চাঁদপুরের আট উপজেলার সাতটিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে। কিন্তু মঙ্গলবার পর্যন্ত মতলব দক্ষিণ উপজেলায় একজনেরও করোনা শনাক্ত হয়নি। এ উপজেলায় নমুনা পরীক্ষা হয়েছে খুবই কম। গত দেড় মাসের মধ্যে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে মাত্র ১৪ জনের।
চাঁদপুর সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত মার্চ থেকে সোমবার পর্যন্ত জেলার ৭ উপজেলায় মোট ৪৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এর মধ্যে চাঁদপুর সদর উপজেলায় ২৬, মতলব উত্তরে ৫, হাজীগঞ্জে ৪, কচুয়ায় ২, হাইমচরে ২, শাহরাস্তিতে ২ ও ফরিদগঞ্জে ৭ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মতলব দক্ষিণে প্রতি তিন দিনে গড়ে একজনের নমুনা পরীক্ষা হয়। ২ এপ্রিল থেকে নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত ১৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। সবগুলোই নেগেটিভ আসে। এ উপজেলায় এখন জনসংখ্যা প্রায় চার লাখ। এর মধ্যে মধ্যে মাত্র ১৪ জনের পরীক্ষা হলে তা মোটেও পর্যাপ্ত নয়। এ ছাড়া উপজেলায় মার্চ থেকে এ পর্যন্ত বিদেশ থেকে ফেরেন ২ হাজার ১৯৭ জন। নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে আসেন ১৪৯ জন। এর মধ্যে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয় ৮৫৮ জনকে।
মতলব সরকারি কলেজের শিক্ষক অশোক কুমার রায় মন্তব্য করেন, এ উপজেলায় এখন পর্যন্ত করোনার সংক্রমণ না হওয়ায় এলাকার লোকজন কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছেন। প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনী, চিকিৎসক, জনপ্রতিনিধি ও স্বাস্থ্যকর্মীদের তৎপরতায় এটি সম্ভব হয়েছে। তবে এ নিয়ে উচ্ছ্বাসের কিছু নেই। সতর্ক না থাকলে এ অবস্থা ধরে রাখা কঠিন হবে। তিনি বলেন, প্রায় দেড় মাসে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে হাতে গোনা কয়েকজনের। উপসর্গ থাকা বা উপসর্গহীন বেশিসংখ্যক মানুষকে নমুনা পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় প্রকৃত চিত্র বোঝা যাবে না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা গোলাম কাউসার দাবি করেন, করোনার সংক্রমণ রোধে হাসপাতাল ও কমিউনিটি ক্লিনিকের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা আন্তরিকভাবে কাজ করছেন। নমুনা সংগ্রহের পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনা সম্পর্কে স্থানীয় লোকজনকে সচেতন করছেন। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেও নির্দেশনা দিচ্ছেন। উপসর্গ নিয়ে যেসব লোক তাঁর হাসপাতালে এসেছেন, তাঁদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সন্দেহভাজন লোক তেমন না পাওয়ায় নমুনা পরীক্ষার সংখ্যাও কম। ঢালাওভাবে নমুনা পরীক্ষা করার মতো প্রয়োজনীয় কিট বা জনবল তাঁর হাসপাতালে নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা হক ও মতলব দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স্বপন কুমার আইচ দাবি করেন, এ উপজেলায় বিদেশ, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জফেরত ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা, লকডাউন বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থান নেওয়া হয়েছে। জনগণকে মাস্ক পড়া ও শারীরিক দূরত্ব মেনে চলতে মাইকিং করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার হার দ্রুতগতিতে বাড়ানোর জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মতলব দক্ষিণ করেসপন্ডেট,১৩ মে ২০২০