গ্রাহকের শতকোটি টাকা নিয়ে উধাও ২০ বছরের সমিতি

চাঁদপুরের শাহরাস্তি শোরসাক বাজারে অবস্থিত প্রান্তিক বহুমুখী সমবায় সমিতির যাত্রা শুরু হয় প্রায় ২০ বছর আগে। যদিও ২০০৮ সালের ১৫ অক্টোবর তার সমবায় অফিস থেকে অনুমতি পান।

শাহরাস্তি উপজেলার শোরসাক এলাকার মো. জসিম উদ্দিনের পরিচালনায় প্রান্তিক বহুমুখী সমবায় সমিতি একে একে এলাকায় তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। এলাকার সাধারণ জনগণকে বিভিন্ন প্রকার প্রলোভন দেখিয়ে সমিতির অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

শাহরাস্তি উপজেলার অনেকেই অধিক মুনাফার আশায় প্রান্তিকের ছায়াতলে সামিল হন। বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগণকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয় প্রান্তিক। গ্রাহকরা লক্ষ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করতে থাকে। বিগত দুবছর যাবত প্রান্তিকের কার্যক্রম ধীরে ধীরে বন্ধ হতে থাকে।

সর্বশেষ বছর খানেকের মাথায় তারা নিজেদের গুটিয়ে সমিতির কার্যক্রম বন্ধ করে রাখে। গ্রাহকরা তাদের টাকা প্রাপ্তির আশায় শোরসাক বাজারে অবস্থিত প্রান্তিকের বন্ধ অফিসে এসে ফিরে যাচ্ছেন। মুখ খুলে কোনো প্রতিবাদ করতেও সাহস পাননি তারা।

সমিতির নিয়ন্ত্রণে থাকা কর্তাব্যক্তিরা বিভিন্ন উপায়ে টাকা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়ার ফলে তারা কোনো অভিযোগ না করেই টাকা আদায়ের অপেক্ষায় দিন পার করছেন।

সম্প্রতি সময়ে এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ভুক্তভোগী গ্রাহকরা টাকা না পেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিতভাবে অভিযোগ করে যাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশাল এলাকাজুড়ে প্রান্তিকের এ কার্যক্রমে প্রায় হাজার গ্রাহকের শতকোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে প্রান্তিক সমবায় সমিতি।

চেড়িয়ারা গ্রামের মো. হারুনুর রশিদের ১৭ লাখ টাকা, চেড়িয়ার গ্রামের মিজানুর রহমানের স্ত্রী ফৌজিয়া বেগমের ১০ লাখ টাকা, হাড়াইপাড়া গ্রামের এনায়েত হোসেনের মেয়ে জেসমিন আক্তার কেয়ার ১৯ লাখ টাকা, চেড়িয়ারা গ্রামের হাফেজ আহম্মদের ৭ লাখ টাকা, রাগৈ গ্রামের শহীদ উল্লাহর ১০ লাখ টাকা, হাড়াইপাড়া গ্রামের আ. হাকিমের ৯ লাখ টাকা, দশনাপাড়া গ্রামের রওশনআরার ৪ লাখ টাকা, শোরসাক গ্রামের মো. মনির ফরাজীর ৭ লাখ টাকা ছিল ওই সমিতিতে।

এভাবে প্রায় হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় শতকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রান্তিক সমবায় সমিতি। প্রান্তিক বহুমুখী সমবায় সমিতির ভুক্তভোগী গ্রাহকদের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এছাড়াও সদয় অবগতির জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য, সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব, জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে অবহিত করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী গ্রাহক মো. হারুনুর রশিদ জানান, তিনি সেনা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি। পেনশনের ১৭ লাখ টাকা তিনি তিন বছর পূর্বে প্রান্তিকে জমা রাখেন। এক বছর লাখ প্রতি মাসে এক থেকে ১ হাজার ২শ টাকা করে দিয়ে আসছিল। কিন্তু বিগত দুই বছর যাবত তারা কোনো টাকা দিচ্ছে না । সমিতির কার্যালয় বন্ধ থাকায় কাউকেই খুঁজে পাওয়া যায়না। কোনোভাবে কাউকে পেলে তারা একে অপরের উপর দায় চাপিয়ে কেটে পড়েন।

তিনি বলেন, তার ফুফুও উক্ত সমিতিতে এক লাখ টাকা জমা রেখেছে।

তিনি আরও জানান, পরিচালক জসিম উদ্দিন, মতিন সর্দার ও হায়দার মজুমদার গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।

হাড়াইপাড়া গ্রামের এনায়েত হোসেন জানান, তার মেয়ের ১৯ লাখ টাকা প্রান্তিকে জমা রেখেছেন। বর্তমানের তারা টাকা ফেরত না দিয়ে শুধু তারিখ দিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে শাহরাস্তি উপজেলার বহু গ্রাহক প্রান্তিকে টাকা জমা দিয়ে নিঃস্ব হওয়ার পথে। টাকা ফিরে পেতে কর্তাব্যক্তিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো আশার আলো দেখছেন না তারা। টাকা উদ্ধারে এলাকার কেউ কেউ এগিয়ে আসলেও প্রভাবশালীদের তোপের মুখে পিছু হটছেন।

শাহরাস্তি উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. মোতালেব খান জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে অভিযোগের কপি পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি আরও জানান, প্রায় এক মাস পূর্বে সমিতির মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির বিষয়ে নোটিশ প্রেরণ করা হলেও কাউকে পাওয়া যায়নি। প্রান্তিকের সাবেক এক মহিলা কর্মীর মাধ্যমে নোটিশ দিয়ে আসা হয়। তারা লোক মারফতে নোটিশের উত্তর পাঠান তাতে কমিটি ঘটনের ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর পাওয়া যায়নি।

তিনি আরও জানান, ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের তাদের টাকা ফিরে পেতে আইনের আশ্রয় নিতে হবে।

Share