ডেস্ক:
ভারতে স্বামীর সৎ সন্তানের সঙ্গে বিয়ে ঠেকাতে নিজের মেয়েকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্টার ইন্ডিয়ার সাবেক প্রধান নির্বাহী পিটার মুখার্জির স্ত্রীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় পুলিশ মঙ্গলবার পিটারের স্ত্রী ইন্দ্রাণী মুখার্জি ও পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সাবেক স্বামী সঞ্জীব খান্নাকে আটক করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে ইন্দ্রাণী মেয়েকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন বলে বুধবার জানিয়েছে পুলিশ।
ভারতীয় বার্তা সংস্থাগুলি বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, পিটার ইন্দ্রাণীর তৃতীয় স্বামী। তার আগে তিনি সঞ্জীব খান্নার স্ত্রী ছিলেন। ইন্দ্রাণী তার মেয়ে শিনাকে কখনও নিজের বলে পরিচয় দিতেন না। তৃতীয় স্বামী পিটারের সঙ্গে ছেলে মিখাইল ও মেয়ে শিনার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন নিজের ছোট ভাই ও বোন হিসেবে। পিটারের আগের ঘরের সন্তান রাহুলের সঙ্গে এক পর্যায়ে শিনার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি ইন্দ্রাণী। ২০১২ সালে মহারাষ্ট্রে নিজের গাড়ি চালককে দিয়ে মেয়ে হত্যা করান ইন্দ্রাণী।
গত ২১ আগস্ট একটি বেআইনি অস্ত্র মামলায় ইন্দ্রাণীর সাবেক গাড়িচালক শ্যাম মনোহর রাইকে গ্রেফতার করে মুম্বাই পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে একটি পুরনো খুনের কথা স্বীকার করে সে। শ্যাম জানায়, ২০১২ সালের ২৪ এপ্রিল একটি মেয়েকে খুন করে রায়গড়ের পেন তালুকের কাছে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল। শ্বাসরোধ করে হত্যার পর পেট্রোল ঢেলে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল দেহ। মুম্বাই পুলিশ জানিয়েছে, প্রথমে মনোহরের কথা বিশ্বাস করেনি তারা। কিন্তু পরে তাদের মনে পড়ে, খার থানায় তিন বছরের পুরনো একটি নিখোঁজ ডায়েরির কথা। মনে পড়ে, ২০১২ সালের ২৩ মে পেন থানায় একটি মৃতদেহ উদ্ধারের কথাও। মনোহরকে সঙ্গে নিয়ে রায়গড়ের ঘটনাস্থলে যায় পুলিশের একটি দল। সেখানে মাটির তলা থেকে কিছু দেহাংশ উদ্ধার হয়। সেই সঙ্গে বেরিয়ে আসে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। মনোহর জানায়, ইন্দ্রাণীর কথা মতোই মেয়েটিকে হত্যা করা হয়। হত্যার সময় উপস্থিত ছিলেন ইন্দ্রাণী এবং তার সাবেক স্বামী সঞ্জীব।
শিনা নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে ইন্দ্রাণীর বর্তমান স্বামী পিটার , ইন্দ্রাণীর বাবা উপেন্দ্রকুমার বরা, মা দুর্গারানি বরা এবং ছেলে মিখাইল সবাই জানতেন- শিনা আমেরিকায় লেখাপড়া করছেন। এমনকি শিনার ভুয়া ফেসবুক প্রোফাইল তৈরি করে ইন্দ্রাণী মাঝেমধ্যে নানা রকম ছবি দেখাতেন পিটারকে। শিনা আমেরিকার বিভিন্ন শহরে সময় কাটাচ্ছেন, দিওয়ালি পালন করছেন, এমন সব ছবিও সেখানে ছিল।
পিটার সাংবাদিকদের জানান, তার আগের পক্ষের ছোট ছেলে রাহুল মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে শিনার প্রণয়ের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। তাই নিয়ে পরিবারে অশান্তিও হয়েছিল। তখন ইন্দ্রাণী দাবি করেছিলেন যে তার ‘বোনের’ সঙ্গে রাহুলের সম্পর্ক তিনি মেনে নেবেন না। সেই জন্যই শিনাকে তিনি আমেরিকা পাঠিয়ে দিচ্ছেন। অশান্তি এড়াতে তা মেনে নেন পিটার।
ইন্দ্রাণীর ছেলে মিখাইল বলেন, রীতিমতো চুক্তি করে ইন্দ্রাণী তাঁদের দায়িত্ব নিতে রাজি হয়েছিলেন। চুক্তিটা হল, দেখভাল, বাপের বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ ও মিখাইল-শিনার পড়ার খরচ ইন্দ্রাণী চালাবেন। বদলে তার বর্তমান জগতে ছেলেমেয়ের পরিচয় দেবেন তাঁর ভাই-বোন হিসেবে।