নিম্নবিত্তদের টাকা মেরে সমবায় সমিতি উধাও

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকার সবজি বিক্রেতা, গৃহপরিচারিকা, রিকশাচালক, দারোয়ান ও ভিক্ষুকসহ নিম্নআয়ের কয়েক হাজার মানুষের বিপুল টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে ‘দরিদ্র মঙ্গল সমবায় সমিতি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান।

আজ শনিবার দুপুরে ঋণ দেওয়ার নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে বিক্ষোভ করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, রাজধানীর মোহাম্মদপুর ঢাকা উদ্যান, চাঁদ উদ্যান, নবীনগর হাউজিং, একতা হাউজিং, রায়ের বাজার, সুনিরবিল হাউজিংসহ বেশ কয়েকটি এলাকার প্রায় ২ হাজার গ্রাহক থেকে কয়েক কোটি টাকা সংগ্রহ করে ওই সমিতি। তাঁদের ৩০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে প্রায় দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার কথা বলে সদস্যদের কাছ থেকে ৪ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা জমা নেয় সমিতিটি।

রিকশাচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আজকে (১৯ ফেব্রুয়ারি) আমাদের লোন দেওয়ার কথা ছিল। আমরা সকাল ১০টায় অফিসে লোন নিতে আসি। অফিসে এসে দেখি কেউ নাই। তালা মারা। কিছুক্ষণ পর দেখি আরও ১০/১২ জন লোনের জন্য এসেছে। এর কিছুক্ষণ পর দেখি আরও ৫০/৬০ জন। এভাবে কয়েকশ লোক অফিসে আসে লোনের জন্য। আজকে সবাইকে লোন দিবে বলে বৃহস্পতিবারে সবার কাছ থেকে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার করে তুলে এনেছে। বহু কষ্ট করে রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতে হয়। ভাবলাম সমিতিতে টাকা রেখে কিছু লোন নিয়ে একটা দোকান করে বসব। এখন সব টাকা নিয়ে সমিতি পালিয়ে গেছে। আমরা তাদের বিচার চাই।’

সবজি বিক্রেতা হাওয়া বেগম রায়ের বাজার এলাকায় কাঁচা বাজার থেকে নষ্ট শাক-সবজি কুড়িয়ে বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে সমিতির কয়েকজন লোক গিয়ে বলে গরিব মানুষের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে একটা সমিতি করা হয়েছে। ৭ হাজার টাকা জমা দিলে আমাদের ১ লাখ টাকা লোন দেওয়া হবে। আমরা ধীরে ধীরে টাকা পরিশোধ করে দিতে পারবো। আমি আমার পরিবারের নয়জনের নামে দেড় লাখ টাকা দিয়ে নয়টা বই করি। আজকে আমাদের প্রতি নাম বাবদ দেড় লাখ টাকা করে লোন দেওয়ার কথা ছিল। এখন অফিসে এসে দেখি তালা মারা। সমিতির লোকদের ফোন বন্ধ। আমরা গরিব মানুষ ভালো কিছু করার আশায় আমরা টাকা জমা দিয়েছি। এখন আমরা কোনদিকে যাব। রাস্তায় বসা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই এখন। তাদের দ্রুত আটক করে যেন আমাদের টাকা উদ্ধার করে দেওয়া হয়।’

আরেক সবজি বিক্রেতা মাহবুব আশা করেছিলেন কিছু ঋণ নিয়ে একটা ছোট চা দোকান দেবেন। এখন গরিবের সমিতি নাম দিয়ে তাঁদের টাকা নিয়ে সমিতি উধাও হয়ে গেল। তাঁদের রাস্তায় বসিয়ে দিয়ে গেল।

শেফালী বানু বলেন, ‘স্বামী আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। এখন আমি মানুষের কাছ থেকে টাকা চেয়ে এনে সংসার চালাই। কিছু টাকা জমিয়ে সমিতির লোকদের দেই, তারা আমাকে লোন দিবে বলে টাকা নিয়ে সদস্য বানায়। এখন আমাদের টাকা নিয়ে হঠাৎ করে সমিতি উধাও হয়ে গেছে। বাচ্চাদের নিয়ে কী খাব কীভাবে চলব জানি না।’

তাঁদের মতো রহিমা বানু, আব্দুল জব্বার, মিজান, শরীফুল, মিনারা, রফিক, ফাতেমা বানু, সাইদুল, হালিম, বেদানাসহ মোহাম্মদপুর এলাকার ২ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা পালিয়ে সমিতির লোকেরা। এ খবরে মোহাম্মদপুর ঢাকা উদ্যান এলাকায় দরিদ্র মঙ্গল সমবায় সমিতির কার্যালয়ে আজ কয়েকশ লোক জড়ো হয়। তাঁরা সমিতির মাঠকর্মী নাসরীন, সোহাগ ও মিজানকে করেন।

তাঁরাও প্রতারণার শিকার জানিয়ে মাঠকর্মী মিজান জানান, তিনি গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে অফিসে জমা দিতেন। তাঁর মতো আরও দশ থেকে বারো জন মাঠ কর্মী গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রতিদিন টাকা কালেকশন করে এনে অফিসে জমা দিতে হয়।

মিজান বলেন, ‘গতকাল শুক্রবার রাত থেকে সমিতির ম্যানেজার শাখাওয়াত হোসেনকে কল দিচ্ছি কিন্তু নম্বর বন্ধ। অডিট ম্যানেজার কাওসারের নম্বরও বন্ধ পাচ্ছি। অন্যান্য দিনের মতো আজকেও অফিস করতে এসে দেখি গ্রাহকেরা ভিড় করছে। আমরা আসা মাত্রই আমাদের আটক করে। আমরাও প্রতারণার স্বীকার। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বিক্রয় ডটকমের মাধ্যমে আমরা চাকরির জন্য অ্যাপ্লাই করেছিলাম। তখন আমাদের সিভি জমা দিতে বলে। আমরা সিভি জমা দিলে আমাদের চাকরিতে জয়েন করতে বললে আমরা নিয়মিত অফিস করতেছি। এখন আমরাও এসে দেখি আমাদের ব্যবহার করে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আমরাও গ্রাহকদের মতো প্রতারণার স্বীকার হয়ে এখন বিপদে পড়েছি।’ নাসরীন ও শরিফুলও একই কথা বলেন।

এ বিষয়ে জানতে মোহাম্মদপুর থানার ওসি আব্দুল লতিফের সঙ্গে যোগযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি জেনেছি। থানা থেকে ফোর্স পাঠানো হয়েছে, আমরা কাজ করছি। বিস্তারিত জেনে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Share