চাঁদপুর

চাঁদপুরে মেঘনা পাড়ের প্রতিটি বাড়িতে উৎপাদন হচ্ছে বিষমুক্ত সবজির চাষ

চাঁদপুরের মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড়ের চরাঞ্চলে প্রত্যেকটি বাড়ির বাগানে উৎপাদন হচ্ছে বিষমুক্ত সবজির চাষ । এ সবজির চাহিদা চাঁদপুর শহরসহ দেশের বিভিন্ন শহরে অনেক বেশী বলে জানিয়েছেন, চরাঞ্চলে কৃষক ও কৃষানীরা।

বছরের অন্যান্য সময়ের চাইতে শীত মৌসুমে সবজির আবাদ বেশী হয়। চরাঞ্চলও সেই প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই। নদীর ভাঙা গড়ার খেলায় এক চর থেকে অন্য চরে ঘর-বাড়ি তৈরী করে চরাঞ্চলের শতশত লোকজন।

নতুন করে স্বপ্ন দেখেন আবার যেখানে তাদের বাড়ী প্রস্তুত করা হয় থাকার আবাসনের জন্য। সেখানেই গড়ে তুলেন সবজির বাগান। একই সাথে গবাদি পশু ও অন্যান কৃষি উৎপাদন করেন। বর্তমানে চরাঞ্চলের উৎপাদিত সবজি দিয়ে শহর অঞ্চলের সবজির একটি অংশের চাহিদা মিটে যায়।

চাঁদপুর সদর উপজেলার মেঘনা নদীর পশ্চিমে চরগুলোর ছোট বাড়ি গুলো দেখে মনে হয় প্রতিটি বাড়িই যেন সবজির বাগানে পরিনত হয়েছে। সম্প্রতি সময়ে চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের বলাশিয়া, শিলার চর, চিরারচর, বাঁশগাড়ি ও ল¹িমারার চরে গিয়ে দেখা গেছে, পদ্মা-মেঘনা নদীর ভাঙনের শিকার চরাঞ্চলের শতশত খেটে খাওয়া লোকদের নতুন নতুন বাড়ী তৈরী করে বসবাস করতে দেখা যাচেছ। বর্ষা মৌসুমে অধিকাংশ বাড়ির চারদিকে পানি থৈ থৈ করে।

কিন্তু শীত মৌসুমে পানি শুকিয়ে গেলে জমিতে বিভিন্ন প্রকার ধান, সরিষা,ভুট্ট্রা,খিরাই,তিল,মাশকালাইসহ অন্যান্য শীতকালীন সবজির আবাদ করা হয়ে থাকে। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও বসে নেই। প্রতিটি বাড়ির নারীদের হাতের ছোঁয়ায় প্রতিটি বাড়িতে সব্জির বাগানে পরিণত হয়ে রয়েছে।

বলাশিয়া চরের রোকেয়া বেগম চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, পদ্মার ভাঙনের শিকার হয়েছি বহুবার। তারপরেও আবার সন্তানদের নিয়ে মাথা গোজার ঠাঁই করেছি বলাশিয়া চর এলাকায়। গত ১ বছর আগে এখানে বাড়ি তৈরী করা হয়েছে। বাড়িতে শিম, কুমড়া, কদু(লাউ), পেঁপে, বেগুন গাছ,কলাগাছ রোপন করা হয়েছে। এগুলো আমাদের পরিবারের চাহিদা মিটে এবং বাজারেও বিক্রি করতে পারছি। এখানকার সবগুলো বাড়িতেই বর্তমান সময়ে এধরণের সবজির বাগান করা হয়েছে।

একই এলাকার রোকসানা আক্তার চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, আমাদের বাড়ীতে সবজির বাগান করতে বাজার থেকে সার কিনতে হয় না। আমাদের পালিত গবাদি পশুর জৈব সার দিয়ে সবজির বাগান করেছি। অনেক সময় গোয়াল ঘর ও বসত ঘরের উপরেই শিম, কুমড়া ও লাউ গাছ লাগানো হয়। কারণ আমরা চরাঞ্চলে স্থায়ী না হওয়ার কারণে বাড়ীতে বড় ধরণের কোন অর্থকরী গাছ গাছালি আমাদের এখানে নেই।

ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হাসান আলী দেওয়ান চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, চরাঞ্চলের উৎপাদিত সবজি ও দুধ প্রতিদিন ট্রলারে করে পদ্মা-মেঘনানদী পাড়ি দিয়ে চাঁদপুর শহরে চলে যায়। শহরে চরাঞ্চলের সবজির চাহিদা অনেক বেশী। প্রতিকেজি শিম পাইকারী বিক্রি হয় ২৫-৩০ টাকা। প্রতি পিস লাউ ৩০-৪০টাকা। কুমড়া গড়ে প্রতি পিস ৪০-৫০টাকা। এছাড়াও অনেকে কুমড়া, কদু(লাউ)ও মাশকালাই শাক বিক্রি করে অনেক অর্থ উপার্যন করে থাকে। শীত মৌসুমে নদীতে মাছ কম পাওয়া যায়। সবজি বিক্রির টাকা কিছুটা হলে আমাদের চরাঞ্চলের লোকদের আয় রোজগার বাড়ে। এতে আমরা প্রতিদিন চলার সহায়তা হয়ে থাকে।

স্থানীয় ওমর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সফিউল্লাহ সরকার চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, আমি দীর্ঘদিন চরাঞ্চলে আসা-যাওয়ায় দেখেছি, এখানকার মানুষ খুবই কর্মঠ। বছর জুড়ে কোন কোন কাজে জড়িত থাকেন। তবে এখানকার প্রতিটি বাড়ীতে এখানকার নারীদের আপন মনে নিজেদের ইচছায় প্রচুর পরিমানে সবজি উৎপাদন হচেছ। জৈব সার ব্যবহার করায় এখানে বিষমুক্ত সবজির উৎপাদন হচেছ,এ সবজির চাহিদা শহরে অনেক বেশী।

রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হযরত আলী বেপারী চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, চাঁদপুরের চরাঞ্চল নদীভাঙ্গনের কারণে বিছিন্ন হওয়ার কারণে এখানকার বাসিন্দারা কৃষি কাজে তেমন কোন প্রশিক্ষণ পাওয়ার সুযোগ হয়ে উঠে না। তার পরেও পূর্ব পুরুষদের দেখাদেখি তারাও কৃষিকাজ চালিয়ে যাচ্ছে এবং জীবন-জীবিকার জন্য বিভিন্ন প্রকার ফসল উৎপাদন করে থাকে।

এখানকার নারীরা কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে প্রশিক্ষন নিয়ে বাড়িতে সবজি এবং জমিতে একাধিক উচ্চ ফলনশীল ফসল উৎপাদনের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে পারলে চাঁদপুরের চরাঞ্চলে সবজিসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদনের রেকর্ড তারা সৃস্টি করে এদেশের মানুষের কিছুটা হলেও সবজির চাহিদা মিটাতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস। তাই সরকারের সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষ চরাঞ্চলের দিকে নজর দেওয়া একান্ত প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

সিনিয়র স্টাফ করেসপন্ডেট,১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১

Share