দিবস পালনের ক্ষেত্রেও মিতব্যয়ী হচ্ছে সরকার

বিভিন্ন দিবস পালনের ক্ষেত্রেও মিতব্যয়ী হচ্ছে সরকার। এ ইস্যুতে কি করা যাবে আর কি করা যাবে না- এমন কতগুলো নির্দেশনা দিয়েছে সরকার।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সম্প্রতি এ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করা হয়েছে।

এতে জানানো হয়,জাতীয় পর্যায়ের নিম্নলিখিত দিবস/উৎসবগুলো যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন/পালন করা হবে- শহীদ দিবস/আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, জাতীয় বীমা দিবস,ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ, জাতির পিতার জন্ম দিবস ও জাতীয় শিশু দিবস, গণহত্যা দিবস স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস, মে দিবস, বৌদ্ধ পূর্ণিমা,শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল-এর জন্মবার্ষিকী,বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব-এর জন্মবার্ষিকী, জাতীয় শোক দিবস, শেখ রাসেল দিবস, জাতীয় সংবিধান দিবস, বিজয় দিবস, বড়দিন, বাংলা নববর্ষ, রবীন্দ্র জয়ন্তী,নজরুল জয়ন্তী, ঈদ-উল-ফিতর, ঈদ-উল-আযহা, ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা.) এবং দুর্গাপূজা।

যে সব দিবস ঐতিহ্যগতভাবে পালন করা হয়ে থাকে অথবা বর্তমান সময়ে দেশের পরিবেশ সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও সামাজিক উদ্বুদ্ধকরণের জন্য বিশেষ সহায়ক, সে সব দিবস উল্লেখযোগ্য কলেবরে পালন করা যেতে পারে বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।

এতে বলা হয়, মন্ত্রীরা এ সব অনুষ্ঠানে সম্পৃক্ত থাকবেন এবং এ ধরনের অনুষ্ঠানের গুরুত্ব বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। এ পর্যায়ের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য সরকারি উৎস থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা যেতে পারে।

এ ধরনের দিবসগুলো হল- জাতীয় সমাজসেবা দিবস,জাতীয় টিকা দিবস,জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস,জাতীয় পরিসংখ্যান দিবস, জাতীয় ভোটার দিবস, জাতীয় পাট দিবস, বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস, বিশ্ব আবহাওয়া দিবস, জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস, আন্তর্জাতিক ক্রীড়া দিবস ও জাতীয় ক্রীড়া দিবস, বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস, মুজিবনগর দিবস, নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস, জাতীয় চা দিবস, বিশ্ব পরিবেশ দিবস,মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস, বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস,জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস, জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস, আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস, বিশ্ব নৌ দিবস, জাতীয় উৎপাদনশীলতা দিবস, শিশু অধিকার দিবস, আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস, বিশ্ব খাদ্য দিবস,জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস, জাতীয় যুব দিবস,জাতীয় সমবায় দিবস, বিশ্ব এইডস দিবস, জাতীয় বস্ত্র দিবস, আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস,বেগম রোকেয়া দিবস, ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস।

বিশেষ বিশেষ খাতের প্রতীকী দিবসগুলো সীমিত কলেবরে পালন করা হবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এতে বলা হয়, মন্ত্রীরা এ সব দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিতির বিষয় বিবেচনা করবেন। উন্নয়ন খাত থেকে এ সব দিবস পালনের জন্য কোনো বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হবে না।

এ ধরনের দিবসগুলো হল- বার্ষিক প্রশিক্ষণ দিবস, জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস, জাতীয় ক্যান্সার দিবস, আন্তর্জাতিক নারী অধিকার ও আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস, জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস, বিশ্ব পানি দিবস, বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস, বিশ্ব মেধা সম্পদ দিবস, জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস, জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি দিবস, বিশ্ব প্রেস ফ্রিডম দিবস, আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস, বিশ্ব টেলিযোগাযোগ দিবস, বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস, বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস, বিশ্ব খরা ও মরুকরণ প্রতিরোধ দিবস, আন্তর্জাতিক সমবায় দিবস, আন্তর্জাতিক ওজোন সংরক্ষণ দিবস, বিশ্ব পর্যটন দিবস, বিশ্ব হার্ট দিবস, আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস, বিশ্ব বসতি দিবস, জাতীয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন দিবস, বিশ্ব ডাক দিবস, বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস, বিশ্ব সাদা ছড়ি দিবস, জাতিসংঘ দিবস, জাতীয় স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান দিবস, বিশ্ব ডায়াবেটিক দিবস, প্যালেস্টাইনি জনগণের প্রতি আন্তর্জাতিক সহমর্মিতা দিবস, বিশ্ব মানবাধিকার দিবস, আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস, জাতীয় জীববৈচিত্র্য দিবস এবং জাতীয় শিক্ষক দিবস।

