক নামক ঔষুধ কোম্পানীর গাড়ি চালক হিসেবে চাকরি করতেন। সেই অফিসে কর্মকর্তা মনির আহাম্মেদের সাথে রাজু চৌধুরী সম্পর্ক থাকায় তিনি সেখানে এসে প্রায় সময় বসে সময় কাঁটাতেন। সেই সুবাধে বোন জামাতার মাধ্যমে রাজু চৌধুরী পুলিশের এসআই পদে চাকরি নিয়ে দেবার কথা বলে ৯ লক্ষ টাকা নেন। টাকার বদলে সে তার স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের একটি চেক প্রদান করে সিকিউরিটি হিসেবে। টাকা না পেয়ে ও চাকরি না পাওয়ায় আমরা এখন দিশেহারা। মানুষের কাছ থেকে সুধে টাকা নিয়ে প্রতারক রাজু চৌধুরীকে দিয়েছি। এখন তার বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া কোন উপায় নেই।
গুলশান থানার এস আই শামিম জানান, আমানউল্লা মিজান রাজু চৌধুরীর বিরুদ্ধে কর ফাঁকি ও চেক জালিয়তি সহ বেশ কয়েকটি মামলার ওয়ারেন্ট ছিল। ঢাকা জজ কোট ও টাংগাইল জজ কোট থেকে এই পর্যন্ত ৫ মামলার ওয়ারেন্টের কপি গুলশান থানায় এসেছে। আমরা রাজু চৌধুরীকে আটক করতে তার বাসায় বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা যায়নি। তিনি গ্রেফতার আতঙ্কে চাঁদপুরে পালিয়ে ছিলেন বলে জানতে পেরেছি।
অবশেষে তিনি ঢাকায় আসার পর তার বাসা থেকে শনিবার দুপুরে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আশা হয়। তার বিরুদ্বে থাকা ৫টি সার্চ ওয়ারেন্টের মধ্যে ২টি আমার কাছে রয়েছে। বাকী ৩টি রয়েছে এস আই ফেরদৌস আলমের কাছে। তাকে আগামী কাল কোটে পাঠানোর দায়িত্ব আমার। তার পর কোট বাকী সিদ্বান্ত নিবে।
এদিকে রাজু চৌধুরীকে গ্রেফতার করতে ওয়ারেন্টের কপি গুলো গত রবিবার (১৭ মে) গুলশান থানা থেকে চাঁদপুর মডেল থানায় আসে। ওয়রেন্ট ভূক্ত আসামি আমানউল্লা মিজান রাজু চৌধুরীকে গ্রেফতার করতে ইতিমধ্যে পুলিশের সর্বোচ্চ মহল থেকে গুলশান জোনের ডিসি ও থানার ওসিকে নির্দেশ প্রদান করেছে বলে পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
এই ব্যাপারে অভিযুক্ত রাজু চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ব্যবসার জন্য পিন্টুর কাছ থেকে টাকা নিয়েছি। টাকা না দিতে পারায় সে চেক জালিয়তির মামলা করেছে। মামলাগুলো আদালতে মাধ্যমেই শেষ করার চেষ্টা করছি
এ ব্যাপারে গুলশান এলাকার ব্যবসায়ী শামীমের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান,আমার কাছ থেকে সর্বমোট ৩টি চেকের মাধ্যমে ৪২লক্ষ টাকা নিয়েছে আমানউল্লা মিজান রাজু চৌধুরীর । সে চেকের কারনে আদালতে মামলা করলে ২টি মামলায় তার ৬মাস করে ১ বছরের সাজা প্রদান করেন আদালত। সে মামলায় সে গ্রেফতার হয়েছে। এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,গ্রেফতার হওয়ার পর এখন ও তার পক্ষ থেকে আমার সাথে কেহ যোগাযোগ করেনি।
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট