জাতীয়

‘উন্নয়নের জন্যে সরকারের ধারাবাহিকতা অত্যন্ত জরুরি’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল দীর্ঘ ৯ বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে আমরা ব্যাপক উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করেছি। উন্নয়নের জন্য সরকারের ধারাবাহিকতা অত্যন্ত জরুরি।

বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) রাজধানীর মিরপুরে বস্তিবাসীদের জন্য প্রথমবারের মতো ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে তিনি একথা বলেন।

এখানে আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। একই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী রাজধানীর ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরে পরিত্যক্ত বাড়িগুলোতে প্রথমবারের মতো আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে কেউ আবাসনহীন থাকবে না। আমাদের নীতি অত্যন্ত স্পষ্ট যে, কোন ব্যক্তি বাংলাদেশে গৃহহীন থাকবে না।

তিনি বলেন, সরকার কঠোরভাবে জঙ্গিবাদী ও সন্ত্রাসীদের দমন করেছে। আমরা জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তা চাই এবং ২০১৪ সালে সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ায় উন্নয়নের জন্য আমরা যথেষ্ট সময় পেয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে শুরু করা সকল উন্নয়ন কাজ বিএনপি-জামায়াত সরকার বন্ধ করে দেয়। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতায় এসে একটি কাজও এগিয়ে নেয়নি, তারা লুণ্ঠনের মাধ্যমে সবকিছু ধ্বংস করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালে সকল বাধা অতিক্রম করে জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ায় দেশের উন্নয়ন জোরদার হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। আমরা বাংলাদেশকে আরো এগিয়ে নিতে চাই এবং বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। তিনি গত নির্বাচনে তাঁর দলকে সমর্থন দেয়ায় দেশের সকল মানুষকে ধন্যবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার বস্তিবাসীসহ দরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা চাই না দেশে কোন বস্তি থাকুক। কোন দেশের জন্য এটি অহংকারের বিষয় নয়।

তিনি বলেন, বস্তিবাসীরাও মানুষ। তাদেরও সমাজে মর্যাদার সাথে বসবাস করার অধিকার রয়েছে। তাদের এই অধিকার রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।

শেখ হাসিনা বলেন, বস্তিবাসীরা বস্তিতে অমানবিক জীবন যাপন করে। তাদেরকে ঘর ভাড়ায় অনেক টাকা ব্যয় করতে হয়। অথচ বস্তিতে তাদের জন্য কোন সুযোগ-সুবিধা নেই। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, তাদের দুর্ভোগ লাঘব করা।

তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিন্নমূল মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। আমরা যদি সমাজের ছিন্নমূল মানুষের জন্য কিছু করতে পারি, তাহলে আমাদের জীবন সাথর্ক হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার সারাদেশে বস্তিবাসীদের জন্য ভাড়া ভিত্তিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করছে। ভাড়ার টাকায় তারা এ সকল ফ্ল্যাটে সুন্দরভাবে বসবাস করতে পারবে।

তিনি বলেন, ‘এখন আর গ্রামাঞ্চলে কুঁড়েঘর দেখা যায় না। বরং কুঁড়েঘরের জায়গায় এখন টিনের ঘর তৈরি হচ্ছে। আমাদের এটা করার সামর্থ্য হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত ১৯৯৬-২০০১ সালে তাঁর সরকারের শাসনামলে আশ্রায়ণ প্রকল্প এবং গৃহহীন ও বস্তিবাসীদের জন্য ‘ঘরে ফেরা’ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা নগরীর ভাষাণটেক এলাকায় নিন্মআয়ের মানুষের জন্য ১৬ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করেছিলাম।’

রাজধানীর জলাবদ্ধতার সমস্যা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, অপরিকল্পিতভাবে পুকুর, খাল, নালা ও অন্যান্য জলাশয় ভরাট করার ফলে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ‘পরিবেশ সুরক্ষাসহ জলাবদ্ধতা দূরীকরণে সর্বত্রই পানিপ্রবাহ ঠিক রাখতে হবে।

শেখ হাসিনা জনগণকে যথাযথভাবে ফ্ল্যাট ব্যবহার ও সংরক্ষণের আহ্বান জানান এবং ভবিষ্যতে যাতে হয়রানির শিকার না হতে হয় সেজন্য ফ্ল্যাট গ্রহীতাদের পরিচয়পত্র তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।

রাজধানীতে সবার জন্য পরিকল্পিত বাসস্থান নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে সরকার মিরপুর ১১ তে বস্তিবাসীদের জন্য ১০ হাজার ফ্ল্যাট এবং ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাধারণ মানুষের জন্য ২০২টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করছে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগের অংশ হিসেবে এবং জাতীয় আবাসন নীতিমাল-২০১৬ এর আলোকে বস্তিবাসীদের জন্য জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে রাজধানীর মিরপুর-১১ নং সেকশনে ১০ একর জমির ওপর ১০ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণ করবে।

প্রকল্পের প্রথম ধাপে দুই একর জমির ওপর ১৪ তলা বিশিষ্ট পাঁচটি ভবনে ৫৩৩ টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে এবং দ্বিতীয় ধাপে বাকি আট একর জমিতে আটটি ১৪ তলা বিশিষ্ট ভবনে ৯ হাজার ৪শ ৬৭ টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। প্রথম ধাপে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ শ’ ১১ কোটি টাকা।

এদিকে জাতীয় গৃহায়ন কতৃপক্ষ রাজধানীর ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুর এলাকায় ২ দশমিক শূন্য ৭ একর জমির ওপর ৩ শ ৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৫৩ টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করবে।

এর মধ্যে ২ শ ২টি ফ্ল্যাট সরকারী চাকরিজীবী ও সাধারণ মানুষের মাঝে বিক্রি করা হবে এবং অবশিষ্ট ৫১ টি ফ্ল্যাট গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কাছে থাকবে।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। অনুষ্ঠানে পাওয়ারপয়েন্ট উপস্থাপনার মাধ্যমে গৃহায়ন সচিব শহীদুল্লা খন্দকার প্রকল্পের একটি সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন।

এসময় অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন- প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)-র প্রধান সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব সুরাইয়া বেগম এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।-বাসস

নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ ৮ : ৩০ পিএম, ২৬ অক্টোবর, ২০১৭ বৃহস্পতিবার
এইউ

Share