চাঁদপুর ব্রিজের টোল আদায় বন্ধে সরকার এখন রাজস্ব খাতে কয়েক কোটি টাকা হারাচ্ছে বা হারানোর সম্মুখীন হচ্ছে। দফায় দফায় টোল ঘরটি আক্রান্ত হওয়ায় এর টোল আদায় কার্যক্রম এখনো সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।
চাঁদপুর সওজের একজন সাব-এসিসটেন্ট ইঞ্জিনিয়ার ৮ ডিসেম্বর দুপুরে এ তথ্য চাঁদপুর টাইমসকে জানান।
চাঁদপুরে দ’ুটি ব্রিজের সরকার গৃহীত টোল আদায় চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে জুনে। ২০২৪-’২৫ অর্থবছর থেকে আগামি ৩ বছর জুন ২০২৭ সাল পর্যন্ত সরকারের রাজস্ব খাতে এতে ১৫ কোটি ৪২ লাখ ৫০ হাজার টাকার সরকারের রাজস্ব আয় হওয়ার কথা ছিল বলে চাঁদপুর সড়ক ও যোগাযোগ বিভাগের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে।
৮ ডিসেম্বর দুপুরে চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের আপাতত নাম প্রকাশে অনিচ্ছ’ক একজন প্রকৌশলী বলেন,‘ চাঁদপুর ব্রিজের টোল আদায় সম্পর্কে ঊর্ব্ধতন কর্তৃপক্ষকে পর্যায়ক্রমে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে।
৫ আগস্ট থেকে এ ব্রিজের টোল আদায় বন্ধ রয়েছে। জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সম্মেলন কক্ষে এ ব্যাপারে সভা হয়েছে। সভায় ৭টি নিদের্শনা দিয়ে টোল আদায়ের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও পুনরায় টোল ঘরটি ভেঙ্গে দেয়া হয়। টোল আদায়ে বর্তমানে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ রয়েছে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের আইনি সহায়তা পেলেই টোল আদায়ের কার্যক্রম নেয়া হবে। ’
এদিকে ২৩ অক্টোবর বেলা সাড়ে ১১টায় ছাত্র-জনতা ও জেলা প্রশাসকের যৌথসভায় চাঁদপুর সেতুর টোল আদায়ের সিদ্ধান্ত মতে চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের ৭ নির্দেশনা নিয়ে চাঁদপুর সেতুর টোল আদায়ের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। জেলা প্রশাসন ও ইজারাদার মেসার্স এম আই ট্রেডিং কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে,জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে চাঁদপুর সেতুর টোল আদায় সম্পর্কিত এ সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
নির্দেশনাগুলো হলো : ১.সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক সবাই টোল আদায়ে একমত পোষণ করেন।
২. সভায় উপস্থিতির প্রস্তাব ও ইজারাদারদের সম্মতিক্রমে সেতুতে ইজিবাইক পারাপারে প্রতিবারে ১০ টাকার স্থলে ৫ টাকা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
৩. বর্তমান ইজারার মেয়াদের পর হতে সেতুতে টোল আদায়ের কার্যক্রম বন্ধ করার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সাথে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ বা ব্যবস্থাগ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়।
৪.যানজট নিরসনকল্পে ইজারাদার দু’স্থানে টোল আদায়ের কার্যক্রম গ্রহণ করবেন।
৫. সেতুর সংযোগ সড়কে টোল আদায়ের সুবিধার্থে মূল সড়কের পাশে বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে সড়ক বর্ধিতকরণ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
৬. টোল আদায় কার্যক্রম সহজ করার লক্ষ্যে ইজারাদার কর্তৃক জনবল বৃদ্ধিকরণ ও নিয়োজিত কর্মীর গায়ে ইজারা প্রতিষ্ঠানের লোগোসহ পোশাক পরিধান পূর্বক টোল আদায় করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
৭. টোল আদায় কার্যক্রমে মূল ইজারাদার ও তার নিয়োজিত কর্মী ছাড়া অন্য কেউ টোল আদায় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।
প্রসঙ্গক্রমে প্রাপ্ত তথ্যে আরো জানা যায়,চাঁদপুর জেলায় ৪টি বড় রকমের ব্রিজ রয়েছে। এগুলো হলো : চাঁদপুর-রায়পুর ব্রিজ,মতলব ব্রিজ, চাঁদপুর-পুরাণ বাজার ব্রিজ এবং হাজীগঞ্জ-রামগঞ্জ ব্রিজ। চাঁদপুর-রায়পুর ব্রিজটি ৩ বছর মেয়াদে ২০১৪ সালে প্রণীত জাতীয় টোল নীতিমালার আলোকে টোল আদায়কারী প্রতিষ্ঠানের সাথে ঐ টোল চুক্তি সম্পন্ন হয়। আগামি তিন বছরে ব্রিজটি থেকে সরকারে সেতু ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ঔ রাজস্ব পাবে।
