রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতাল এলাকায় ধর্ষণের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তার ধর্ষককে শনাক্ত করেছেন। তার শনাক্ত মোতাবেক র্যাবের হাতে আটক যুবক মজনুকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
ধর্ষক মজনুকে গ্রেফতারের বুধবার ৮ জানুয়ারি দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক সারোয়ার বিন কাশেম। তিনি এ সময় অভিযুক্ত ও নির্যাতিতার বক্তব্য তুলে ধরেন।
সরোয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘ ছবি দেখিয়ে ভিকটিমের কাছ থেকে আসামিকে শনাক্ত করা হয়েছে। ভিকটিম বলেছেন,‘সব চেহারা ভুলে গেলেও এ (ধর্ষক) চেহারা তিনি কোনো দিন ভুলবেন না ।’
ধর্ষক সিরিয়াল রেপিস্ট মন্তব্য করে সরোয়ার বিন কাশেম বলেন,‘একই জায়গায় সে এ ধরনের অপরাধ করেছে। প্রতিবন্ধী,ভিক্ষুকসহ বিভিন্ন নারীদের সে আটকে রেখে ধর্ষণ করত। তাদের হত্যার হুমকিও দিত। মজনু স্বীকার করেছে ঘটনার সময় সে একাই ছিল, ভিকটিমও তেমনই বলেছে।’
কীভাবে নিশ্চিত হলেন যে, গ্রেফতার মজনুই ঢাবি ছাত্রীর ধর্ষক এমন প্রশ্নের জবাবে সরোয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘আমরা মেয়েটার সঙ্গে অনেকবার কথা বলেছি, অনেকবার অভিযুক্ত মজনুর ছবি দেখিয়েছি তাকে। আমি ব্যক্তিগতভাবে নিজে মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করেছি। মেয়েটি বলেছে, ‘এ সে ধর্ষক। আমি পৃথিবীর সব চেহারা ভুলে গেলেও কখনো এ চেহারা ভুলবো না।’ নিশ্চিত করার আগে ও পরে অভিযুক্তকেও জিজ্ঞেস করেছি। সেও স্বীকার করেছে যে, সে একাই ঘটনাটি ঘটিয়েছে।
মজনু মাদকাসক্ত জানিয়ে র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘মজনু নিয়মিত মাদকসেবী, সে মাদকাসক্ত। এ কারণে সেদিন ওই মেয়েকে দেখে তার মধ্যে পৈশাচিক শক্তি চলে আসে। তাই মেয়েটি প্রতিরোধ করতে পারেনি। সব পক্ষের বক্তব্যই নিশ্চিত করেছে যে, মজনুই ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটিয়েছে।
সরোয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘ওমজনু একজন সিরিয়াল রেপিস্ট। এর আগে সে ভিক্ষুক ও প্রতিবন্ধী নারীদেরও ধর্ষণ করেছে। মজনু একই স্থানে অনেককে ধর্ষণ করেছে বলে স্বীকার করেছে।’
মজনুকে গ্রেফতারের বর্ণনায় র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রথমে আমরা ওই ছাত্রীর খোয়া যাওয়া মোবাইল উদ্ধারের চেষ্টা করি। তদন্তে আমরা দেখতে পাই মোবাইলটি খায়রুল ইসলামের নামে ছিল। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয় র্যাবে। পাশাপাশি মোবাইলটি উদ্ধার করা হয়।’
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, খায়রুল একজন রিকশাচালক। অরুণা বিশ্বাস নামে তার একজন পরিচিত নারী তাকে ডিসপ্লে ঠিক করার জন্য মোবাইলটি দেন। সে সূত্রে অরুণাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনে র্যাব। জিজ্ঞাসাবাদে অরুণা জানান, মজনু তার কাছে ডিসপ্লে ভাঙা একটি মোবাইল বিক্রি করে। সেটি খায়রুলকে মেরামত করার জন্য দেন তিনি।
সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘ নির্যাতিতা ছাত্রী ও অরুণার কাছ থেকে মজনুর চেহারার বর্ণনা নেয়া হয়। দু’জনের বর্ণনা মিলে গেলে আমরা নিশ্চিত হই সে-ই ধর্ষক। এরপর তদন্ত করে দেখি মঙ্গলবার ৭ জানুয়ারি সারাদিন মজনু বনানী রেলওয়ে স্টেশনে ছিল। কড়া নজরদারিতে রেখে বুধবার ৮ জানুয়ারি ভোর ৪ টা ৫০ মিনিটে তাকে শেওড়া রেলক্রসিং এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় ।’
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মজনু জানায়, ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটানোর পর সে এয়ারপোর্ট স্টেশন দিয়ে নরসিংদী চলে যায়। এরপর সেখান থেকে মঙ্গলবার বনানীতে আসে সে।
৫ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭ টার দিকে রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতাল এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হন।
জানা যায়, বিকাল সাড়ে ৫ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে শেওড়ায় বান্ধবীর বাসায় যাচ্ছিলেন ওই ছাত্রী। সন্ধ্যা ৭ টার দিকে তিনি ভুল করে কুর্মিটোলায় বাস থেকে নামার পর এক ব্যক্তি তার মুখ চেপে ধরে পাশের নির্জন স্থানে নিয়ে যান। সেখানে তাকে অজ্ঞান করে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতন করেন।
রাত ১০ টার দিকে জ্ঞান ফিরলে তিনি বিষয়টি বুঝতে পারেন। পরে সেখান থেকে অটোরিকশায় করে বাসায় ফেরার পর রাত ১২ টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় ক্যান্টমেন্ট থানায় ওই ছাত্রীর বাবার দায়ের করা মামলায় মজনুকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
বার্তা কক্ষ , ৮ জানুয়ারি ২০২০