কোনো ঘোষণা ছাড়াই নীরবে ভোক্তা পর্যায়ে সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়েছে আমদানিকারক ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এবার এক লাফে লিটারে বাড়ানো হয়েছে ৯ টাকা। এতে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা। ভোক্তা-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগাম ঘোষণা ছাড়া এভাবে কূটকৌশলে দাম বাড়ানো চরম অন্যায়। সরকারের সংশ্লিষ্টদের উচিত বিষয়টি খতিয়ে দেখা।
এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিলেন ভোজ্যতেল আমদানিকারক ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং সরকারের সংশ্লিষ্টরা। কোম্পানিগুলোর দাবি, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ছে। তাই সরকারকে অবহিত করেই দাম বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ব্যবসায়ীরা আবেদন করেছেন। কিন্তু দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি।
গতকাল রাজধানীর কাঁঠালবাগান, কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুরসহ কয়েকটি বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, রূপচাঁদা, তীর, পুষ্টি, ফ্রেশসহ প্রায় সব ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেল বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। নতুন করে বাজারে আসা পাঁচ লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৯৬৫ টাকায়। এ ছাড়া বোতলজাত প্রতি লিটার ১৯৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বোতলজাত প্রতি লিটার এতদিন ১৮৯ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। তবে এক ও দুই লিটারের নতুন দরের বোতল এখনও পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ করা হয়নি।
গতকাল মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট থেকে ফ্রেশ ব্র্যান্ডের পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনে বাসায় ফিরছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী রনি তালুকদার। কত দাম নিয়েছে জানতে চাইলে তিনি সমকালকে বলেন, বাজারে নতুন বাড়তি দরের তেল আসছে। কয়েকটি দোকান ঘুরে পরিচিত দোকানদারের কাছ থেকে আগের দরে, অর্থাৎ ৯২০ টাকায় নিয়েছেন। বোতলের গায়ে দাম লেখা ছিল ৯২২ টাকা। ওই মার্কেটে কয়েকটি দোকানে নতুন ৯৬৫ টাকা দরের তেল দেখা গেছে।
কারওয়ান বাজারের মুদি ব্যবসায়ী আব্দুর রব স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. নাঈম বলেন, এক সপ্তাহ আগে কোম্পানিগুলো জানিয়েছিল, বাজারে নতুন দরের তেল আসবে। দুই দিন ধরে তারা বাড়তি দামের তেল দিচ্ছে।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন সূত্র জানায়, গত ১০ নভেম্বর ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর জন্য চিঠি দিয়েছিল কোম্পানিগুলো, যা ২৪ নভেম্বর থেকে কার্যকর করা হবে বলে জানানো হয়। সমিতি প্রতি লিটার বোতলজাত তেলের দর ১৯৯ টাকা ও পাঁচ লিটারের বোতল ৯৮৫ টাকা নির্ধারণ করেছে। এ ছাড়া প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ১৭৯ ও পাম অয়েল ১৬৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গতকাল পর্যন্ত সরকার দাম বাড়ানোর অনুমতি দেয়নি ব্যবসায়ীদের। যদিও কোম্পানিগুলোর যুক্তি, অনুমতি না দিলেও আইন অনুযায়ী দাম বাড়ানো হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আদেশে যা বলা আছে
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কন্ট্রোল অব অ্যাসেনসিয়াল কমোডিটিস অ্যাক্ট-১৯৫৬ অনুসারে, ২০১১ সালে একটি আদেশ জারি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, যা অত্যাবশ্যাকীয় পণ্য বিপণন ও পরিবেশক নিয়োগ আদেশ-২০১১ হিসেবে পরিচিত। এ আদেশে বলা আছে– উৎপাদক, পরিশোধক বা আমদানিকারক অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের মূল্য যৌক্তিকভাবে হ্রাস, বৃদ্ধি বা পুনর্নির্ধারণ করতে হলে সংশ্লিষ্ট পণ্যের ব্যবসায়ী সমিতির মাধ্যমে করবেন। তবে ১৫ দিন আগে তা মনিটরিং সেল, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানাতে হবে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ আদেশ অনুসারে তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে।
তবে সরকারের অনুমতি ছাড়া এভাবে দাম বাড়িয়ে ভোক্তার কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া ‘অবশ্যই অন্যায়’ বলে মন্তব্য করেছেন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি এএইচএম সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, বিষয়টি জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর খতিয়ে দেখতে পারে। সেই সঙ্গে অনুমতি ছাড়া কেন দাম বাড়ানো হয়েছে, সে ব্যাপারে কোম্পানিগুলোকে জিজ্ঞেস করতে পারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সফিকুজ্জামান বলেন, প্রতিবছর রমজানের আগে দাম বাড়ানোর চেষ্টা থাকে ব্যবসায়ীদের। রমজানে সরবরাহে যাতে ঘাটতি না হয়, সরকারকে সেটি আমলে রাখতে হবে।
বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, সরকারকে জানিয়েই তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, দাম বাড়ানো হয়েছে কিনা, জানা নেই। তবে ব্যবসায়ীরা কয়েক দিন আগে দাম বাড়ানোর জন্য চিঠি দিয়েছেন। এখনও এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি। সরকারের অনুমতি ছাড়া দাম কীভাবে বাড়ানো হয়েছে, সেই বিষয়ে আগামীকাল (বুধবার) খোঁজ নেওয়া হবে।
গত অক্টোবরেও সরকারের অনুমতি ছাড়া ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়েছিল কোম্পানিগুলো। তখন বাণিজ্য উপদেষ্টা সাফ জানিয়ে দেন, এভাবে দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই। পরে দর বাড়ানো থেকে সরে আসেন ব্যবসায়ীরা। (সমকাল)
চাঁদপুর টাইমস ডেস্ক/
৩ ডিসেম্বর ২০২৫
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur