জাতীয়

সরকারি চিনি বিক্রি এখনো শেষ হয়নি

আমদানিতে কর আরোপ করে কেজিতে প্রায় ২০ টাকা দাম বাড়ানোর পরও সরকারি চিনি বিক্রি শেষ করা যায়নি। রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলোর কাছে এখনো ১ লাখ ৬ হাজার টন চিনি রয়ে গেছে। গত ১০ মাসে তারা মূলত তাদের মজুতের অর্ধেক চিনি বিক্রি করতে পেরেছে।

অবশ্য চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) চেয়ারম্যান এ কে এম দেলোয়ার হোসেন দাবি করেছেন, তিনি পুরোনো চিনি বিক্রি করে ফেলেছেন। এখন যেসব চিনি আছে, তা পবিত্র রমজান মাসে বাজার সামাল দেওয়ার জন্য রেখে দেওয়া হয়েছে।
সরকারি হিসাবে, দেশে বছরে প্রায় ১৪ লাখ টন চিনির প্রয়োজন হয়। এর সামান্য পরিমাণ দেশে উৎপাদিত হয়। বাকিটা আমদানি করে বেসরকারি খাত। আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম কমে যাওয়ায় গত বছর দেশের বাজারেও ব্যাপক দরপতন ঘটে। এতে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলো বিরাট লোকসানের মুখে পড়ে। তাদের লোকসান ঠেকাতে চিনি আমদানির ওপর কর আরোপ করে সরকার।
চলতি অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনায় অপরিশোধিত চিনির ওপর প্রতি টনে ২ হাজার টাকা ও পরিশোধিত চিনির ওপর সাড়ে ৪ হাজার টাকা শুল্ক আরোপ করা হয়, যা আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। অবশ্য বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে চিনির ওপর শুল্ক আরোপের বিষয়টি নজরে আনলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এনবিআরের চেয়ারম্যানকে ওই শুল্ক তুলে নিতে বলেন।
অবশ্য আগস্ট মাসেই চিনি আমদানির শুল্কায়ন মূল্য (ট্যারিফ ভ্যালু) টনপ্রতি ৩২০ ডলার নির্ধারণ করে তার ওপর ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করে এনবিআর। গত ডিসেম্বরে ট্যারিফ ভ্যালু বাড়িয়ে ৩৫০ ডলার করা হয়। এতে ঢাকার বাজারে চিনির দাম কেজিতে ৩৫ টাকা থেকে বেড়ে এখন ৫৫ টাকায় উঠেছে।
বিএসএফআইসির তথ্যানুযায়ী, ২০১৫ সালের ১ জুলাই রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলোতে চিনির মজুত ছিল ১ লাখ ৪৯ হাজার টন। চলতি বছর ৫৮ হাজার টন উৎপাদিত হওয়ার পর বিক্রয়যোগ্য মজুত দাঁড়ায় ২ লাখ ৭ হাজার টনে। সর্বশেষ গত ৫ মের হিসাবে মজুত ছিল ১ লাখ ৬ হাজার টন চিনি।
রাষ্ট্রায়ত্ত ১৫টি চিনিকলের উৎপাদনক্ষমতা ২ লাখ ১০ হাজার টন। অবশ্য তারা উৎপাদনক্ষমতার অনেক কম পরিমাণ চিনি উৎপাদন করতে পারে। বিএসএফআইসি জানিয়েছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলোতে প্রায় ৭৭ হাজার টন চিনি উৎপাদিত হয়েছিল। চলতি বছর তা কমে ৫৮ হাজার টনে দাঁড়িয়েছে। এসব মিলে প্রতি কেজি চিনির উৎপাদন খরচ ৭৫ টাকার ওপরে। বেসরকারি খাতের চিনি পরিশোধনকারীদের উৎপাদনক্ষমতা ৩০ লাখ টনের বেশি।
বিএসএফআইসির চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন জানান, তাঁরা এখন প্রতি কেজি চিনি পরিবেশক পর্যায়ে ৪৮ টাকা দরে বিক্রি করছেন। আর মোড়কজাত চিনি বিক্রি করছেন ৫০ টাকা দরে। খুচরা পর্যায়ে মোড়কজাত চিনি বিক্রি করা হচ্ছে ৫৫ টাকা কেজি দরে। কর বাড়ানোর পর তাঁরা চিনির দাম কেজিপ্রতি ১১ টাকা বাড়াতে পেরেছেন।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গত রোববার প্রতি কেজি খোলা চিনি ৫৪ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। ছোট বাজার ও মুদি দোকানে চিনি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা কেজি দরে।
দেলোয়ার হোসেন কর বাড়ানোর বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, ‘একটি পরিবারে মাসে দু-তিন কেজির বেশি চিনির প্রয়োজন হয় না। দাম কমে যাওয়ায় মূলত খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকারীরা বেশি লাভ করছিল। চিনির দাম কমার পর মিষ্টির দাম কিন্তু কমেনি।’
দাম বাড়ায় চিনি শিল্প করপোরেশন ১২১ কোটি টাকা লোকসান কমাতে পেরেছে দাবি করে তিনি বলেন, কর বাড়িয়ে সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করেছে।
বেসরকারি খাতে মজুত: সম্প্রতি বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের তৈরি করা এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ বেসরকারি খাতের পাঁচটি কোম্পানির কাছে প্রায় ৬ লাখ টন চিনি মজুত ছিল। এ ছাড়া দেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ছিল আরও ৩ লাখ ৩৭ হাজার টন চিনি।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে বাড়তি দামের চিনি এখনো দেশে আসেনি। তাই আসছে পবিত্র রমজান মাসে যাতে দাম না বাড়ে, সে জন্য বাজার নজরদারিতে রাখতে হবে। (প্রথম আলো)

: আপডেট ২:২৪ পিএম, ০৯ মে ২০১৬, সোমবার
ডিএইচ

Share