রাজনীতি

সাধারণ সম্পাদকের পদ ছাড়তে চান আশরাফ!

‎Monday, ‎13 ‎July, ‎2015 06:34:10 PM

চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক:

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ আর অলংকৃত করে থাকতে রাজি নন সদ্য ‘দপ্তরবিহীন’ হওয়া মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। আসছে ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ের কিছু ‘আগে-পরে’ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সে সম্মেলনেই গঠনতান্ত্রিকভাবে সরে দাঁড়াতে চান সৈয়দ আশরাফ। মাঝের সময়টুকুতে দেশে-বিদেশে অবস্থান করেই ‘পার’ করতে আগ্রহী এই জ্যেষ্ঠ নেতা।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দুই সদস্য, একজন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং সৈয়দ আশরাফের এক আত্মীয়ের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। এই মুহূর্তে দলের সার্বিক পরিস্থিতি একটু ‘অন্য রকম’ হওয়ায় তারা নাম প্রকাশ করতে চাননি।

তবে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এসব বিষয়ে এখনি কোনো কথা বলতে চান না। শনিবার রাজধানীর একটি অনুষ্ঠানে এনটিভির প্রতিনিধির সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা হয় সাবেক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফের।

এই প্রবীণ নেতা বলেন, ‘এখনি এসব বিষয় নিয়ে কথা বলার সময় আসেনি। আমি এখন এ সব বিষয় নিয়ে কথা বলব না।’

এ সময় তাঁকে ‘দপ্তরবিহীন’ করার ক্ষেত্রে ‘ভিন্ন কোনো কিছু’ কাজ করেছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে উত্তর না দিয়ে নীরব থাকেন সৈয়দ আশরাফ এবং একটু হাসেন।

গত বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের (এলজিআরডি) মন্ত্রীর পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে ওই পদে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে দায়িত্ব দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি আগের মন্ত্রণালয়ে (প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের) অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করবেন এবং সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দপ্তরবিহীন মন্ত্রী থাকবেন বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এর পরই ধীরে ধীরে সৈয়দ আশরাফকে ‘দপ্তরবিহীন’ করার বিষয়টি নিয়ে নানা গুঞ্জন ছড়ায় রাজনৈতিক মহলে। যদিও দলের একটি সূত্র মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৈয়দ আশরাফের সাথে আলোচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর পর গতকাল শনিবার লন্ডনে অবস্থানরত শেখ রেহানাও সৈয়দ আশরাফকে ফোন করেন এবং তাঁর খোঁজ-খবর নেন।

প্রজ্ঞাপন জারির দিনই সৈয়দ আশরাফ রাজধানীর একটি অনুষ্ঠানে হাজির হলেও, এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। তবে শনিবার একটি অনুষ্ঠানে সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘আমি কোনোদিন কোনো সুবিধার জন্য রাজনীতি করি নাই। আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছিল কিন্তু তিনি কোনোদিন বিশ্বাসঘাতকতা করেন নাই। এটাই আমার রক্ত।’

তবে এ কথাগুলো বলার সময় সদা হাস্যোজ্জ্বল সৈয়দ আশরাফের কণ্ঠ ও শারীরিক অভিব্যক্তি (বডি ল্যাঙ্গুয়েজ) অন্য সময়ের মতো এতোটা ‘স্বভাবজাত’ ছিল না বলেই অভিমত সেখানে উপস্থিত দীর্ঘ সময় ধরে আওয়ামী লীগ বিট কাভার করেন এমন কয়েকজন সাংবাদিকের।

আশরাফ-ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র মনে করে, রাগ-ক্ষোভ বা মনোবেদনা থেকে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার মানসিকতা আশরাফের নেই। বরং নেতৃত্বের বিকাশ সাধনই তাঁর অন্যতম লক্ষ্য। মন্ত্রিত্ব হারানোর আগেই সৈয়দ আশরাফ তাঁর এ ইচ্ছার কথা কয়েক দফা ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহকর্মীদের কাছে জানিয়েছেন। এখনো তিনি সেই ধারণাই পোষণ করেন।

গত মে মাসে চীন সফরে যান সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তাঁর সঙ্গে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি প্রতিনিধিদলও চীনে যায়। অবকাশকালীন সময়ে চীনের একটি হোটেলে রাজনৈতিক আড্ডায় সৈয়দ আশরাফ আগামীতে আর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পদে না থাকার নিজস্ব সিদ্ধান্তের কথা বলেন।

প্রতিনিধিদলে থাকা একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা এ বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, “আশরাফুল ইসলাম তাঁর অনীহার কথা জানালে সেখানে উপস্থিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘আশরাফ ভাই, আপনি ছাড়া এ দলে আর কোনো যোগ্য সাধারণ সম্পাদক নাই। আপনিই যোগ্য, আপনাকেই আবারও হয়তো থাকতে হবে।’”

তখন সৈয়দ আশরাফ সেখানে উপস্থিত ফারুক খান ও অসীম কুমার উকিলের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘অনেকেই আছে।’ আশরাফ আরো বলেন, ‘নেতৃত্ব ধরে রাখার পক্ষে আমি নই। তরুণদের হাতে নেতৃত্ব ছেড়ে দিতে হবে।’

সাংগঠনিক আর দাপ্তরিক কাজে ‘সমানতালে অবহেলায়’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দপ্তর হারাতে হয়েছে বলে ‘প্রচলিত ধারণার’ কথাই বলছেন দলের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা।

তবে আশরাফ-ঘনিষ্ঠ দলের একজন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এ কথা মানতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘আশরাফের বিরুদ্ধে দলে ও সরকারে সময় না দেওয়ার অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে এ বছর প্রায় ৮০ ভাগ কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে। দায়িত্বে অবহেলা থাকলে এটা সম্ভব হতো না। তিনি আরো বলেন, একজন মন্ত্রী যেখানে থাকেন, সেখানটাই তাঁর অফিস। মন্ত্রণালয়ে যান না মানে দায়িত্ব পালন করা হয় না এ অভিযোগ ভিত্তিহীন।

সম্পাদকমণ্ডলীর আরো দুই নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দলে সময় দেন না এটি কথার কথা।আশরাফই আওয়ামী লীগের একমাত্র সাধারণ সম্পাদক যিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে এ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এমনও নজির রয়েছে সাধারণ সম্পাদক হয়েও তিনি উপজেলা পর্যায়ের সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছেন। সূত্র- এনটিভি

চাঁদপুর টাইমস : ডিএইচ/২০১৫।

চাঁদপুর টাইমস প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না

Share