চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ রঘুনাথপুর হাজী এ করিম খান উচ্চ বিদ্যালয়ের সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করে মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় একটি পক্ষ এই সম্পত্তি নিজেদের দাবী করে সেখানে একাধিক দোকানসহ পাকা ভবন (মার্কেট) করছেন। এ নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চাঁদপুরের জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, চাঁদপুর পৌরসভা, জেলা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে অবৈধ দখলকারি মো. আনোয়ার হাজী গংদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগের পেক্ষিতে ২১ জুন চাঁদপুর সদর উপজেলা ভূমি কর্মকর্তার (এসিল্যান্ড) নির্দেশে সংশ্লিষ্ট তহসিলদার মো. শাহ আলম বিষয়টি প্রাথমিকভাব তদন্তে করেছেন। তিনি সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং অভিযুক্তদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করেন।
কিন্তু এরপরেও বিদ্যালয়ের জায়গায় মার্কেট নির্মাণ কাজ থেমে নেই। সকল বাঁধাকে উপেক্ষা করেই অবৈধ দখলকারি আনোয়ার হাজী গং বিদ্যালয়ের জায়গায় দোকান মির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
হাজী এ করিম খান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বাক্ষরিত বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরিত অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়, চাঁদপুর পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী রঘুনাথপুর হাজী এ. করিম খান উচ্চ বিদ্যালয়টি ১৯৭৬ সালে জনস্বার্থে এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও দানশীল ব্যক্তি হাজী আবদুল করিম খান নিজ অর্থে প্রতিষ্ঠা করেন। শুরু থেকে অদ্যাবধি অত্র এলাকার ছাত্র-ছাত্রী অত্যান্ত সুনামের সাথে লেখাপড়া করে আসছে।
বিদ্যালয়ের একান্ত প্রয়ােজনে বিগত ১৯৭৬ সালে ৮২১৪নং এক সাব কবলা দলিলের মাধ্যমে বড় রঘুনাথপুর মৌজার সিএস ৮৪ নং খতিয়ানের মালিকত্রয়ের মধ্যে মফিজ উদ্দিন গাজীর একমাত্র ছেলে নূর মােহাম্মদ গাজী থেকে ৫৯২ নং দাগের ২২ শতাংশ ভূমি খরিদ করিয়া উক্ত ২২ শতাংশ ভূমি ৩১/০৮/৭৬ইং তারিখে ৮৫১৯ নং এক দানপত্র দলিলের মাধ্যমে বিদ্যালয়কে দান করেন। কিন্তু বিবাদীর দাদা আবদুল মজিদ গং হাজী
করিম খান গং কে বিবাদী করিয়া উক্ত ২২ শতাংশ ভূমির বিরুদ্ধে চাঁদপুর সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। যার নং- ৩৬৫ তারিখ- ০৪/১১/৭৬ইং।
গত ২৬/০৬/৮২ইং বিজ্ঞ বিচারক অত্র মােকদ্দমাটি দোতরফা সূত্রে ডিক্রী আদেশ দেন। উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে হাজী আবদুল করিম খান আপিল আদালতে আপিল দায়ের করলে আদালত দোতরফা সূত্রে নিম্ন আদালতের রায় ও ডিক্রী বাতিল করত: কিছু দিক নিদের্শনাসহ পুনঃবিচারের
জন্য নিম্ন আদালতে মামলাটি প্রেরণ করে। নিম্ন আদালতের বিজ্ঞ বিচারক গত ১৬/০২/৮৯ইং উক্ত মামলাটির চূড়ান্ত সুনানী করেন এবং ২৮/০২/৮৯ইং আদালতের বিজ্ঞ বিচারক বিদ্যালয়ের পক্ষে রায় প্রদান করেন, অথাৎ বাদী পক্ষের আবেদ খারিজ করে দেন।
বাংলাদেশ জরিপামলে উক্ত ২২ শতাংশ ভূমি বিদ্যালয়ের নামে বি এস ১৯১৬ নং খতিয়ানে খতিয়ানভূক্ত করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৭-৯৮ইং সনে ৪৪নং নামজারী জমা খারিজ মােকদ্দমার আদেশ মতে বিদ্যালয়ের নামে ৪৯১নং একটি খতিয়ান খােলা হয় এবং ০৫/১১/৯৭ইং সদর থানা ভূমি কর্মকর্তার স্বাক্ষরে খতিয়ানটি অনুমােদিত হয়। উক্ত ভূমিতে একটি পুরাতন জরাজীর্ণ ঘর বিদ্যমান ছিল।
বর্তমান করােনা মহামারি পরিস্থিতিতে বিদ্যালয় বন্ধ থাকা অবস্থায় এবং মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির পদ স্থগিত থাকা অবস্থায় গত ২৬ মে প্রতিপক্ষগণ পুরাতন জরাজীর্ণ ঘরটি সরিয়ে নতুন স্থাপনা নির্মাণ করার উদ্দেশ্যে মালামাল সংগ্রহ করে।
এমতাবস্থায় চাঁদপুর পৌরসভার মেয়রকে বিষয়টি প্রথমে মৌখিকভাবে ও পরবর্তীতে ৩ জুন লিখিতভাবে যাহাতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করতে না পারে সেজন্যে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন জানানাে হয়। তিনি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনাে পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।
প্রতিপক্ষগণকে বিভিন্নভাবে নিষেধ করা সত্ত্বেও গত কয়েকদিন ধরে উক্ত ভূমিতে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যালয়ের স্বার্থে উক্ত ২২ শতাংশ ভূমি রক্ষার উর্ধতন কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা গ্রহণ একান্ত প্রয়ােজন।
এ অবস্থায় এলাকাবাসী, অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের ভূমি রক্ষায় অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে শিক্ষামন্ত্রী, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও পৌর মেয়রের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
স্টাফ করেসপন্ডেট,২৩ জুন ২০২১
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur