সন্দিহান মুনাফিকদের উপমা দিয়ে কোরআন যা বলে

মানুষের সঠিক পথ-নির্দেশের জন্য আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিম নাজিল করেছেন। কুরআনকে আঁকড়ে ধরতে বলেছেন। কারণ যারা কুরআনকে আঁকড়ে ধরবে তাদের কোনো চিন্তা ও ভয় নেই। আর ভয়াবহ শাস্তি রয়েছে তাদের জন্য যারা ইসলামের সুদিনে আকৃষ্ট হয়ে দুর্দিনে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে। দুই শ্রেণীর মুনাফিকদের প্রথম উপমা পরপরই আল্লাহ তাআলা দ্বিতীয় উপমা তুলে ধরেছেন এভাবে-

অর্থ : আর তাদের উদাহরণ সেসব লোকের মত যারা দুর্যোগপূর্ণ ঝড়ো রাতে পথ চলে, যাতে থাকে আঁধার, গর্জন ও বিদ্যুৎচমক। মৃত্যুর ভয়ে গর্জনের সময় কানে আঙ্গুল দিয়ে রক্ষা পেতে চায়। অথচ সমস্ত কাফেরই আল্লাহ কর্তৃক পরিবেষ্ঠিত। বিদ্যুতালোকে যখন সামান্য আলোকিত হয়, তখন কিছুটা পথ চলে। আবার যখন অন্ধকার হয়ে যায়, তখন ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে। যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন, তাহলে তাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি ছিনিয়ে নিতে পারেন। আল্লাহ যাবতীয় বিষয়ের উপর সর্বময় ক্ষমতাশীল। (সুরা বাক্বারা : আয়াত ১৯-২০)

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, অন্তর চার প্রকার- ক. সেই পরিষ্কার অন্তর যা উজ্জ্বল প্রদীপের মতো ঝলমল করে ঈমানদার; খ. ঐ অন্তর যা পর্দায় ঢাকা থাকে কাফির; গ. উল্টো অন্তর খাঁটি মুনাফিক এবং ঘ. মিশ্রিত অন্তর (ঈমান ও নিফাকে সন্দিহান মুনাফিক)। (মুসনাদে আহমাদ)

আলোচ্য আয়াতদ্বয়ে চতুর্থ প্রকারের মুনাফিকের (দ্বিতীয় উপমা) আলোচনা করা হয়েছে। যারা ইসলামের সত্যতায় প্রভাবিত হয়ে কখনো কখনো প্রকৃত মুমিন হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করত কিন্তু দুনিয়ার উদ্দেশ্য হাসিলে তাদেরকে এ ইচ্ছা থেকে বিরত রাখতো। কাজেই তাদের সন্দেহ ও সংশয়ী অন্তর হলো সেই বৃষ্টির ন্যায় যা অন্ধকারে বর্ষিত হয় এবং এর গর্জন ও বিদ্যুৎ চমকে তাদের অন্তরে ভীতির সৃষ্টি করতো। এমনকি ভয়ের কারণে তারা নিজেদের আঙ্গুলগুলো কানের মধ্যে গুঁজে দেয়। কিন্তু এ ব্যবস্থাপনা ও ভয়-ভীতি তাদেরকে আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচাতে পারবে না। কেননা মুনাফিক ও কাফিররা আল্লাহর বেষ্টনীর মধ্য থেকে বের হতে পারবে না।

কখনো সত্যের কিরণ তাদের ওপর পড়লে তারা ইসলামের উজ্জ্বলতা দেখতে পায় তখন তারা ঐ সত্যের কিরণের প্রতি ঝুঁকে পড়ে। আবার যখন ইসলাম ও মুসলিমদের ওপর কঠিন সময় আসে, তখন তারা উদভ্রান্ত ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। মুনাফিকদের এ দল শেষ পর্যন্ত দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও সন্দেহ-সংশয়ের শিকার হয়ে সত্য গ্রহণ করা থেকে বঞ্চিতই থেকে যায়। অত্র আয়াতদ্বয় তাদের উদ্দেশ্যেই নাজিল হয়।

তাই এখানে হুশিয়ারি দেয়া হয়েছে যে, আল্লাহ ইচ্ছা করলে তার সমস্ত যোগ্যতা (শ্রবন শক্তি, দৃষ্টি শক্তি) ছিনিয়ে নিতে পারেন। এ হুশিয়ারি সবার জন্যই প্রযোজ্য। সুতরাং মানুষের উচিত, মহান আল্লাহর আনুগত্য করা এবং তার পাকড়াও করার হুশিয়ারীকে ভয় করা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মুসলিম উম্মাহকে সব ধরনের নিফাকি থেকে হিফাজত করে কুরআন-হাদিস মুতাবিক আমলি জিন্দেগি যাপন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ইসলাম ডেস্ক : আপডেট ০৯ : ০০ এএম, ৯ ডিসেম্বর বুধবার।
ডিএইচ।

Share