Home / সম্পাদকীয় / সম্পাদকীয় : তামাক মুক্ত দেশ চাই
smok

সম্পাদকীয় : তামাক মুক্ত দেশ চাই

প্রতি বছর আমাদের দেশে ৫৭ হাজার মানুষ তামাক, তামাকজাত দব্য গ্রহণ ও ধূমপান করে মৃত্যুবরণ করে। যা ভাবতে অবাগ লাগে। গ্লোবাল এডাল্ট টোবাকো সার্ভে মতে, আমাদের দেশে ৪ কোটি ৫০ লাখ মানুষ পরোক্ষভাবে ধূমপানের শিকার হচ্ছে। এর মধ্যে ১ কোটির মতো নারী।

কর্মক্ষেত্রে ৬৩% ও পাবলিক প্লেসে ৪৫ % মানুষ এ ধূমপানের শিকার হচ্ছে। ১৯৭৮ সালে প্রথমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তামাক ও তামাকজাত এবং সিগারেট বা বিড়ি সেবনের ক্ষতিকর দিকগুলোর প্রতি নজরে আনে।

বাংলাদেশ হচ্ছে পৃথিবীর প্রথম দেশ যা ২০০৩ সালের ১৬ জুন ফ্রেম কনভেনশন অন টোবাকো চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে। ওই কনভেনশনে বিশ্বের ১৯২টি দেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে একটি রেজুউলেশন করেন। ২০০৪ সালের ১০ মে সরকার চুক্তিটি অনুস্বাক্ষর করে।

ফলে ২০০৫ সালে আমাদের মহান জাতীয় সংসদে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন পাশ হয়। ওই বছরের ২৬ মার্চ থেকে আইনটি কার্যকর করা হয়। আইনের ধারায় পাবলিক প্লেসে ও পাবলিক পরিবহণে ধূমপান শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এ আইন প্রয়োগ করে প্রকাশ্যে ধূমপানের অপরাধের কারণে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ৫০ টাকার বিধান রয়েছে।

স¤ভবত: ২০১৪ সালে সরকার শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ৫০ টাকার স্থলে ১ শ’ টাকা নির্ধারণ করেন। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে,তামাক ব্যবহারকারীরা মাসিক ব্যয়ের ৪.৫% তামাকের পেছনে ব্যয় করে থাকে।

প্রতি বছর দেশে তামাক,তামাকজাতদ্রব্য ব্যবহার ও ধূমপান করে ১২ লাখ মানুষ ৮ টি জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। এ গুলোর মধ্যে রয়েছে-ক্যান্সার,আলসার,স্ট্রোক, ব্লাডপেসার,গ্যাংগ্রিন, ব্রংক্রাইটিস, হ্রদরোগ ও হ্যাঁপানি ইত্যাদি। এ দের মাত্র ২৫% মানুষ চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়।

ফলে দেশের অর্থনীতির আয় থেকে সরকারের ওই চিকিৎসা খাতে ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়। এর পরও বছরে ৫৭ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে ও ৩ লাখ ৮২ হাজার মানুষ পঙ্গুত্ববরণ করে ।

বিদেশ থেকে আমদানি ছাড়াও বছরে আমাদের দেশে ২০ হাজার ৩ শ’ মিলিয়ন সিগারেট ও ১ লাখ ৮ হাজার মিলিয়ন বিড়ি ্উৎপন্ন হয়ে থাকে ।

এক হিসেবে দেখা গেছে,দেশে দৈনিক কমহলেও ৭ কোটি ৯০ লাখ টাকার ও বছরে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার সিগারেট বা বিড়ি বিক্রি হয়। এ বিক্রিত অর্থে বাংলাদেশের ৫ বছরের নিচে প্রায় ৭০ লাখ অপুষ্টিতে ভুগছে এমন শিশুদেরকে দৈনিক এক গ্লাস করে দুধ পান করানো সম্ভব বা ১ কোটি ৫০ লাখ অভুক্ত মানুষের ৪শ’ক্যালোরি খাবার দেয়া সম্ভব।

এ ছাড়াও অন্যভাবে হিসেব কষে দেখা গেছে–-ওই টাকায় বর্তমান বাজার মূল্যে প্রায় ৫ শ’কোটি ডিম বা ১৫ লাখ টন চাল বা ২৯ কোটি ছোট আকারের মুরগি বা ২৯ লাখ ছোট বাছুর কেনা সম্ভব ।

সুতরাং,আমাদের এখন বুঝতে বাকি নেই যে তামাক,তামাকজাত দ্রব্য ও সিগারেট বা বিড়ি পান করায় কি পরিমাণ অর্থের অপচয় ঘটছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, তামাক,তামাকজাত ও সিগারেট বা বিড়ি সেবনের ক্ষতিকর দিকগুলোর বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন ব্যতীত শুধুমাত্র চিকিৎসা সেবা দিয়ে এর প্রতিকার করা সম্ভব নয় । তাই তামাক মুক্ত দেশ গঠনে সংশ্লিষ্ঠ গণমাধ্যম সমাজসেবী সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।

সম্পাদকীয় : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৯:৫০ পিএম, ৬ ডিসেম্বর ২০১৬, মঙ্গলবার
ডিএইচ

Leave a Reply