রাজনীতি

সরকার ফেসবুককে ১০০ টি রিপোর্ট করলে চার থেকে পাঁচটি রেসপন্স করে

আপত্তিকর কনটেন্টের বিষয়ে সরকারের রিপোর্টের বিপরীতে ফেসবুক সেভাবে রেসপন্স করে না জানিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমরা যদি ১০০টা রিপোর্ট করি তবে হয়তো চারটা বা পাঁচটার দিকে তারা নজর দেয়।

রোববার (৫ জুলাই) সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক আন্তমন্ত্রণালয় সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে মন্ত্রী এ কথা বলেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ওটিটি প্লাটফর্ম ব্যবহার করে বাংলাদেশে বিদেশি কনটেন্ট প্রদর্শন এবং বাংলাদেশি বিভিন্ন কনটেন্ট প্রদর্শন, বিজ্ঞাপন প্রচারসহ সামগ্রিক বিষয়টি একটি নিয়ম-নীতির মধ্যে আনা ও করের আওতাভুক্ত করার লক্ষ্যে এ সভার আয়োজন করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের মতো অতি প্রয়োজনীয় জিনিসে পরিণত হয়েছে। ইন্টারনেটের চাহিদা শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ বেড়ে গেছে।

তিনি বলেন, ইন্টারনেটের শতকরা ৮০ ভাগ ব্যবহার হয় মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে। এজন্য মোবাইল অপারেটরদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

‘একেবারে জাতির পিতা থেকে শুরু করে এমপি, এমনকি সাধারণ মানুষ পর্যন্ত গুজব, হয়রানি ও অপপ্রচার এবং অন্যান্য বিষয়ের শিকারে পরিণত হচ্ছে এবং এটি বাস্তবতা। এখন সোশ্যাল মিডিয়া সবচেয়ে শক্তিশালী মিডিয়ায় পরিণত হয়েছে।’

প্রচলিত গণমাধ্যমও সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করছে জানিয়ে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, আমি যে বিষয়টা দেখি- এর একটি বাণিজ্যিক দিকও আছে। বাংলাদেশে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে। যে বিজ্ঞাপন একসময় কাগজের পত্রিকা ও টেলিভিশনে দেয়া হত, সেই বিজ্ঞাপন এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় কিংবা বিভিন্ন ওটিটি প্লাটফর্মে দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ক্ষতির পরিমাণটা অনেক।

মোস্তফা জব্বার বলেন, ‘এর কারণ হলো, আমরা জানি কেউ যখন বিজ্ঞাপন প্রচার করে, সেক্ষেত্রে তাকে ভ্যাট দিতে হয়। কিন্তু এই প্ল্যাটফর্মের কোনোটাই ভ্যাট দেয় না, কেউ নিবন্ধিত হয় না।’

‘আমাদের জন্য যন্ত্রণার বিষয় যেটি তা হলো- আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি আমাদের যে ক্ষতিগুলো হয় সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই বিষয়ে রিপোর্ট করতে পারি, কিন্তু সেই রিপোর্ট অনুসারে তাদের রেসপন্স অত্যন্ত ন্যূনতম। আমরা যদি ১০০টা রিপোর্ট করি তবে হয়তো চারটা বা পাঁচটার দিকে তারা নজর দেয়।’

ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রতি মুহূর্তে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত তাদেরকে (ফেসবুক কর্তৃপক্ষ) দিচ্ছে। আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ, আমাদের রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা, আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে- আমরা শুধু কেবল রিপোর্ট করছি। যেভাবে তাদের রেসপন্স করার কথা সেভাবে তারা করে না।’

তিনি বলেন, ‘ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠান বরাবরই আমাদেরকে তাদের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডের অজুহাত দিয়ে বসে থাকে। ২০১৮ সাল থেকে আমি বহুবার তাদের সঙ্গে মিটিং করেছি। দেশের ভেতরে করেছি দেশের বাইরে করেছি। আমি যতটুকু জানি তারা বাংলাদেশের জন্য একজন রিপ্রেজেন্টেটিভ নিয়োগ দিয়েছেন, যিনি দিল্লিতে থাকেন।’

‘তাদের ব্যবসা করতে হলে কর দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, আমাদের দেশের আইন, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা- সবকিছুতে যদি সম্মান না দেয় তাহলে কোনোভাবে আমাদের পক্ষে আসলে এদেরকে মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে যাবে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘এই বিষয় নিয়ে আমি ইতোমধ্যে আমাদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।’

সুইডেন এবং এই ধরনের দেশগুলো শুধু সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য আইন করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় এই বিষয়টি আমাদের আইনের মাধ্যমেও অ্যাড্রেস করতে হবে। আইনে কোথাও যদি আমাদের দুর্বলতা থাকে, সোশ্যাল মিডিয়ার আইনের মাধ্যমে আমরা সেটা দূর করতে পারব।’

মোস্তফা জব্বার বলেন, ‘আমাদের দেশের আইন মেনে তাদের (ফেসবুক, ইউটিউবসহ ওটিটি প্ল্যাটফর্ম) পরিচালিত হতে হবে। যেখানে যেভাবে ট্যাক্স দিতে হয় সেগুলো তাদেরকে দিতে হবে। পাশাপাশি আমাদের জনগণের যে মূল্যবোধ সেই মূল্যবোধের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা জানাতে হবে।’

Share