রাজনীতি

সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট আজ

একাধারে দশ বার বাজেট দিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে যাচ্ছেন। আজ ৭ জুন দুপুর সাড়ে ১২টায় জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট পেশ করতে যাচ্ছেন তিনি। এটি বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট এবং ব্যক্তিগতভাবে অর্থমন্ত্রীর বারোতম বাজেট। প্রতি অর্থবছরের বাজেটকে অর্থমন্ত্রী একটি শিরোনামে ভূষিত করে থাকেন। এবারের বাজেটের শিরোনাম হবে ‘সমৃদ্ধ আগামী:অগ্রযাত্রার বাংলাদেশ’।

চার লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকার বাজেট: অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০০৯-১০ অর্থবছরে ১ লাখ ১৩ হাজার ৮১৫ কোটি টাকার বাজেট দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তা দাঁড়ায় ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকায়। আর আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছর এর আকার দাঁড়াচ্ছে চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকায়। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসলে অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি ২০০৯-২০১০ অর্থবছর থেকে চলতি ২০১৭-২০১৮ অর্থবছর পর্যন্ত টানা নয়টি বাজেট পেশ করেন। আজ ২০১৮-১৯ অর্থবছরের এবং দেশের ৪৭তম বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করবেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। এর আগে তিনি ১৯৮২-৮৩ ও ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেছিলেন।

প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৭ দশমিক ৮ শতাংশ: চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নামানোর ঘোষণা থাকছে বাজেটে। বাজেটে নতুন করে কোনো কর আরোপ হবে না, এমন সুখবর ইতোমধ্যে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। সেইসাথে তরুণ করদাতাদের উপর বড় প্রত্যাশাও করেছেন তিনি। নতুন বাজেটে বেসরকারি খাতে পেনশন ব্যবস্থা চালু নিয়ে একটি রূপরেখা থাকবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। সেইসাথে সামাজিক নিরাপত্তা বলয় বৃদ্ধিসহ রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দ থাকছে বাজেটে। সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতা বাড়িয়ে অধিকসংখ্যক দরিদ্র মানুষের কাছে এর সুফল পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা থাকছে। ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করে এবার কর্পোরেট কর হার কিছুটা কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

বড় অঙ্কের বাজেট ঘাটতি:প্রত্যক্ষভাবে নতুন করারোপ না করে ব্যয়ের বাড়তি চাহিদা মেটাতে অর্থমন্ত্রীকে বড় অঙ্কের ঘাটতি রেখে বাজেট প্রণয়ন করতে হচ্ছে। নতুন অর্থবছরে সামগ্রিক বাজেট ঘাটতি রাখা হচ্ছে এক লাখ ১৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। বাজেটে চার হাজার ৫১ কোটি টাকা বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার আশা থাকছে। ওই অনুদান পাওয়া গেলে ঘাটতি দাঁড়াবে এক লাখ ২১ হাজার ২৪২ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৪ দশমিক ৭ শতাংশ।

তিন লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের পরিকল্পনা:ব্যয়ের চাহিদা মেটাতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট তিন লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের পরিকল্পনা থাকছে। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রিত কর থেকে দুই লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা, এনবিআর-বহির্ভূত করব্যবস্থা থেকে ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা এবং কর ছাড়া প্রাপ্তি যেমন টোল, বিভিন্ন সরকারি ফিসহ অন্যান্য উত্স থেকে আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩৩ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা।

রাজস্ব আদায় বাড়াতে চলতি অর্থবছর থেকে সর্বজনীন ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায়ের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। পরে ব্যবসায়ীদের বিরেধিতায় সরকার পিছু হটে। প্রধানমন্ত্রী ওই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন দুই বছর পিছিয়ে দেন। সে হিসাবে ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন চালু হবে। অবশ্য এবছরই ভ্যাটের হারে পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। ভ্যাটের স্তর ৯টি থেকে পাঁচটিতে নামিয়ে আনা হচ্ছে বাজেট প্রস্তাবে।

নির্বাচনের আগে বড় উন্নয়ন প্রকল্প দৃশ্যমান করতে এবারের বাজেটে জোর প্রচেষ্টা থাকবে। এজন্য পদ্মাসেতু, মেট্রোরেলসহ ১০ মেগা প্রকল্পেই বরাদ্দ থাকছে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। গত ১০ মে সরকারের অনুমোদন পাওয়া ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) খাত ভিত্তিক সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পরিবহন খাতে। অবশ্য বরাদ্দে শীর্ষে রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবারের ন্যায় এবারও ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে বাজেট উপস্থাপন করা হবে। বাজেট ওয়েবসাইটে প্রকাশসহ জাতীয় সংসদ হতে সরবরাহ করা হবে। একই সঙ্গে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ প্রণীত ব্যাংক বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যাবলী জাতীয় সংসদে পেশ করা হবে।
ইত্তেফাক

Share