মেঘনা নদীর পশ্চিমে অবস্থিত চাঁদপুর সদরের ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের নদী সিকস্তি চর এলাকা চরফতেজংপুর গ্রাম। অত্র ইউনিয়নের ৬টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ওই গ্রামে ৫টি প্রাথমিক বিদ্যায়র ও একটি এবতেদায়ি মাদ্রাসা থাকলেও ৪ কি.মি.এলাকার মধ্যে একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছিল না।
ফলে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার স্বপ্ন দেখা ওই গ্রামের ছেলে-মেয়েদের ৪ কি.মি.দূরে অবস্থিত হাইমচর উপজেলার ইশানবালা উচ্চ বিদ্যালয় এবং পাশের জেলা শরিয়তপুরের তারাবুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ওপর নির্ভর করতে হতো।
২০১৫ সালের ১ জানুয়ারিতে স্থানীয় কিছু ব্যক্তির উদ্যোগে স্বপ্ন নিয়ে পথ চলা শুরু হয় চরফতেজংপুর নিম্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়টির। প্রতিষ্ঠার সাড়ে ৩ বছর পার হলেও এখনো পর্যন্ত নিজস্ব ভবন, বেঞ্চ ও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র এবং শিক্ষকদের বেতনসহ নানা সমস্যাকে ধারণ করেই নিয়মিতভাবে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদান অব্যাহত রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়, চাঁদপুর সদর উপজেলার ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের অধুনিক সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত নদী সিকস্তি একটি চর এলাকা নাম চরফতেজংপুর গ্রাম। মেঘনা নদীর পশ্চিমে অবস্থিত অত্র ইউনিয়নের ৬টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ওই গ্রামে প্রায় ৩০ হাজার লোকের বসবাস।
সেখানে ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ও একটি এবতেদায়ি মাদ্রাসা থাকলেও নেই কোনো উচ্চ বিদ্যালয়। এরফলে প্রতিদিন ৪ কি.মি.এলাকা পাড়ি দিয়ে স্কুলে যেতে হতো উচ্চ মাধ্যমিকে পড়–য়া গ্রামের অন্যান্য ছেলে-মেয়েদের।
এ সমস্যা থেকে উত্তরণে ২০১১ সালে স্থনীয় পর্যায়ে কিছু ব্যক্তির উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়ার সহযোগিতায় গ্রামের আলুরবাজারস্থ চরফতেজংগপুর সরকারি বিদ্যালয়ের দ’ুটি কক্ষে গড়ে তোলা হয় চরফতেজংপুর নিম্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
সপ্তম শ্রেণি থেকে অস্টম শ্রেণির এ বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে এর শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিলো ৯৮ জন। বর্তমানে ১ জন ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের নেতৃত্বে ৪ জন শিক্ষক বিদ্যালয়ে ১শ’৯৮ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান দিচ্ছেন।
বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো.মুকবুল হোসেন জানায়,‘আমি দীর্ঘ ৩৬ বছর ধরে চরফতেজংগপুর সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষাকতা করেছি। সেখানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালিন সময়ে এ গ্রামে একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি।
কারণ গ্রামের ৪ কি.মি.এলাকার মধ্যে কোনো উচ্চ বিদ্যালয় না থাকায় এখানকার ছেলে-মেয়েরা পাশের উপজেলা হাইমচর নীলকমল এবং পাশের জেলা শরিয়তপুরের দু’টি বিদ্যালয়ের ওপর নির্ভর করতো।
২০১৫ সালে বিশিষ্ট সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী,চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম ভূইয়ার সহযোগিতায় এবং এখানকার কিছু ব্যক্তির উদ্যোগে এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে বর্তামন পর্যন্ত আমরাচরফতেজংগপুর সরকারি বিদ্যালয়ের পুরোনো ভবনের দ’ুটি শ্রেণিকক্ষ ব্যবহার করছি। এছাড়া কিছুদিন পূর্বে টিনের তৈরি আরেকটি শ্রেণিকক্ষ করা হয়েছে। তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাসিক একশ’ টাকা চাঁদা নিয়ে বিদ্যালয়ে কর্যক্রম চলছে।
তাছাড়াও বাবু সুজিত রায় নন্দী ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম ভূইয়া কিছু অর্থিক সহযোগিতা করে থাকেন। মূলত: তাদের সহযোগিতা এবং শিক্ষার্থীদের বেতনে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে। গত বছর এ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণি থেকে ১৮জন পরিক্ষার্থী জেএসসি তে অংশ নিয়ে সবাই কৃতকার্য হয়েছে। এ বছর ৩৮জন শিক্ষার্থী জেএসসি’র জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছে।
তিনি আরো জানান,আমি নিজে বিনা বেতনে এখানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বপালন করছি। বাকি ৪ জন শিক্ষকদে মাসে ৩ হাজার টাকা করে বেতন দিতে হয়। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের চাঁদায় বিদ্যালয়ে অনুসাঙ্গিক খরচ মিটিয়ে শিক্ষকদের মাসিক বেতন পরিশোধ করতে আমাদের হিমশিম থেকে হচ্ছে। তাছাড়া নিজস্ব ভবন না থাকায় শ্রেণিকক্ষ ও ফার্ণিচারের অভাবে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে অনেকটাই কষ্ট হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জান্নাত আক্তার,শাহআলম পাটওয়ারী,আরিফ রাঢ়ি ও আমেনা সহ বেশ কিছু শিক্ষার্থী জানায়,শিক্ষকরা খুবই আন্তরিকতার সাথে আমাদের পড়াচ্ছে। এ বিদ্যালয়ে সকল শিক্ষক গ্রামের হওয়ায় তারা নিয়মিত আমাদের ক্লাস নিচ্ছেন। তবে শ্রেণি সংকট ও ব্যাঞ্চের কারণে আমরা ঠিক ক্লাস করতে পারছি না।
এ সকল সমস্যা থেকে উত্তরণে এবং গ্রামের ছেলে-মেয়েদের লেখা-পড়া অব্যাহত রাখার জন্যে বিদ্যালয়ের একটি স্থায়ী ভবন ও প্রয়োজনীয় ফার্ণিচার সহ অন্যান্য সমস্যাগুলো সমাধানে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক,জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এবং এর পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা আহ্বান করেছেন ভারপ্রাপ্ত এ প্রধানশিক্ষক মো.মুকবুল হোসেন ।
প্রতিবেদক : আশিক বিন রহিম
আপডেট,বাংলাদেশ সময় ৫:১০ পিএম,২৪ আগস্ট ২০১৭ বৃহস্পতিবার
এজি