‘সরকার চোরাবালির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে’

সরকারের ২ বছর: বিএনপি’র মূল্যায়ন

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার চোরাবালির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। এ সরকার রাবার স্ট্যাম্প সরকার। শুধু উন্নয়ন দিয়ে গণতন্ত্র রক্ষা হয় না। উন্নয়ন হতে হবে গণতন্ত্রের ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে। এর বাইরে মানুষ কখনোই আশা করে না। তাই অবিলম্বে সকল দলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে হবে।

বর্তমান সরকারের দুই বছর পূর্তিতে সোমবার বিএনপি নেতাদের মূল্যায়ন জানতে চাইলে এমন মন্তব্য উঠে আসে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বর্তমান যে সংসদ গঠন করা হয়েছে বাংলাদেশের মানুষ তা ভালো চোখে দেখতে পারে না। কারণ বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। এ দেশের উত্থান হয়েছে একটি মু্ক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। আর মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা হচ্ছে গণতন্ত্র। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রহসনমূলক, এখানে কোনো জনসম্পৃক্ততা নেই। ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে দাঁড়িয়ে সংসদ, এ সংসদকে কেন্দ্র করে সরকারের সবই চোরাবালির উপরে দাঁড়ানো।’

‘এ সংসদকে ভালোভাবে দেখার কোনো উপায় নেই, ভালো কথা বলার উপায় নেই। সুখকর কোনো ঘটনা ঘটেনি বিশ্বপরিমণ্ডলও ঠিক এই ভাবে চিন্তা করে’, বলেন সাবেক এই সেনাপ্রধান।

তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারেনি। গণতন্ত্রের নামে প্রতারণা করেছে। গণতন্ত্রের নামে মিথ্যা সংসদের উপর দিয়ে রাষ্ট্র চলছে। তারা সুশাসন দিতে পারেনি। আইনশৃঙ্খলার উন্নতি করতে পারেনি। গণনিরাপত্তা, গুম, খুন, বিদেশি হত্যা, শিয়া, সুন্নি হত্যা, জঙ্গির উত্থান-এসব ইস্যুতে এ সরকার চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।’

‘সরকারের সফলতা বলতে কি কিছুই নেই’ -এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, তারা যুদ্ধাপরাধের বিচার করেছে এটা সফলতা, উন্নয়ন হচ্ছে এটাও সার্থকতা। এ সফলতা-ব্যর্থতা দিয়ে গণতন্ত্রের সঙ্গে তুলনা হয় না। উন্নয়ন হবে গণতন্ত্রের ভিত্তির ওপর, এর বাইরে মানুষ কখনোই আশা করে না। উন্নয়ন দিয়ে গণতন্ত্র রক্ষা হয় না।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমদ আজম খান বলেন, ‘দেশের মানুষের দুর্ভাগ্য অনির্বাচিত একটি সরকার দুই বছর পার করল। এটা রাজনীতি ও গণতন্ত্রের জন্য দুর্ভাগ্য। মানুষের জন্য বঞ্চনা। ২০ কোটি মানুষ নিজ দেশে থেকেও পরবাসী। কারণ, তারা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি।’

তিনি বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন ছাড়া মানুষের অধিকার রক্ষা হয় না। যে সময় মধ্যে পদ্মা সেতু হচ্ছে, এর মধ্যে আরও দু’টি সেতু হতে পারত। এ ছাড়া যেভাবে পদ্মা সেতুর ব্যয় বৃদ্ধি করা হচ্ছে এটাকে উন্নয়ন বলে না। যেকোনো সরকার ক্ষমতায় থাকলে কিছু না কিছু উন্নয়ন হয়। তাই আমি বলব- এ সরকার রাবার স্ট্যাম্প, সংসদ সদস্যরাও রাবার স্ট্যাম্প। এখানে উল্লাস করার কিছু নেই। এটা জাতির দুর্ভাগ্য।’

সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও বিএনপির প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, ‘সাংবিধানিক নিয়ম রক্ষার নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা আশা করেছিলাম, সবকিছুর অবসান ঘটিয়ে দুই বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে আরেকটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সরকার করবে। আন্দোলনের বিরতির পরও আলোচনার দ্বার খোলেনি সরকার। তারা বলেছিল- নিয়ম রক্ষার নির্বাচন সেখানে দুই বছরেও নিয়ম রক্ষা করতে পারেনি।’

তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু উন্নয়নের কথা তারা বলতে পারে যেহেতু তারা ক্ষমতায়। আমি মনে করি, এই সরকারের সফলতার চেয়ে ব্যর্থতাই বেশি। কারণ, দেশে গণতন্ত্র নেই। ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনে ১৫৪ জন এমপি হয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই সংসদ অবৈধ অকার্যকর আগেই বলে দিয়েছি। ১৯৯৬ সালে আমরাও নিয়ম রক্ষার নির্বাচন করেছিলাম। পরে আরেকটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছি। কিন্ত এবার তারা সেটা করতে পারেনি। এটা মানুষ কখনো মেনে নেবে না। কারণ তার ভোট দিতে পারেনি। তাই অবিলম্বে সকল দলের অংশগ্রহণের একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।’

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে আওয়ামী লীগ। ১২ জানুয়ারি সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট। ওই নির্বাচন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট বয়কট করে।

নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০৪:৩৫ পিএম, ১২ জানুয়ারি ২০১৬, মঙ্গলবার

এমআরআর  

Share