কচুয়ায় শিকারীদের ফাঁদে বিলুপ্তির পথে সাদা বক

চাঁদপুরের কচুয়ায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে কৃষক ও কৃষির বন্ধু সাদা বক। দ্রুত নগরায়নের ফলে পরিবেশবান্ধব এসব পাখি আজ বিলুপ্তপ্রায়। কৃষিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও কারেন্ট জালের ব্যবহারের ফলে মারা পড়ছে এসব কৃষিবান্ধব পাখি। জলবায়ু পরিবর্তন ও পাখিদের আবাসস্থল বড় গাছ ও বন-জঙ্গল ধ্বংসের ফলেও হারিয়ে যাচ্ছে পাখি।

একসময় কচুয়া উপজেলার বিল ও জলাশয়ের ধারে দল বেঁধে নামতো দেশি সাদা বক। কৃষকের লাঙ্গল দিয়ে জমি কর্ষণ ও ফসল কাটার সময় পাখির দল ঘিরে ধরতো। পাখির দল ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে পেট ভরতো। জীববৈচিত্রের আদরমাখা এই দেশি পাখি এখন হারিয়ে যেতে বসেছে।

এমন বৈরি পরিবেশের মধ্যে কচুয়া উপজেলার কড়ইয়া ইউনিয়নের দরিয়া হয়াতপুর গ্রামের মাঠে ইরি ধানের ক্ষেতে কৃষক চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করার সময় দেখা গেলো শত শত সাদা বক। এ সময় দেখা যায়, প্রায় শতাধিক বক উড়ে এসে কৃষকের লাঙ্গলের ফলার চার পাশে ঘিরে কিচির মিচির শব্দে উড়ে পোকা খাচ্ছে। কখনো ঝাঁক ধরে উড়ে যাচ্ছে আকাশে। কখনও আবার এ জমি থেকে অন্য জমিতে উড়ে গিয়ে বসছে। অপূর্ব এদের এই কোলাহল দেখে মুগ্ধ কৃষক এলাকাবাসী ও পথচারিরা।

কৃষক আবুল খায়ের ইসলাম ও জাহাঙ্গীর জানান, এই সাদা বক আমাদের অনেক উপকার করে। চারা ধানের জমিতে মাজরা পোকা ও ফড়িংসহ ক্ষতিকারক পোকা খেয়ে থাকে। এছাড়া ক্ষেতে পানি দেওয়ার পর যেসব পোকা ভাসতে থাকে তা খেয়ে পরিষ্কার করে। এতে ফসলের উপকার হয়। কিন্তু এখন এই সাদা বক আগের মতো আর তেমন দেখা যায় না। শিকারীদের ফাঁদে পড়ে প্রায় বিলুপ্তির পথে এই সাদা বক।

উপজেলার আশারকোটা গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন জানান, ছোট বেলায় মাঠে অনেক ধরনের পাখি দেখতাম। প্রতিদিন ঘুম ভাঙতো পাখির ডাকে। কিন্তু বর্তমানে সেসব পাখি আর দেখা যায় না। গাছ কাটায় পাখিরা আবাসস্থল হারাচ্ছে। তাছাড়া জমির ফসলে কীটনাশক ব্যবহারের কারণে ছোট মাছ ও পোকামাকড় মারা যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বংশ বৃদ্ধিতো দূরের কথা টিকে থাকাই পাখিদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ছে। তবে প্রতিকূলতার মাঝেও সামান্য কিছু পাখি টিকে আছে।

উপজেলার সাচার ইউনিয়নের ঘুগড়ার বিলের কৃষক রাকিবুল হাসান চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ৫ থেকে ৭ বছর আগেও বাড়ির পাশের ঝোঁপ ঝাড়ে বসবাস করা অসংখ্য পাখির কিচিরমিচির ডাকে সন্ধ্যা হতো। আবার পাখির ডাকে ঘুম ভাঙতো। দ্রুত নগরায়নের ফলে পাখির আবাসস্থল হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে এখন আর আগের মতো পাখি দেখা যায় না।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. সাখাওয়াত হোসেন সুমন চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, বক আমাদের প্রাকৃতিক বন্ধু। বর্তমান বিশ্বে পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। গ্রামের ঐতিহ্য অপরূপ সৌন্দর্যের প্রতীক এই সাদাবক আগের মতো আর দেখা যায় না। এই পাখিটি পরিবেশ দূষণ ও শিকারীদের ফাঁদে পড়ে এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। এই পাখি মারার কোনো নিয়ম নেই। পাখিসহ সকল প্রকার পাখি টিকিয়ে রাখতে হলে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে।

প্রতিবেদক: জিসান আহমেদ নান্নু, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২

Share