চুক্তি মোতাবেক এর মেয়াদ ১ জুলাই ২০২৪ শুরু এবং আগামি ৩০ জুন ২০২৭ শেষ হবে। এ ছাড়াও ১৫% ভ্যাট হিসেবে টাকা এবং ৫% আয়কর হিসেবে টাকা সরকারের রাজস্ব খাতে চুক্তির শর্ত মতে জমা দিতে হবে এবং টোলের সমুদয় টাকা ১২ কিস্তিতে টোলচুক্তির ৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা ইজাদার বা টোল গ্রহীতাকে পরিশোধ করতে হবে। এ ব্রিজটির দৈর্ঘ্য ২৪৮ মিটার। যা ১৮ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছিল। চাঁদপুর জেলা সদরের ওয়্যারল্যাস থেকে দক্ষিণে চলে যাওয়া ডাকাতিয়া নদীর ওপর ব্রিজটি নির্মিত হয় যা চাঁদপুর-রায়পুর ব্রিজ নামে পরিচিত।
মতলব সেতু আগামি ৩ বছরে ব্রিজটি থেকে সরকারের সেতু ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় রাজস্ব পাবে ৬ কোটি ২৭ হাজার ৫০ হাজার টাকা। চুক্তি মোতাবেক এর মেয়াদ ১ জুলাই ২০২৪ শুরু এবং আগামি ৩০ জুন ২০২৭ শেষ হবে। এ ছাড়াও ১৫% ভ্যাট এবং ৫% আয়কর সরকারের রাজস্ব খাতে চুক্তির শর্ত মতে জমা দিতে হবে।
মতলব উত্তর-দক্ষিণের সাথে সেতুবন্ধন ও ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ তথা কৃষিপণ্য দ্রব্য পাঠাতে, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার সাথে যোগাযোগ করতেই মতলব ব্রিজটি নির্মিত হয়েছে। এ ব্রিজটি ৮৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ে মতলবের মেঘনা-ধনাগোদা নদীর ওপর এটি নির্মিত হয়। যার দৈর্ঘ্য ৩০৪.৫১ মিটার।
চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের সূত্র মতে, দেশের বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় নিয়ে একটি জাতীয় টোল আদায় কমিটি গঠন করা হয়। ঐ কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০১৪ সালে সারাদেশের ব্রিজগুলোর রাজস্ব আদায় নিয়ে একটি ‘ জাতীয় টোল আদায় নীতিমালা’ করা হয়। জাতীয় ঔ নীতিমালায় দেশের সব জেলায় ১৯৯ মিটার পর্যন্ত সকল ব্রিজের টোল আদায়যোগ্য। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এতে রাজস্ব আদায় করতে পারবে বলে বিবেচিত হবে।
জাতীয় টোল আদায় নীতিমালা অনুযায়ী চাঁদপুরের মতলব ব্রিজ ও চাঁদপুর-রায়পুর এ ব্রিজ দুটিসহ অপর দুটিও টোল আদায়যোগ্য। তবে চাঁদপুরের অপর দুটি বড় ব্রিজ পুরাণ বাজার-চাঁদপুর ব্রিজ এবং হাজীগঞ্জ-রামগঞ্জ ব্রিজ দু-টোই বর্তমানে ২০১৪ সালের টোল আদায় নীতিমালার পূর্বেই টোলমুক্ত ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সুতরাং ঔ নীতিমালার আওতায় হলেও এ দুটো ব্রিজ থেকে টোল আদায় করা হচ্ছে না। ’
এদিকে হাজীগঞ্জ-রামগঞ্জ ব্রিজটি ২০ নভেম্বের ২০০২ সাল পর্যন্ত টোল আদায় চুক্তি হয়। যার মেয়াদ ৯ নভেম্বর ২০১০ সাল পর্যন্ত ছিল।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি,ব্যবসায়ী,পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তৎকালীন সময়ে ২০১০ সালে টোল আদায় মুক্ত ঘোষণা করা হয়। ব্রিজটির দৈর্ঘ্য ১১৬.৬১ মিটিার। চাঁদপুর-পুরাণ বাজার ব্রিজটি ১১ মার্চ ২০১০ সালে টোল চুক্তিবদ্ধ হয়।
১১ মার্চ ২০১১ সালে ব্রিজটি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি,চাঁদপুরের ব্যবসায়ীমহল,পরিবহন মালিক-শ্রমিক ও চাঁদপুরবাসীর আবেদনের ফলে ব্রিজটির টোল মুক্ত ঘোষণা করা হয়। ব্রিজটির দৈর্ঘ্য ২৬০.৫৯ মিটার । আন্ত:মন্ত্রণালয় বৈঠকে ‘জাতীয় টোল নীতিমালা ২০১৪’ সালে গৃহীত হয়।
এতে সরকারের পরিকল্পনা, যোগাযোগ, সেতু,অর্থ সংস্থাপন মন্ত্রণালয় সহ বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে জাতীয় টোল আদায় নীতিমালা ২০১৪। কোনো ব্রিজের টোল ফ্রি করা বা না করার বিষয়টি সম্পূর্ণ কমিটির সিদ্ধান্তের ব্যাপার। সড়ক ও জনপথ বিভাগ ইচ্ছা করলেই টোল আদায় চুক্তি ’বা ‘টোল মুক্ত ঘোষণা করতে পারে না বলে জানা যায় ।
আবদুল গনি
৮ ডিসেম্বর ২০২৪
এজি