শীর্ষ সংবাদ

চাঁদপুরে দুই হাজার ৭২০ বসতবাড়িতে গড়ে ওঠেছে সবজির পুষ্টি বাগান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে চাঁদপুরের ২৭২০টি পারিবারিক সবজি বাগান গড়ে ওঠেছে। তাদের দেখে জেলার অনেক পরিবারই কৃষিকাজে আগ্রহ বাড়ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে চাঁদপুরে এখন অনেকেই গড়ে তুলছেন এ ধরনের বাগান।

জাানা গেছে, বাড়ির আঙিনায় পরিত্যক্ত জমিতে গড়ে উঠা এসব এসব বাগানে ১৪ জাতের সবজি উৎপাদিত হচ্ছে। যার মধ্যে লাউ, সিম, ঢেঁড়স, ডাটা, ধনিয়া, চিচিংগা, পুঁই শাক, কলমি শাক, লাল শাক, পালং শাক, পেঁপে, মূলা, করলাসহ অন্যান্য সবজি রয়েছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সহযোগিতা-পরামর্শে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতেই জেলাব্যাপী এ ধরনের চাষাবাদ শুরু হয়েছে।

‘বাড়ির পাশে বাগ-বাগিচা, শাক-সবজির চাষ, ফুল দেবে-ফল দেবে পুষ্টি বারো মাস’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এসব বাগান করা হয়েছে। এসব বাগান শুধু পারিবারিক চাহিদাই মেটাচ্ছে না। বরং বাগানের সবজি বাজারে বিক্রি করে সাবলম্বিও হতে চলেছেন অনেক কৃষক-কৃষাণী।

চাঁদপুর সদরের কল্যাণপুর ইউনিয়নের দাসাদী ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মজিদ তালুকদার জানান, যে সমস্ত কৃষক-কৃষাণী পারিবারিক সবজি বাগান করতে আগ্রহী। তাদের আমরা কোনো রকমের টাকা লেনদেন ছাড়াই নির্বাচন করে থাকি। পরে তাদের বাড়ির আঙিনায় একটা বেড থেকে আরেকটা বেড ১২ ইঞ্চি দূরে দূরে তৈরি করাই।

প্রতিটা বেডের চারদিক দিয়ে ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি নালা রাখতে নির্দেশনা দেই। একটা বেড তারপর নালা আবার আরেকটা বেড তৈরি করাই। এভাবে পাঁচটি বেড তৈরি করা হয়। যাতে পাঁচ জাতের শাকসবজি কৃষক বপন করতে পারে। এর জন্য বার্মি সার বা কেঁচোসারও তাদের দেওয়া হয়। এছাড়া পোকামাকড় দমন করতে কিটনাশক ব্যাবহারের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব আইপিএম পদ্ধতি ব্যবহারের পরামর্শ দেই।

চাঁদপুর জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জালাল উদ্দিন জানান, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা- প্রতি ইঞ্চি কৃষি জমিকে কাজে লাগাতে হবে। সারা বছর সবজি যেন চাষ হয় সেই লক্ষ্যে জুন থেকে এই প্রকল্পে কৃষি প্রণোদনা ভর্তুকি খাতে কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ ও নগদ অর্থ দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে জেলায় দুই হাজার ৭২০ জন কৃষককে কালিকাপুর মডেলে শাক-সবজি উৎপাদনের জন্য সবজি বীজ ও আনুষঙ্গিক খরচ হিসেবে নগদ টাকা দেওয়া হয়।

নগদ টাকার মধ্যে বেঁড়া তৈরির খরচ ৪০০ ও সাইনবোর্ড বাবদ ৩০০ টাকা রয়েছে। বাকি ১২০০ টাকা সার ও অন্যান্য খরচের হিসেব করে মোট এক হাজার ৯৩৫ টাকা করে প্রত্যেক কৃষককে দেওয়া হয়েছে। এতে কৃষকের পতিত জমি ও বাড়ির আঙিনা কৃষি কর্মসূচির আওতায় এসেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নরেশ চন্দ্র দাস জানান, সরকারি প্রণোদনা হিসেবে প্রতিজন কৃষককে ১৪ জাতের সবজির বীজ, বাগান তৈরির আনুসাঙ্গিক ব্যয় বাবদ নগদ ১ হাজার ৯৩৫ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চাঁদপুর সদরে সদর ৪১৬টি, ফরিদগঞ্জ ৪৮০টি, হাজিগঞ্জে ২৮৮টি, মতলব(দঃ) ১৯২টি, মতলব(উঃ) ৪৪৮টি, কচুয়া ৩৮৪টি, শাহারাস্তি ৩২০টি এবং হাইমচর ১৯২টি সহ সর্বমোট দুই হাজার ৭২০টি সবজি বাগান রয়েছে।

চাঁদপুর সদর উপজেলার উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সালাহ্ উদ্দিন জানান, বাজারের শাক-সবজি অনেক সময়ই বিষযুক্ত থাকে। কৃষকরা জমিতে অতিমাত্রায় সার ও কীটনাশক ব্যবহার করার কারণেই এমনটি হয়। কিন্তু কৃষক যখন পুষ্টি বাগানে নিজের হাতে শাকসবজি উৎপাদন করে, তখন এটি বিষমুক্ত বলে তিনি নিশ্চিত থাকতে পারেন।

এ বিষয়ে চাঁদপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আয়শা আক্তার জানান, পারিবারিক সবজি ও পুষ্টি নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় চাঁদপুর সদরের পারিবারিক পুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে ৩২টা করে মোট ৪১৬টি বসতবাড়িতে সবজি পুষ্টি বাগান গড়ে তোলা হয়েছে।

স্টাফ করেসপন্ডেট,১৭ ডিসেম্বর ২০২০

Share