মোবাইল ফোনে কল করে সর্বহারা পার্টির পরিচয় দিয়ে টাকা দাবি করে চাঁদপুরে কর্মরত সরকারি চিকিৎসকসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাকে একের পর এক হত্যার হুমকি দেওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এতে করে আতঙ্ক বিরাজ করছে চাঁদপুর শহর ও বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং প্রশাসনে কর্মরত চিকিৎসক-কর্মকর্তাদের মাঝে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে তদন্তে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ধরণের কাউকে পেলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে তাদের।
জানা যায়, গত এক সপ্তাহে চাঁদপুর সদর, হাইমচর, হাজীগঞ্জ, শাহরাস্তি, মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ, কচুয়া ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও)সহ অন্তত ৩০জন চিকিৎসক ও আরো কিছু সরকারি কর্মকর্তাকে সর্বহারা পার্টির সেকেন্ড ইন কমান্ড পরিচয় দিয়ে চাঁদা দাবি করে যাচ্ছেন।
চাঁদার টাকা না দেওয়া হলে তাদেরকে হত্যা করার হুমকি দেওয়া হয়। এতে করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এসব চিকিৎসক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। কেউ কেউ আবার একে নিছক চাঁদাবাজি হিসেবে দেখছেন।
চাঁদপুর সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, হাইমচর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত ইউএইচএফপিও ডা. মামুন রায়হানকে গত ৭ নভেম্বর দুপুর ১টা ৫৫ মিনিট থেকে ২টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত ০১৮১৪৫৭২৮৯০ নাম্বার থেকে বেশ কয়েকবার ফোন করে নিজেকে সর্বহারা পার্টির সেকেন্ড ইন কমান্ড পরিচয় দিয়ে চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিকে তাকে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়।
এরপরই একই হাসপাতালের ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডা. রাশেদ মোহাম্মদ, ডা. অদিতি বিশ্বাস, ডা. নাজমা আহমেদকেও একই নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে সর্বহারা পার্টির পরিচয় দিয়ে টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে তাদেরকেও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে গত ৯ নভেম্বর হাইমচর থানায় তারা একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
এদিকে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শোয়েব আহমেদ চিশতি বলেন, গত ৫ নভেম্বর আমাকে ফোন দিয়ে সর্বহারা পার্টির পরিচয়ে চাঁদা দাবি করে। এ সময় তারা বলেন, তাদের সর্বহারা পার্টির অনেক লোকজন আহত হয়েছে। আহতদের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন, তাই তাদেরকে টাকা চাঁদা দিতে হবে, নয়তো আমাকে হত্যা করা হবে।
পরবর্তীতে গত ৭ নভেম্বর শনিবার আবারো আমার অফিসে ফোন দেওয়া হয়। এ সময় আমার আরো অন্ততপক্ষে ১০জন সহকর্মীর নিকট চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে তাদেরকেও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এই ঘটনায় পরে গত শনিবার হাজীগঞ্জ থানায় আমরা দু’টি সাধারণ ডায়রি করি।
চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. শাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, গত কয়েক দিনে সর্বহারা পার্টির পরিচয় দিয়ে মোবাইল ফোনে আমাদের হাজীগঞ্জ, হাইমচর, শাহরাস্তি, মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ, ফরিদগঞ্জ ও কচুয়া উপজেলার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে চাঁদা চেয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে। চাঁদা না দেওয়া হলে তাদেরকে প্রাণে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়।
এসব ঘটনায় আমাদের অনেক চিকিৎসক অত্যন্ত ঘাবড়ে গেছেন। অনেকেই বদলীর জন্য আমার কাছে সুপাশির করেন। বিষয়টি আমি ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধিদপ্তরসহ চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমানকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। পুলিশ আমাদের নিরাপত্তার বিষয়ে আশ^স্ত করেছেন। আমরা এই ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধা সরকার বলেন, বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছি। পাশাপাশি চিকিৎসকদের নিরাপত্তা আরো জোরদার করা হয়েছে। চিকিৎসকদের অফিস ও বাসবভনে পুলিশের টহল আগের চেয়ে আরো বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে জানান তিনি। হুমকিদাতাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
করেসপন্ডেট,১২ নভেম্বর ২০২০