বিশেষ সংবাদ

সাক্ষাতে পরিবারকে যা বলেছিলেন মুজাহিদ

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক মন্ত্রী মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের সাথে  বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে দেখা করেছেন পরিবারের সদস্যসহ নিকটাত্মীয়রা।

৩০ মিনিটের দেখা পর্বে তিনি পরিবারের সদস্যদেরকে এটর্নি জেনারেলের উদ্বৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘আজকের এটর্নি জেনারেলও উচ্চ আদালতের কাছে স্বীকার করে বলেছেন কোন হত্যাকান্ডের সাথে মুজাহিদের সরাসরি কোন সম্পৃক্ততা নেই’। এরপরও যদি আমার ফাঁসি কার্যকর করা হয়, তাহলে তা হবে ঠাণ্ডা মাথায় একজন নির্দোষ মানুষকে হত্যা করা। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পরিবারের ১২ সদস্যের দেখা পর্ব শেষে কারা ফটকের বাইরে কারাগার প্রাঙ্গণে উপস্থিত সাংবাদিকদের এ কথা জানান তার ছেলে আলী আহমেদ মাবরুর।

বুধবার উচ্চ আদালতে রিভিউ পিটিশন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই পরিবারের সদস্যরা কারাগারে গিয়ে আলী আহসান মুজাহিদের সাথে দেখা করার চেষ্টা চালান। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তার পরিবারের সদস্যরা আশানুরূপ সাড়া বা সহযোগিতা পাননি বলে অভিযোগে প্রকাশ। গতকাল বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে পরিবারের সদস্যসহ নিকটাত্মীয়রা কারাগার প্রাঙ্গণে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দেখা করার আবেদন জানায়। আবেদনে পরিবারের সদস্যসহ নিকটাত্মীয়দের মধ্যে থেকে ১২ জনের একটি নামের তালিকা দেয়া হয়। কারা কর্তৃপক্ষ আবেদনটি বিবেচনায় নিয়ে তাদেরকে দেখা করার অনুমতি প্রদান করেন।

কারাগার থেকে বের হয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে মাবরুব বলেন, ‘তিনি ভালো আছেন। শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন। মানসিকভাবে দৃঢ় আছেন। দেখা পর্বে তিনি আমাদের বলেছেন, ‘আমি নির্দোষ, আমি নির্দোষ, আমি নির্দোষ’। উচ্চ আদালতে আমার রিভিউ সাবমিটের পরই জাতির কাছে পরিস্কার হয়ে গেছে কোন সুনির্দিষ্ট হত্যাকান্ড বা অভিযোগের সাথে আমার সম্পৃক্ততার প্রমাণ হয় নাই। আজকের এটর্নি জেনারেলও স্বীকার করেছেন কোন হত্যাকান্ডের সাথে মুজাহিদের সরাসরি কোন সম্পৃক্ততা নাই। এরপরও যদি আমার ফাঁসি কার্যকর করা হয় তা হলে তা হবে ঠান্ডা মাথায় একজন নির্দোষ মানুষকে হত্যা করা। এরপর তিনি আমাদেরকে জানান, তার কাছে এখনও পর্যন্ত কারা কর্তৃপক্ষ রিভিউ খারিজ হয়ে যাওয়া সম্পর্কে কোন কিছুই জানায়নি। তিনি কোন আদেশের কপিও পাননি। তিনি জানিয়েছেন, আমি আদেশের কপি পাওয়ার পর আইনজীবীদের সাথে সাক্ষাৎ করতে চাই। এরপর তিনি বলেন, আইনজীবীদের সাথে আমার জরুরি কথা আছে। আইনজীবীদের সাথে জরুরি কথা প্রসঙ্গে আলী আহসান মুজাহিদ এ সময় তার পরিবারের সদস্যদেরকে জানান, আমি নাগরিক হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে আমার সাংবিধানিক অভিভাবক মনে করি। ব্যক্তিগতভাবে বর্তমান রাষ্ট্রপতি নিজেও একজন আইনজীবী ও আইনবিদও বটে। আমি আইনজীবীদের সাথে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতির কাছে একটি বিশেষ বিষয়ে লিখতে চাই।’

মাবরুর বলেন, দেখা পর্বে তার পিতা তাদেরকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছেন। সাহস রাখতে বলেছেন। আল্লাহপাক যদি তাকে শাহাদাতের ফায়সালা করে রাখেন তাহলে ইসলামী আন্দোলন এর মাধ্যমে বেগবান হবে এবং জাতীয় পর্যায়ে বড় আকারের ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে ইনশাআল্লাহ।

গতকাল দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে আলী আহসান মুজাহিদের পরিবারের সদস্যরা কারাগারের ভেতরে প্রবেশ করেন। দেখা পর্ব শেষে তারা কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন ২টা ৪৫ মিনিটে।

দেখা পর্বে যারা ছিলেন তারা হচ্ছেন, স্ত্রী তামান্না-ই-জাহান, বড় ভাই আলী আফজাল মোহাম্মদ খালেছ, ছোট ভাই ওজায়ের এম এ আকরাম, বড় ছেলে আলী আহম্মদ তাজদীদ, মেজ ছেলে আলী আহম্মদ তাহকিক, ছোট ছেলে আলী আহমেদ মাবরুর, মেয়ে তামরিনা বিনতে মুজাহিদ, বড় ছেলের স্ত্রী ফারজানা জেবিন, মেঝো ছেলের স্ত্রী নাসরিন কাকলি, ছোট ছেলের স্ত্রী সৈয়দা রুপাইদা, ভাগনে আ ন ম ফয়েজ হাদী সাব্বির ও স্বজন নুরুল হুদা।

কারাগারে প্রবেশের আগে মাবরুরসহ পরিবারের কোন সদস্য সাংবাদিক বা কারো সঙ্গে কথা বলেননি। দুপুর পৌনে ২টার দিকে একটি ব্যক্তিগত গাড়িতে চেপে পরিবারের সদস্যরা মূল কারাফটকের সামনে আসেন। সেখানে কয়েক মিনিট দাঁড়িয়েই তারা কারা ভেতরে যান।

নিউজ ডেস্ক ।।  আপডেট: ১২:০০ পিএম, ২০ নভেম্বর ২০১৫, শুক্রবার

ডিএইচ

Share