চাঁদপুর

বিজয় দিবসের সকল কর্মসূচিতে সরকারি কর্মকর্তাদের বাধ্যতামূলক থাকতে হবে

১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস চাঁদপুরে যথাযোগ্য মর্যাদায় উদ্যাপনের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতিমূলক সভা সোমবার (৫ নভেম্বর) সকাল ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সভায় জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খানের সভাপতিত্বে মহান বিজয় দিবস বাস্তবায়ন কল্পে ব্যাপক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

তিনি বক্তব্যে বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের বিজয় দিবসের সকল কর্মসূচিতে বাধ্যতামূলক থাকতে হবে। প্রত্যেকটি কর্মসূচিতে ক্যামারা স্থাপন করা হবে। ছবি তুলে রাখা হবে। বিজয় দিবসে প্রত্যেকর বুক-পকেটে বিজয় ফুল পরিধান করতে হবে। প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানকে বিজয় ফুল তৈরি করতে হবে। বিজয় দিবসের আগে সেই বিজয় ফুল বিক্রি করে ফান্ড তৈরি করতে হবে। এ বিষয়ে সেরা প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুরস্কৃত করা হবে। শহরের লেকের পাড়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ব অঙ্গিকার ঘষা-মাজা করে রং করতে হবে। কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লেতে ছাত্র-ছাত্রীদের পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ড্রেস ও শ্রঙ্খলাবদ্ধভাবে আসতে হবে।

তিনি আরো বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা হচ্ছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। শুধু বিজয় দিবসে নয়, সকল আচার-অনুষ্ঠানে তাদেরকে যথার্থ সম্মান করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করতে হবে তাদের মর্যাদা রেখে। আমাদের সকলকে মনে রাখতে হবে, মুক্তিযোদ্ধাদের কারণে বাংলাদেশ নামক দেশ পেয়েছি এবং দেশ স্বাধীন হয়েছে বলে আমরা আজ এখানে কথা বলতে পারছি। মহান বিজয় দিবসের প্রতিটি কর্মসূচি আন্তরিকভাবে এবং উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালন করতে হবে।

তিনি বলেন, সবার সম্মিলিত প্রয়াসে মহান বিজয় দিবস উদ্যাপন করবো। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানতে স্ব স্ব উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ মূলক আলোচনা ও প্রতিযোগিতার আয়োজন বাধ্যতামূলক করতে হবে। বিজয় দিবসের দিন জাতীয় পতাকা পুরনো কাপড়ের এবং নির্ধারিত সাইজের ছোট পতাকা উড়ানো যাবে না। তাহলে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সভার শুরুতেই মহান বিজয় দিবস-২০১৬-এর গৃহীত জাতীয় এবং চাঁদপুরে বাস্তবায়িত কর্মসূচি উপস্থাপন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শওকত ওসমান।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মো. জিহাদুল কবির পিপিএম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ মঈনুল হাসান, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার এমএ ওয়াদুদ, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডা. সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জীবন কানাই চক্রবর্তী, জেলা স্কাউট কমিশনার অজয় কুমার ভৌমিক, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, বাবুরহাট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোশারেফ হোসেন, হাসান আলী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইসমত আরা সাফি বন্যা, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার মহাসচিব হারুন আল রশীদ, মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী মাসুদা নূর খান।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ড. এএসএম দেলওয়ার হোসেন, জেলা পরিষদের সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কানিজ ফাতেমা, জেলা তথ্য অফিসার মো. নুরুল হক, মাতৃপীঠ সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার সাহা, লেডী দেহলভী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইলিয়াছ মিয়া, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বাবুসহ বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা।

এছাড়াও বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে। আগামী ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় চাঁদপুরের জেলা সদরে উদ্যাপনবে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়নে বেশ ক’টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছেঃ ১ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চাঁদপুর সরকারি কলেজ মাঠ ও পুরাণ বাজার মধুসুদন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠসহ জেলার সকল উপজেলায় গুরুত্বপূর্ন স্থানে জেলা তথ্য অফিসের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র ও চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে।

৩ ডিসেম্বর বিকেল ৩টায় চাঁদপুর স্টেডিয়ামে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভলিবল খেলার উদ্বোধন করা হবে। ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চাঁদপুর পৌরসভা, গণপূর্ত বিভাগের উদ্যোগে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপ, শপথ চত্বর, ইলিশ চত্বর এলাকা জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং বর্ণিল পতাকা দ্বারা সজ্জিতকরণ, আলোকসজ্জার আয়োজন করা হবে।

১৪ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত শিশু একাডেমীর আয়োজনে শিশু একাডেমীতে শিশুদের চিত্রাংকন, রচনা, আবৃত্তি, দেশাত্মবোধক গান ও লোকসংগীতের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। দিবসের সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ভোর ৫ টা ৫৭ মিনিটে মুক্তিযোদ্ধের স্মারক ভাস্কার্য অঙ্গিকার পাদদেশে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্য দিয়ে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের কর্মসূচী শুরু হবে। এরপর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে অঙ্গিকার পাদদেশে পুষ্পস্তবক অর্পন করা হবে।

ভোরে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সমূহে (সঠিক মাপ ও রং এর) জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে হবে। সকাল সাড়ে ৮টায় চাঁদপুর স্টেডিয়ামে জেলা প্রশাসক কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন। এরপর শুরু হবে পুলিশ, আনসার ভিডিপি, বিএনসিসি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিপেন্স, কারারক্ষী, রোভার স্কাউটস, স্কাউটস, গালর্স গাইড ও কমিনিউটি পুলিশসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠনির ছাত্র-ছাত্রী ও অন্যান্য শিশু কিশোর সংগঠনের কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম।

কুচকাওয়াজের পরপর শিশু-কিশোরদের শরীর চর্চা, ডিসপ্লে প্রদর্শন, ক্রীড়া অনুষ্ঠান, সকল শিক্ষার্থী কতৃক বিজয় ফুল তৈরি ও শরীরে ধারণ এবং পুরুস্কার বিতরণ। সকাল ১১টায় চাঁদপুর সার্কিট হাউজে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। সকাল ১১টায় থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত জেলার সকল সিনেমা হলে ছাত্র-ছাত্রী ও শিশু- কিশোরদের বিনামূল্যে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শন।

সুবিধাজনক সময় জাতির শান্তি, অগ্রগতি ও শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করে মসজিদ, মন্দির ও গীর্জায় বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হবে। দুপুরে হাসপাতাল, জেলখানা, এতিমখানা, শিশু পরিবার ও মূক-বধির স্কুলে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করতে হবে। বিকেল ৩টায় পুরাণ বাজার মধুসুদন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রীতি হা-ডু-ডু এবং একইসময় চাঁদপুর স্টেডিয়ামে বিজয় দিবস ভলিবল এর ফাইনাল খেলা এবং বাবুরহাট স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে প্রীতি ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।

বিকেল সাড়ে ৩টায় চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ মাঠে কলেজ পর্যায়ে ছাত্রীদের ক্রীড়া অনুষ্ঠান। বিকেল ৪টায় চঁাঁদপুর স্টেডিয়ামে জেলা প্রশাসক একাদশ বনাম পৌরসভা একাদশের মাঝে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বিজয় মেলা মঞ্চে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে “সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে ডিজিটাল প্রযুক্তি সার্বজনীন ব্যবহার এবং মুক্তিযুদ্ধ শীর্ষক আলোচনা ও সিম্পোজিয়াম।

প্রতিবেদক- মাজহারুল ইসলাম অনিক
৫ নভেম্বর, ২০১৮

Share