সরকার পতনই বিএনপির একমাত্র চাওয়া বলে মন্তব্য করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এ ফ্যাসিবাদী-নির্যাতনকারী সরকারের দমনপীড়নের বিরুদ্ধে আমরা এক যুগের বেশি সময় ধরে লড়াই-সংগ্রাম করছি। লক্ষ্য একটাই-এ ফ্যাসিস্টদের হাত থেকে মুক্তি চাই। তিনি বলেন, নেতাকর্মীদের আÍত্যাগ কখনো বৃথা যাবে না।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে লক্ষ্মীপুর থেকে আসা আহত নেতাকর্মীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে স্কাইপে বক্তব্য দেন তারেক রহমান। দলের পক্ষ থেকে সজীবের পরিবার ও আহতদের আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়।
১৮ জুলাই কেন্দ্র ঘোষিত পদযাত্রা কর্মসূচিতে লক্ষ্মীপুরে সংঘর্ষে নিহত কৃষক দল নেতা সজীব হোসেনের পরিবার এবং পুলিশের গুলিতে দৃষ্টিশক্তি হারানো দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপি।
মতবিনিময় সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ইতোমধ্যে অনেকে প্রাণ দিয়েছেন। সাধারণ মানুষ প্রাণ দিয়েছেন, অনেক মানুষ গুম হয়ে গেছেন। শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ সরাসরি গুলি করে সজীব হোসেনকে হত্যা করেছে। অনেকে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। এখন একটাই পথ বা রাস্তা তা হলো- এ সরকারকে সরাতে হবে। এদের পতন ঘটাতে হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে এ দেশ নিরাপদ নয়। কেউই নিরাপদ নয়। আমাদের অধিকার ও অস্তিত্ব ফিরে পেতে এ সরকারকে সরাতে হবে। এই যে শিশু (সামনের সারিতে বসা সজীব হোসেনের সন্তানের দিকে তাকিয়ে) এখানে দাঁড়িয়ে আছে, সে তার বাবাকে হারিয়েছে। যারা মারা গেছেন তাদের পরিবার বোঝে কী যন্ত্রণা। এ কষ্ট, এ ত্যাগ কখনো বৃথা যাবে না। তিনি বলেন, এ আন্দোলনে দেশের মানুষ আমাদের সঙ্গে আছে। রাস্তায় নেমে মানুষ সরকারকে সরানোর জন্য সংগ্রাম শুরু করেছে। আমরা বিশ্বাস করি-সরকারকে এ দেশের মানুষ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরাবে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব শাহাবুদ্দিন সাবুর সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুঁইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবে রহমান শামীম, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, পুলিশের গুলিতে দৃষ্টিশক্তি হারানো যুবদল কর্মী মোস্তফা কামাল, শ্রমিক দলের ইকবাল হোসেন, কৃষক দলের বোরহান উদ্দিন, নিহত সজীবের বাবা আবু তাহের প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিহউল্লাহ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশীদ, সাবেক এমপি এবিএম আশরাফ উদ্দিন, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, লক্ষ্মীপুরের অ্যাডভোকেট হাসিবুর রহমান ও বিএলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম উপস্থিত ছিলেন।
লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপি নেতারা জানান, পথযাত্রায় আওয়ামী লীগের হামলায় কৃষক দলের সজীব নিহত হন এবং পুলিশের গুলিতে বহু নেতাকর্মী আহত হয়। এর মধ্যে ছয়জন দৃষ্টিশক্তি হারায়।
দৃষ্টিশক্তি হারানো যুবদলের কর্মী মোস্তফা কামাল বলেন, আওয়ামী লীগের লোকজন হেলমেট পরে গুলি করে। আগে শুনতাম পুলিশ পায়ে গুলি করে। এখন দেখি চোখে-মুখে-বুকে গুলি করে।
দৃষ্টিশক্তি হারানো লক্ষ্মীপুর কৃষক দলের নেতা বোরহানউদ্দিন বলেন, পুলিশের সঙ্গে কিছু লোক ছিল তারাও গুলি করে। শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করছিলাম। আমার অপরাধ কী ছিল? সজীব হোসেনের বাবা আবু তাহের বলেন, ছেলে মিটিংয়ে গেল আর ফিরে এলো না। আমাকে আব্বা বলার মতো কেউ থাকল না। এ দলের জন্য ছেলে মারা গেছে, এ দলই ছেলে হত্যার বিচার করবে।
মতবিনিময় সভার পর সাবেক যুবদল নেতাদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে তারেক রহমান অংশ নিয়ে তাদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। য্বুদলের প্রতিষ্ঠাকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনিরের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন যুবদলের সাবেক সভাপতি মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বরকতউল্লাহ বুলু, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ। সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খানও বক্তব্য দেন।
টাইমস ডেস্ক/ ১০ আগস্ট ২০২৩