বরগুনার তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের তেতুলিয়া গ্রামের প্রান্তিক জেলে হানিফ গাজী। ২০০৭ সালের প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় সিডরের আগের দিন বিকেলে অন্য আটজন জেলের সঙ্গে ট্রলারে করে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যান। কিন্তু রাতেই ঘূর্ণিঝড় সিডরের কবলে পড়ে সাগরে ট্রলার ডুবে নিখোঁজ হন সবাই।
ঘটনার পর আটজন জেলের কেউ আর ফিরে আসেনি। এরপর হানিফসহ অপর সাত জেলের নাম লিপিবদ্ধ করা হয় নিখোঁজের তালিকায়।
একদিকে ছেলে নিখোঁজ, অপরদিকে সিডরের তাণ্ডবে বাড়ি-ঘর বিধ্বস্ত হয়ে অভাব-অনটন ও শোকে পাথরপ্রায় হানিফের পরিবার। সিডর পরবর্তী সময়ে দেশি-বিদেশি সহায়তায় অভাব-অনটন দূর হলেও কখনই দূর হয়নি হানিফের অভাব।
হানিফের জন্য গত ১০ বছর ধরে কেঁদে চলেছেন তার মা। ভাইকে খুঁজে না পাবার শোক অনেকটা ভুলতে বসেছিলেন ভাই-বোনরা। এ অবস্থায় গত ১৮ নভেম্বর (শনিবার) বাড়ি ফিরেছেন হানিফ গাজী।
তেতুলিয়া গ্রামের মোনসের গাজীর ছেলে হানিফ গাজী। দারিদ্র্যের কারণে প্রাথমিক শিক্ষার পরে আর এগোয়নি তার পড়াশোনা। হানিফ যখন নিখোঁজ হন তখন তার বয়স ছিল ১৯ বছর। আর এখন ২৯। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডরের কবলে পড়ে বঙ্গোপসাগরে নিখোঁজ হয়েছিলেন হানিফ।
তবে দীর্ঘদিন পর হানিফকে ফিরে পাবার আনন্দের মাঝে বেদনাও আছে দরিদ্র পরিবারটিতে। হানিফ ফিরেছেন ঠিকই, কিন্তু কথা বলতে পারছেন না। ফলে কীভাবে বেঁচে ছিলেন এবং দীর্ঘ ১০ বছর কোথায় ছিলেন এর কিছুই বলতে পারছে না হানিফ। হানিফের ফিরে আসার খবরে দূর-দুরান্ত থেকে তাকে দেখতে আসছে মানুষ।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার তেতুলিয়ার রাস্তায় হাটতে দেখে স্থানীয়রা চিনে ফেলে হানিফকে। পরে হানিফের বাবা মোনসের গাজীকে খবর দেয় তারা। পরে মোনসের গাজী হানিফকে সনাক্ত করে বাড়ি নিয়ে যান।
বাড়ি ফিরলেও এখন পর্যন্ত কারও সঙ্গে কোনো কথা বলছেন না হানিফ। নির্বাক তাকিয়ে থাকেন সবার দিকে। খেতে বললে খাচ্ছেন। বসতে বললে বসেই থাকছেন। গোসলের সময় তাকে গোসল করিয়ে দিচ্ছেন মা-বাবা। সারাক্ষণই ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে দেখছেন চারপাশ।
হানিফকে ফিরে পাবার পর অশ্রুসিক্ত চোখে বাবা মোনসের গাজী জানান, গত ১০ বছরে এমন একটি দিন যায়নি যেদিন ছেলের জন্য কাঁদিনি। ছেলের আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। হানিফকে আর কোনোদিনই সাগরে যেতে দিবেন না বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, হানিফ পুরোপুরিভাবে সুস্থ নয়। কথা বলতে পারছে না, সবার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। তাকে ভালো ডাক্তার দেখানো দরকার। কিন্তু হানিফকে চিকিৎসা করানোর মতো টাকা আমাদের নেই। এসময় তিনি হানিফের চিকিৎসার সহায়তার জন্য সমাজের বিত্তবানদের প্রতি অনুরোধ জানান।
এ বিষয়ে নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দুলাল ফরাজি বলেন, ফিরে আসার খবর শুনে তিনি হানিফকে দেখে এসেছেন। হানিফের ভালো চিকিৎসা করানো দরকার বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে বরগুনার জেলা প্রশাসক মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রকৃত বিষয়টি জেনে ভুক্তভোগী পরিবারের সহযোগিতায় ব্যবস্থা নেবেন।
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ ১ : ০০ পিএম, ১৯ নভেম্বর, ২০১৭ রোববার
এইউ