কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম জুয়লে
চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন মোল হেডের পর্যটন কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত ৩০ সেপ্টেম্বর স্থানীয় বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রায় ৩০ জন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। যা বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নতুন করে শহরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
পূর্বের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ৮ ডিসেম্বর প্রতিপক্ষ পৌর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ ঢালীর উপর ফের হামলা করে। এ ঘটান ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে এবং রাজনৈতিক ফায়দা নিতে কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহিম জুয়েলকে জড়িয়ে নতুন ভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সাংবাদিকদেরকে বিভ্রান্ত করছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল। এমন অভিযোগ করেছেন কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম জুয়েল।
তিনি জানান, বড় স্টেশন এলাকায় নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় দুটি গ্রুপ নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে এবং তার ধারাবাহিকতায় সেদিন হতাহতের ঘটনা ঘটেছিল, যা স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। ঐ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফয়েজ ঢালির উপর তারই প্রতিপক্ষ গ্রুপ অতর্কিত হামলা চালিয়ে তাকে পুনরায় হতাহত করে। এ ঘটনার সাথে আমি বা আমার সাথে সম্পৃক্ত এমন কেউই জড়িত নয়। তা সত্ত্বেও একটি স্বার্থান্বেষী মহল আমাকে জড়িয়ে বিভিন্নভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সাংবাদিকদেরকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছেন এবং হীন উদ্দেশ্যে সংবাদ প্রকাশ করে আমাকে ঘায়েল করার অপচেষ্টা করছেন। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, চাঁদপুর শহররক্ষা বাঁধের উপর গড়ে উঠা বড় স্টেশন মোল হেডের পর্যটন কেন্দ্রে ব্যক্তি মালিকানাধীন অবৈধভাবে অসংখ্য দোকানপাট এবং শিশুদের বিনোদনের বিভিন্ন রাইড রয়েছে। অবৈধভাবে গড়ে উঠা দোকানপাট এবং শিশুদের বিনোদনের রাইডগুলোতে গত ১৭ বছর যাবত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ভোগদখল করে আসছিল।
গত ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সারা দেশের ন্যায় চাঁদপুরেও আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি ও দখলবাজির সাথে জড়িত থাকা অংশের নেতাকর্মীরা পালিয়ে যায়। এই সুযোগে পূর্বে চাঁদাবাজ-দখলদারদের নিয়ন্ত্রণে থাকা চাঁদপুর শহরের অবৈধ স্থাপনাগুলো স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের একটি অংশ দখলে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। যার থেকে বাদ যায়নি চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন পর্যটন কেন্দ্র। এখানকার অবৈধ স্থাপনাগুলো দখল এবং নিয়ন্ত্রণে নিতে গিয়ে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জানান, ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনে বড় স্টেশন মোল হেডে ব্যক্তি মালিকানায় পরিচালিত শিশু রাইডগুলো বন্ধ রাখা হয়। এই রাইডগুলো চালানো এবং অবৈধ দোকানপাটের নিয়ন্ত্রণ এবং চাঁদাবাজি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ৭নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কবির সরকার, বিএনপি নেতা জিয়া প্রধানিয়া, সাবেক কাউন্সিলর আলী আহমদ সরকার, যুবদল নেতা কোরবান, শাহআলম, পৌর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ ঢালীসহ আরও অনেকে।
৩০ সেপ্টেম্বর সোমবার রাতে তারা দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। রাত ৮টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত চলা এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রায় ৩০ জন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়। আহতদের মধ্যে পৌর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ ঢালি, যুবদল নেতা শাহ আলমসহ অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার করা হয়।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪
