Home / শিল্প-সাহিত্য / সম্রাট আকবরের ফসলি সন ‘পহেলা বৈশাখ’ অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রাণশক্তি : শাহাদাত হোসেন শান্ত
সম্রাট

সম্রাট আকবরের ফসলি সন ‘পহেলা বৈশাখ’ অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রাণশক্তি : শাহাদাত হোসেন শান্ত

বাঙালি জাতির যাপিত জীবনে মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে তার নিজস্ব সংস্কৃতি। আন্দোলন-সংগ্রাম, অর্জন-অগ্রগতিসহ সমাজের সকল ক্ষেত্রে সংস্কৃতি চর্চার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। যে জাতি নিজস্ব সংস্কৃতি ধারণ ও লালন করে না, সে জাতি শেকড়হীন, অনগ্রসর। তাইতো প্রায় দু’শ বছরের শাষণ ও শোষণে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ইংরেজ সরকার ভারতবর্ষের নিজস্ব সংস্কৃতির বিকাশ ও প্রসারে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করে। ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভের পর পাকিস্তানি জান্তা সরকার অনুরূপ অভিপ্রায়ে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জাতির নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির টুঁটি চেপে ধরতে চেয়েছিল। বাঙালির গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক উৎসব পহেলা বৈশাখ। ভারতবর্ষে খাজনা আদায়ে সুষ্ঠুতা প্রণয়নের লক্ষ্যে মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা তথা ফসলি সন ১৫৫৬ সালের ১৪ এপ্রিল প্রবর্তন করেন। প্রথমে এই সনের নাম ছিল ফসলি সন, পরে ‘বঙ্গাব্দ’ বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত হয়।

বাংলা দিনপঞ্জির সঙ্গে হিজরি ও খ্রিস্টীয় সালের মৌলিক পার্থক্য হলো হিজরি সাল চাঁদের হিসাবে এবং খ্রিস্টীয় সাল ঘড়ির হিসাবে চলে। এ কারণে হিজরি সালে নতুন তারিখ শুরু হয় সন্ধ্যায় নতুন চাঁদের আগমনে। ইংরেজি দিন শুরু হয় মধ্যরাতে। আর বাংলা সনের দিন শুরু হয় ভোরে, সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে। এজন্যে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় বাঙালির পহেলা বৈশাখের উৎসব।

উৎসবের পাশাপাশি অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা; যা ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেসকো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়। এ মর্যাদা দেওয়ায় আমরা গৌরববোধ করি। মঙ্গল শোভাযাত্রা’র বর্তমানে পরিবর্তিত নাম ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা।’

পহেলা বৈশাখ কেবল একটি তারিখ মাত্র নয়, এটি বাঙালির উৎসবের দিন, শিল্প সংস্কৃতি চর্চা, বিকাশ ও উপভোগের দিন এবং বাঙালি জাতীয়তাবোধ বোধোদয়ের দিন। এই দিন উপলক্ষে সরকার বাংলাদেশের চাকরিজীবীদের জন্য ঈদ-পূজার বোনাসের মতো ‘বৈশাখী ভাতা’ চালু করেছে। এটিও বড় আনন্দের কথা। বাংলার সংস্কৃতি পহেলা বৈশাখ হচ্ছে লোকজের সঙ্গে নাগরিক জীবনের একটি সেতুবন্ধন। ব্যস্ত নগর কিংবা গ্রামীণ জীবন যেটাই বলা হোক না কেন, এই নববর্ষই বাঙালি জাতিকে একত্র করে এক এবং অভিন্ন জাতীয়তাবোধে। এর অনুষ্ঠান ও উৎসব পরিণত হয় প্রত্যেকটি বাঙালির কাছে শিকড়ের মিলনমেলায়। ধর্ম, বর্ণ সব পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে বাঙালি জাতি পহেলা বৈশাখকে সাদরে আমন্ত্রণ জানায়।

বিশ্বের সব জাতিই নিজ সংস্কৃতির অঙ্গ হিসেবে বর্ষবরণ পালন করে। অথচ এদেশের এক শ্রেণীর সংকীর্ণ মানুষ দীর্ঘদিন থেকে বাংলা বর্ষবরণ পালন ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক বলে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। যাতে বাঙালি জাতি তার নিজস্ব সংস্কৃতি এবং জাতীয়তা বোধ থেকে দূরে থাকে।
পহেলা বৈশাখ উৎসব সত্যিকার অর্থেই বাঙালি জাতীয়তা বোধ চেতনার বাঙালি নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চার উৎসবে রূপান্তরিত হোক। এই দৃঢ় বিশ্বাস আমার এবং আমাদের। সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা। শুভ নববর্ষ।

লেখক পরিচিতি:
সাবেক সভাপতি, চাঁদপুর প্রেসক্লাব।
ও আহবায়ক মাসব্যাপী বাঙালি সাংস্কৃতিক উৎসব : বৈশাখী মেলা-১৪৩১ উদ্যাপন পরিষদ।