Home / চাঁদপুর / চাঁদপুরে রাজত্ব করছে সাগর উপকূলীয় অঞ্চলের ইলিশ
ELISH-
ফাইল ছবি

চাঁদপুরে রাজত্ব করছে সাগর উপকূলীয় অঞ্চলের ইলিশ

চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা মিলছে না। এখানে রাজত্ব করছে সাগর উপকূলীয় অঞ্চলের ইলিশ। চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাট ইলিশে ভরপুর দেখা গেলেও মূলত এসব চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় আহরিত ইলিশ নয়।

বরিশাল, ভোলা এবং সন্দ্বীপসহ সাগর উপকূলীয় অঞ্চলের ইলিশেই ভরা এখন ইলিশের মাছঘাট ও বাজার। অথচ বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষজন এসে স্থানীয় ইলিশ ভেবে কিনে আশাহত হচ্ছেন।

চাঁদপুর মাছঘাটে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিনই চাঁদপুরের দক্ষিণে সাগর উপকূলীয় এলাকা থেকে ট্রলার বোঝাই বিভিন্ন সাইজের ইলিশ আসছে। সড়ক পথে ট্রাক, মিনি ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে করে দক্ষিণাঞ্চলীয় ভোলা, হাতিয়া, চর আলেকজান্ডার, চর ফ্যাশন, লক্ষ্মীপুরের কমলনগর থেকেও ইলিশ আসছে। শ্রমিকরা ঘাটে আসা ইলিশ টুকরিতে ভরে আড়তে তুলে বড় বড় স্তূপ করে সাজিয়ে রাখছেন- যা পাইকারদের হাতবদল হয়ে ককসিটের প্যাকেটজাত হয়ে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। তবে এখানে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা অধিকাংশ খুচরা ক্রেতা চাঁদপুরের ইলিশ ভেবে কিনে প্রতারিত হচ্ছেন।

চাঁদপুর শহরের নতুনবাজার, পালবাজার বিপণিবাগবাজার, ওয়ারল্যাচবাজার ঘুরে ও মাছঘাটের আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘাটে ওঠা অধিকাংশ ইলিশের সাইজ ১ কেজির নিচে। এক কেজির ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকা, ৮০০-৯০০ গ্রামের ইলিশ ৭০০-৮০০ টাকা, ৫০০-৬০০ গ্রামের ইলিশ কেজি প্রতি ৫০০-৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে লোকালে অর্থাৎ চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ যে পরিমাণ ধরা পড়ছে তা একেবারেই কম। ইলিশ না পাওয়ায় এখানকার জেলেদের অধিকাংশই এখন হতাশ। ট্রলার ও জাল নিয়ে চষে বেড়িয়েও ইলিশের দেখা মিলছে না।

জেলেদের জালে লোকালে যা পাওয়া যায় চাঁদপুর মাছঘাটে তার দামও আকাশচুম্বী। চাঁদপুরের রুপালি ইলিশের স্বাদ ও গন্ধ আলাদা। ক্রেতা চাহিদার কারণে চাঁদপুরের লোকাল ইলিশের দামও বেশি বলে জানান খুচরা মাছ বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য বণিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের সহসভাপতি আবদুল বারী জমাদার মানিক জানান, চলতি মাসের শুরুতে দক্ষিণাঞ্চল থেকে প্রচুর ইলিশ আসছে। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০টি ট্রলারযোগে গড়ে দেড়-দুই হাজার মণ ইলিশ চাঁদপুর ঘাটে আসছে।

আরও জানান, চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় বড় ইলিশ ধরা পড়ছে কম। এখন উপকূলীয় এলাকার ইলিশের স্বাদ কিছুটা কম। তবে আগামী দুই সপ্তাহ পর ওই সব অঞ্চলের ইলিশে স্বাদ বাড়বে।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুরে নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ৫২ হাজার ১৯০ জন। এর মধ্যে অধিকাংশ জেলেই পদ্মা-মেঘনা নদীতে ইলিশসহ অন্য মাছ আহরণ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে। তারা মা ইলিশ ও জাটকা রক্ষায় দুইবারের অভয়াশ্রমকালীন মাছ ধরা থেকে বিরত থাকলেও মৌসুমি কিছু অসাধু জেলে রাতের আঁধারে অবাধে মা ইলিশ ও জাটকা নিধন করেছে। তাই ভরা মৌসুমেও চাঁদপুরের নদীতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা মিলছে না।

তবে আশার কথা জানিয়েছেন চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক ড.আনিসুর রহমান। তিনি বলেন, ইলিশের মৌসুম সামনে (আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে) আসছে। এবারের ইলিশ হবে সুস্বাদু। কারণ আমরা নদীর পানি পরীক্ষা করে দেখেছি, লকডাউনে নদীতে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় নদীর পানি দূষণ অনেকটা কমে গেছে। ফলে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ বিচরণ করতে পেরেছে অনায়াসে, নির্ভয়ে। মাছের খাদ্য আহরণের জন্য নদীর অবস্থা বেশ ‘কনজেনিয়েল কনডিশন’ বিধায় এবারের ইলিশ হবে বেশি স্বাদের। (যুগান্তর)

বার্তা কক্ষ, ১৬ জুলাই ২০২০