সরকারি চাকরিতে প্রবেশ ও অবসরের বয়সসীমা বাড়ছে। প্রবেশের বয়সসীমা ৩৩ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের যৌক্তিক বয়সসীমা নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটি প্রধান উপদেষ্টার কাছে বয়সসীমা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। আগামী সোমবার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।
জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান বুধবার নিজ দপ্তরে বলেন, সরকারি চাকরিতে বয়স বাড়ছে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সচিব আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত কমিটি ইতোমধ্যে বয়স বাড়ানোর বিষয়ে সুপারিশসহ প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে জমা দিয়েছেন।
বয়স কত বাড়ছে? এমন প্রশ্নে এই সিনিয়র সচিব বলেন, কমিটির তরফ থেকে আমরা যা প্রস্তাব পেয়েছি তাই প্রধান উপদেষ্টার কাছে উপস্থাপন করেছি। তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন তাই চূড়ান্ত হবে। আগাম কিছু বলা যাবে না। তবে তিনি নিশ্চিত করেন যে সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা বাড়ছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৩ বছর করা হতে পারে। পক্ষান্তরে অবসরের বয়সসীমা হতে পারে ৬৩ বছর।
তারা আরও জানান, বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর। মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরের বয়সসীমা ৬০ বছর নির্ধারণ করা আছে। আবার সাধারণ প্রার্থী অর্থাৎ অমুক্তিযোদ্ধা প্রার্থীদের চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর এবং অবসরের বয়সসীমা ৫৯ বছর।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা প্রার্থীরা ৩২ বছরের সুবিধা ভোগ করছে। তাদের সঙ্গে এক বছর বাড়িয়ে অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ প্রার্থীদের জন্য চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা সমান করে ৩৩ বছর নির্ধারণ করা হচ্ছে।
একই সঙ্গে চাকরি থেকে অবসরের বয়সসীমা ৬৩ বছর করা হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধা কোটার চাকরিজীবীরা অবসরে যাচ্ছেন ৬০ বছর বয়সে। তারা এক বছরের পোস্ট রিটায়ারমেন্ট লিভ (পিআরএল) ভোগ করেন। অর্থাৎ তারা ৬১ বছর চাকরির সুবিধা ভোগ করছেন। অর্থাৎ পিআরএলের সময়টা ছুটি না দিয়ে চাকরিতে অন্তর্ভুক্তি করলে চাকরি এক বছর এমনিতেই বেড়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধা কর্মচারীদের অবসরের বয়সসীমা ভিত্তি ধরে দুই বছর বাড়িয়ে সরকারি চাকরি থেকে অবসরের বয়সসীমা মুক্তিযোদ্ধা ও অমুক্তিযোদ্ধা নির্বিশেষে সবার জন্য ৬৩ বছর নির্ধারণ করা হচ্ছে। ইতোপূর্বে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত সরকারি চাকরি থেকে অবসরের বয়সসীমা ৬২ করার জন্য তৎকালীন জনপ্রশাসন মন্ত্রীকে আধা-সরকারিপত্র (ডিও) দিয়েছিলেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর নির্ধারণের দাবিতে দীর্ঘ প্রায় এক যুগ ধরে আন্দোলন করছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। সর্বশেষ গত ২৯ সেপ্টেম্বর চাকরিপ্রত্যাশীরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। একপর্যায়ে চাকরিপ্রত্যাশীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। চাকরিপ্রত্যাশীরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করা ছাড়া স্থান ত্যাগ করবেন না বলে জানিয়ে দেন। শেষপর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। ওই বৈঠক থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে যৌক্তিক বয়সসীমা নির্ধারণে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হচ্ছে। ওই দিন বিকাল ৪টায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব গণমাধ্যমকে জানান, সাবেক তত্ত্ববধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সচিব আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীকে আহবায়ক করে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের যৌক্তিক বয়সসীমা নির্ধারণে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। পরবর্তীতে কমিটতে আরও তিনজন সদস্য বাড়িয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়।
অপরদিকে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের এবং অবসরের বয়সসীমা যথাক্রম ৩৫ ও ৬৫ বছর নির্ধারণের দাবি জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে আবেদন করে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিসট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএএসএ)। সংগঠনটির আবেদনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জনপ্রশাসন সচিবকে অনুরোধ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। সরকারি চাকরিতে প্রবেশ ও অবসরের বয়সসীমা বাড়ানোর আবেদন করেছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব অ্যাডমিনিসট্রেটিভ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (বিআইএএম)। এছাড়া ক্যাডার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও সরকারি চাকরিতে প্রবশে ও অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। (যুগান্তর)