পরিপত্রে বলা হয়,উপরে উল্লিখিত তিন ধরনের দিবস ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো আরও কিছু দিবস পালন করে থাকে, যা গতানুগতিক ধরনের। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দিবসগুলো পুনরাবৃত্তিমূলক এবং বর্তমান সময়ে তেমন কোনো গুরুত্ব বহন করে না। সরকারের সময় এবং সম্পদ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে সরকারি সংস্থাগুলো এ ধরনের দিবস পালনের সাথে সম্পৃক্তি পরিহার করতে পারে।

এতে বলা হয়, শিক্ষা সপ্তাহ, প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ, বিজ্ঞান সপ্তাহ, বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ (১-৭ আগস্ট), বিশ্ব শিশু সপ্তাহ ২৯ সেপ্টেম্বর-৫ অক্টোবর, সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২১ নভেম্বর, পুলিশ সপ্তাহ, বিজিবি সপ্তাহ, আনসার সপ্তাহ, মৎস্য সপ্তাহ,বৃক্ষরোপণ অভিযান এবং জাতীয় ক্রীড়া সপ্তাহ পালনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা নিয়ে কর্মসূচি গ্রহণ করবে। অনুমোদিত কর্মসূচি অনুযায়ী অনুষ্ঠানাদির আয়োজন করা হবে।

জাতীয় পর্যায়ের উৎসব ব্যতীত সাধারণভাবে দিবস পালনের ক্ষেত্রে আরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

এ ইস্যুতে পরিপত্রে আরও যেসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সেগুলো হল:

(ক) সাজসজ্জা ও বড় ধরনের বিচিত্রানুষ্ঠান যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে। তবে, রেডিও ও টেলিভিশনে আলোচনা এবং সীমিত আকারে সেমিনার/সিম্পোজিয়াম আয়োজন করা যাবে। কর্মদিবসে সমাবেশ/ শোভাযাত্রা পরিহার করা হবে।

(খ) কোনো সপ্তাহ পালনের ক্ষেত্রে অনুষ্ঠানসূচি সাধারণভাবে তিনদিনের মধ্যে সীমিত থাকবে।

(গ) সরকারিভাবে নেয়া কোনো কর্মসূচি যাতে অফিসের কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত না ঘটায়, তা নিশ্চিত করতে হবে এবং আলোচনা বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদি ছুটির দিনে অথবা অফিস সময়ের পরে আয়োজনের চেষ্টা করতে হবে।

(ঘ) নগদ কিংবা উপকরণ আকারে অর্থ/সম্পদ ব্যয়ের প্রয়োজন হবে না এরূপ সাধারণ ইভেন্টগুলো ছুটির দিনে কিংবা কার্যদিবসে আয়োজন করা যাবে। যেমন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী প্রচার,পতাকা উত্তোলন (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), ঘরোয়া আলোচনা সভা,রেডিও ও টেলিভিশনে আলোচনা,পত্রিকায় প্রেস বিজ্ঞপ্তি ইত্যাদি।

(ঙ) কোনো দিবস বা সপ্তাহ পালন উপলক্ষে রাজধানীর বাইরে থেকে/জেলা পর্যায় থেকে কর্মকর্তা/কর্মচারীদেরকে ঢাকায় আনা যথাসম্ভব পরিহার করা হবে।

এ অবস্থায় এসব সিদ্ধান্তগুলো যথাযথভাবে প্রতিপালনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগ/সংস্থাকে অনুরোধ করা হয় পরিপত্রে। এছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস উদ্‌যাপন পালন সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা আগের পরিপত্রটি বাতিল করা হল বলেও এতে জানানো হয়েছে।

এর আগে ২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর করোনাকালীন সময়ে জারি করা পরিপত্রে এ ধরনের নির্দেশনা দিয়েছিল সরকার। সেটি বাতিল করে নতুন এ পরিপত্র জারি করলো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

৭ ডিসেম্বর ২০২২
এজি

Share