Home / শীর্ষ সংবাদ / হাজীগঞ্জে সাংবাদিককে ফাঁসাতে গিয়ে ফেঁসে গেলেন নিরাপত্তা প্রহরী
সাংবাদিককে

হাজীগঞ্জে সাংবাদিককে ফাঁসাতে গিয়ে ফেঁসে গেলেন নিরাপত্তা প্রহরী

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে নাশকতার পরিকল্পনার চেষ্টায় সাংবাদিককে ফাঁসাতে গিয়ে ফেঁসে গেলেন এক সরকারি কর্মকর্তা। এ ঘটনায় সাংবাদিকের তথ্যমতে পুলিশ ঐ কর্মকর্তাকে আটক করতে সক্ষম হয়।

ঘটনার বিবরনে জানাযায়, দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক এসএমএস লিখে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগ উঠে হাজীগঞ্জ বর্তমানে রামগঞ্জ খাদ্য গুদামের নিরাপত্তা প্রহরী নাজমুস সাদাতের বিরুদ্ধে। এর আগে এ নিরাপত্তা প্রহরী বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের কারণে আক্রোশের জেরে গত ২ অক্টোবর হাজীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক প্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক ও পরীক্ষামূলক মেঘনা পোস্ট ডট কম এর সম্পাদনার দায়িত্বরত গাজী মহিন উদ্দিনকে জড়িয়ে নাশকতার পরিকল্পনার তথ্য সংক্রান্ত ধর্মীয় উস্কানিমূলক এসএমএস পাঠায় বিভিন্ন দপ্তরে।

গত দুইদিন ধরে দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে মন্ত্রী, এমপি, সচিব, ডিসি, এসপি, সরকারি কর্মকর্তা এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থার বিভিন্ন কর্মকর্তাকে এসএমএস দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে রামগঞ্জ খাদ্য গুদামের নিরাপত্তা প্রহরী নাজমুস সাহাদাতকে আটক করে পুলিশ।

এ ঘটনায় ২ অক্টোবর রবিবার হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ বিষয়টি সন্দেহের তালিকা নিয়ে সাংবাদিক গাজী মহিউদ্দিনকে সাথে নিয়ে মাঠে নামে। হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জোবাইর সৈয়দের নির্দেশে সেকেন্ড অফিসার এসআই মোস্তাক আহামদ সাব্বির এবং ডিবি পুলিশের এস.আই ছালাম সঙ্গীয় ফোর্সসহ সাইবার ক্রাইমের একাধিক টিম তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে।

৩ অক্টোবর সোমবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে হাজীগঞ্জ পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড উত্তর পূর্ব মকিমাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশে তিনতলা ভাড়া বাসা থেকে তাকে আটক করে।

হাজীগঞ্জ থানার ওসি জোবাইন সৈয়দের সার্বিক সহযোগিতায় চৌকস কর্মকর্তা এসআই মোস্তাক আহামদ সাব্বিরের নিরলস পরিশ্রমে ২৪ ঘন্টায় আটক করতে সক্ষম হয়।

দূর্গা পূজাকে কেন্দ্র করে বিভ্রান্তি ছড়াতে সাংবাদিক গাজী মহিন উদ্দিনকে জড়িয়ে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক তথ্য দিয়ে নিরাপত্তা প্রহরী নাজমুস শাহাদাতের চোরাইকৃত ব্যবহৃত ০১৮৭১৪১৬৩৭১ মোবাইল নাম্বার থেকে এসএমএস পাঠায়।

বিভ্রান্তমূলক তথ্য প্রেরণের কাজে ব্যবহৃত ২টি সীমকার্ডের মধ্যে একটি হাজীগঞ্জ উপজেলার ৫নং হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বাড্ডা মিজি বাড়ির নূরজাহান বেগম নামের এক মহিলা এবং অন্যটি নাজমুস ছায়াদাৎ এর মেয়ে রিয়ার শাশুড়ির নামের রেজিস্ট্রেশন করা ছিল।

সীম কার্ডের রেজিস্ট্রেশনের সূত্রধরে বেরিয়ে আসে নাজমুস ছায়াদাতের সম্পৃক্ত থাকার ঘটনা।

এসএমএস পাঠানোর ডিভাইস হিসেবে অভিযুক্ত নাজমুস সাদাতের কাছ থেকে পুরাতন ভাঙ্গা বাটন মোবাইল উদ্ধার করে পুলিশ।
এসময় তার কাছ থেকে উদ্ধার করা ডায়েরীতে মন্ত্রী, এমপি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সচিব, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং সরকার দলীয় রাজনীতিবিদদের ব্যবহৃত হাতে লেখা মোবাইল নাম্বার পাওয়া যায়।

এ ঘটনায় হাজীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার সাধারণ ডায়েরী নং- ১৬৯, নন এফআইআর নং ১৮৭/২২। তারিখ- ৪/১০/২০২২।

এ নিরাপত্তা প্রহরীকে ছাড়িয়ে নিতে বিভিন্ন স্থানে দৌঁড় ঝাঁপ এবং থানার আশপাশে ঘুরতে দেখা যায় তার ভাতিজা হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা রাসেলকে।

মোবাইলটি উদ্ধারের পর পুলিশ জানতে পারে নাজমুস সাদাতের অনিয়ম দূর্নীতির প্রতিবাদ করায় খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার কার্যালয়ের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়ে খাদ্য মন্ত্রী, এমপি, সচিব, ডিসি, ইউএনওর ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে এসএমএস পাঠায়।

জানা যায় সাংবাদিক গাজী মহিন উদ্দিন চলতি বছরের ৬ই মার্চ সাপ্তাহিক হাজীগঞ্জ পত্রিকার অনলাইনে এবং ৯ মার্চ বুধবার সাপ্তাহিক হাজীগঞ্জ পত্রিকার শেষের পাতায় “হাজীগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ে ‘আতংকের নাম নিরাপত্তা প্রহরী নাজমুস সাদাত” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

সংবাদ প্রকাশের পর গত ১১ মার্চ চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম খানের স্বাক্ষরিত স্ট্যান্ড রিলিজ আদেশ রাজি করেন। আদেশে ১৪ মার্চের মধ্যে চট্টগ্রাম দেওয়ানহাট সিএসডিতে যোগদানের নির্দেশ দেয়। সে নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতিবন্ধী হওয়ার নাটক সাজিয়ে চাঁদপুরে বদলী হওয়ার চেষ্টা করে। এরপর তাকে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলা খাদ্য গুদামে নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে শাস্তিযোগ্য বদলী করা হয়। সেখানে কর্মস্থলে না গিয়ে বাসায় বসে বেতন তুলে নিচ্ছে। প্রতি মাসে কয়েকদিন রামগঞ্জ খাদ্য গুদামে গিয়ে হাজিরা দিয়ে আসে।

এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ জোবাইর সৈয়দ বলেন, বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় নিরাপত্তাপ্রহরী নাজমুস ছায়াতের আটক করতে সক্ষম হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে।

আক্রোশের শিকার গাজী মহিন উদ্দিন বলেন, নাজুমস সাহাদাতের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের পর ক্ষিপ্ত হয়ে মন্ত্রী, এমপি, সচিব এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের বিভ্রান্ত করতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে এসএমএস পাঠায়। হাজীগঞ্জ থানা পুলিশের সর্বাত্মক সহযোগিতা এবং প্রচেষ্টায় ষড়যন্ত্রকারীকে আটক করা সম্ভব হয়েছে।

প্রতিবেদক: জহিরুল ইসলাম জয় :