রাজনীতি

‘সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামবে বিএনপি’

চাঁদপুর টাইমস ডেস্ক:

দলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষ করে আগমী জানুয়ারি থেকে আবার সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। এমনটাই জানালেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম। সেই আন্দোলনে জনগণ তাদের সঙ্গে থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গণমাধ্যমে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন বিএনপির এই শীর্ষ নেতা।

হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘দল গোছানোর পর ইনশাআল্লাহ আগামী বছরের প্রথম থেকে অর্থাৎ জানুয়ারি মাস থেকে বিএনপি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে যাবে। এ আন্দোলন হবে ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার আন্দোলন এবং তার মধ্যদিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। আশা করি এই সংগ্রামে দেশবাসী ২০ দলের সাথে থাকবে এবং বাংলাদেশে আবার গণতন্ত্রের ঐতিহ্য ফিরে আসবে।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি এই মুহূর্তে ঘর গোছানোতে ব্যস্ত। ছাত্রদল, যুবদল, মূলদল ইত্যাদি ক্ষেত্রে আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া পরিবর্তন আনবেন বলে আমরা আশা করি। সেই সঙ্গে জনগণের মধ্যে শেকড় আছে এ ধরনের ব্যক্তিদের নিয়ে দল গোছাবেন এটাই আমাদের আশা।’

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে রাজনীতিবীদদের জন্য বড়ই দুঃসময়। দেশে গণতন্ত্র নেই, আইনের শাসন নেই, বিনাভোটের একটি সরকার জগদ্দল পাথরের মতো জনগণের বুকের ওপর চেপে বসে আছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি হয়েছে। মাতৃগর্ভের শিশুও সন্ত্রাসীদের গুলির হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। ব্যাংকগুলোতে অবাধে লুটপাট চলছে সরকারি পৃষ্ঠপোশকতায়। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিরা এই সমস্ত ব্যাংক লুটেরাদেরকে প্রটেকশন দিয়ে যাচ্ছে। দেশের অর্থমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করছেন যে, এরা এতো বড় মাপের এতো প্রভাবশালী যে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা তার নেই।’

তিনি বলেন, ‘পুলিশ বাহিনী বলছে- এই সরকারকে তারাই ক্ষমতায় রেখেছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ আজকে একটি পুলিশ স্টেটে পরিণত হয়েছে।’

আক্ষেপ করে হাফিজ আহমদ বলেন, ‘বাংলাদেশে সবচেয়ে ভয়াবহ ভোট ডাকাতি অনুষ্ঠিত হয়েছে বিগত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। রাজধানী শহরে এ ধরনের ভোট ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে। দেশের মানুষ চুপচাপ। তাদের কোনো মাথা ব্যাথা নেই। এটিই রাজনীতির জন্যে একটি অশনি সংকেত। কোথায় গেলো সেই একাত্তরের ছাত্র সমাজ? কোথায় গেলো দেশের বুদ্ধিজীবীরা? রাজপথের নামার জন্য কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। সবাই ব্যক্তিগত হিসেব-নিকেশ নিয়েই ব্যস্ত। সুতরাং একটি দেশের জন্য বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দেশ, যারা যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছে তার জন্য খুবই ভয়ঙ্কর। একাত্তরে যাদের বীরত্ব গৌরব গাঁথা বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছিল সেই ধরনের একটি দেশে রাজনীতিবীদরা জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছে, বাকস্বাধীনতা হরণ করেছে। এমনই এক দুঃসহ পরিবেশে আমরা বসবাস করছি।’

হাফিজ বলেন, ‘তবে কি এমনভাবেই চলবে বাংলাদেশ? নিশ্চয়ই না। জনগণকে অপেক্ষা করতে হবে। যেখানে পরিশালিত রাজনৈতিক কর্মীরা দেশের দায়িত্ব নেবে, যেখানে জনগণের ইচ্ছা আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে পারবে। এমন রাজনৈতিক দলের নেতারাই রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারে, যারা দেশে সুশাসন আনবে, যারা হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে পারবে, গডফাদারের রাজনীতি বন্ধ করতে পারবে।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বর্তমান যে অবস্থা চলছে এতে করে এ ধরনের পুলিশী শাসন থেকে মুক্ত হওয়া অত্যন্ত কঠিন। রাজপথে নামলেই গুলি করে। দেশে গণতন্ত্রের ‘গ’ বলতেও কোনো কিছু নেই। এমনই একটি সময়ে আমরা নিজেরা যারা রাজনীতিবীদ, আমরাও চিন্তিত, কী হবে দেশের ভবিষ্যৎ? দেশে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। অন্তত যতোদিন এই সরকার আছে। তারা ইতিমধ্যে সংবিধানের যে সংশোধনী এনেছে একটি পার্লামেন্ট বজায় রেখে আবার পার্লামেন্ট নির্বাচন, পৃথিবীর কোথাও এই ধরনের নেই। বোঝাই যাচ্ছে তারা ক্ষমতা হস্তান্তর করতে রাজি নয়।’

তিনি বলেন, ‘এই সরকারকে টিকিয়ে রেখেছে মেরুদণ্ডহীন নির্বাচন কমিশন। যাদের কোনো ব্যক্তিত্ব নেই। যারা দলীয় ক্যাডারের চেয়ে বেশি ক্যাডারগিরি করে। সুতরাং এদের মাধ্যমে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা নেই। গণতন্ত্রের জন্য আগামী দিনগুলো অত্যন্ত বিপদসংকুল।’

দলের জনপ্রিয়তা নিয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপি দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। নির্বাচন দিলে অবলীলায় ২৫০ থেকে ৩০০ আসনের কাছাকাছি পৌঁছে যাবে বিএনপি।’

হাফিজ আহমদ বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের ওপর আমার আশা আছে। একাত্তরে যে লড়াকু মনোভাব তারা প্রদর্শন করেছে, যে বীর বিক্রমে তারা যুদ্ধ করেছে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। আমি আশা করি একদিন নিশ্চয়ই বাংলাদেশে গণতন্ত্রকামী মানুষ, তরুণ সমাজ রাজপথে নামবে এবং আবার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করবে। সুশাসনের দেখা আমরা তখন নিশ্চয়ই পাবো। তবে কবে পাবো বলা মুশকিল।’ (বাংলামেইল)

Share