সারাদেশ

সাঁওতাল বসতিতে পুলিশের লাগানো আগুনের তদন্ত হবে

গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল বসতিতে পুলিশের লাগানো আগুনের ভিডিওটি তদন্ত করে দেখবে পুলিশ। ইতোমধ্যে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ভিডিওটি তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পুলিশের কেউ আগুন লাগানোর সঙ্গে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানায় তারা। মঙ্গলবার পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানান।

এর আগে, গতকাল (সোমবার) ‘সাঁওতালদের ঘরে আগুন দিচ্ছে পুলিশ!’ শিরোনামে একটি সংবাদ ও ভিডিও প্রকাশ হয়। যদিও ভিডিওটি নিয়ে পুলিশের সন্দেহ রয়েছে। তাই এটি যাচাইবাছাই করে দেখা হবে বলে জানায় পুলিশ। অন্যদিকে, সাঁওতাল, আইনজীবী, মানবধিকার কর্মীরা এ ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত করার দাবিও তুলেছেন।

পুলিশের আগুন লাগানোর বিষয়ে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ‘ভিডিওটা আমরা দেখেছি, ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এখানে পুলিশের কোনও স্বার্থ নেই।’

পুলিশ সেখানে কোনও উচ্ছেদে যায়নি উল্লেখ করে ডিআইজি আরও বলেন, ‘আমাদের তরফ থেকে মনে হচ্ছে, সেখানে পুলিশের যাওয়ার কথা না। পুলিশের এটা করারও কথা না। তারপরও ভিডিওতে পুলিশের পোশাকে কাউকে দেখা গেছে। পুলিশের কোনও ব্যক্তি জড়িত কিনা, ভিডিওটি বানানো কিনা, তা তদন্ত না করে বলা যাবে না।’

উচ্ছেদের ঘটনা তদন্তে ভিডিওটি আমলে নেয়া হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ডিআইজি বলেন, ‘আমরা ভিডিওটি আমলে নিয়েছি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে, তদন্তের পর সব জানা যাবে।’

তবে পুলিশের তদন্তের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সাইন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আশরাফুল আলম।

তিনি বলেন, ‘পুলিশের সংশ্লিষ্টতা থাকলে পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করলেও প্রশ্ন উঠতে পারে। আমাদের দেশে সাধারণত কোনও মামলার তদন্ত করে পুলিশ। যদি কোনও ঘটনায় কোনও সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে, তবে তদন্তের ক্ষেত্রে তারা না থাকাই ভালো। এক্ষেত্রে সরকার বিচার বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের সমন্বয় হতে পারে। বিচার বিভাগীয়ও হতে পারে।’

গাইবান্ধার পুলিশ সুপার (এসপি) আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ভিডিওটি খতিয়ে দেখছি। একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তিনি গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও, ছবি সংগ্রহ করছেন। পুলিশ আগুন দিয়েছে কি না, তা তদন্ত শেষ না করে বলা যাবে না।’

আগুন দেয়ার ভিডিও আমলে নিলেও এখন পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুব্রত সরকার বলেন, ‘পুলিশের যদি কেউ জড়িত থেকে থাকে, আমরা তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আমরা এখনও কাউকে চিহ্নিত করতে পারিনি। তবে ভিডিও দেখে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।’ যদিও গত রবিবার (১১ ডিসেম্বর) গোবিন্দগঞ্জ থানার এ কর্মকর্তাই বলেছেন, ‘পুলিশ আগুন দিয়েছে, এর কোনও সত্যতা পাওয়া যায়নি।’

পুলিশের আগুন দেয়ার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনার তদন্ত নিরপেক্ষ করার স্বার্থে আমরা চাইবো বিচার বিভাগীয় তদন্ত হোক। তবে মনে রাখতে হবে, মামলার ব্যাপারে বিচার বিভাগীয় তদন্ত সর্বশেষ তদন্ত না। মূল ঘটনা উদঘাটনের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানাব।’

উল্লেখ্য, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারে ৬ নভেম্বর আখ কাটাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশের গুলিতে ৩ সাঁওতাল মারা যান। এসময় পুলিশ তাদের বসত-ঘরগুলো আগুনে পুড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেন সাঁওতালরা। (বাংলাট্রিবিউন)

নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৭ : ৩০ পিএম, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬, মঙ্গলবার
ডিএইচ

Share