আন্তর্জাতিক

সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশের ভূমিকা সন্তোষজনক: যুক্তরাষ্ট্র

সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশ সন্তোষজনক ভূমিকা রেখে চলেছে বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সাথে এক বৈঠকে বাংলাদেশ সম্পর্কে এ মন্তব্য করেন পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তা গিলবার্ট মর্টন।

তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ নিরসনে রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং দেশীয় ও বহুজাতিক সন্ত্রাসী দলগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সরকারের কঠিন অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ সন্ত্রাসের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠতে পারেনি। বাংলাদেশে বড় কোনো সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেনি। সরকারের সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টার কারণে বহুজাতিক সন্ত্রাসী দলগুলো বাংলাদেশের সীমানা ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডও চালাতে পারেনি।

এছাড়া বর্তমান সরকার ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে আগ্রহ দেখিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশ সরাসরি সংশ্লিষ্ট না হয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিভিন্ন সময়ে আইএসএর অনুসারীদের গ্রেপ্তার করেছে।

জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজিবি) এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের অনেক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো।

বৈঠকে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচার ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। এ মুহূর্তে ধর্মীয় উগ্রবাদ, যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাচ্ছে সরকার।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রকে নিয়ে সন্ত্রাস দমনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ শুরু থেকেই ধর্মনিরপেক্ষ ও ঐতিহ্যগতভাবে সব ধর্মের মানুষ বাংলাদেশে শান্তি-সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করে আসছে।

বৈঠকে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বলেন, উল্লেখযোগ্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান সরকার বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার গুণগত মানোন্নয়নে বদ্ধপরিকর।

যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা মুজাহিদের ফাঁসির দন্ড কার্যকর সম্পর্কে স্টেট ডিপার্টমেন্ট এই কর্মকর্তা বলেন, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী ট্রাইব্যুনালের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অত্যন্ত পরিস্কার। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের এই বিচার কার্যক্রমকে সমর্থন করে। বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হোক সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হোক এটা যুক্তরাষ্ট্র চায়। আইন এবং আদালতের রায়ের মাধ্যমে অপরাধীদের সাজা হয়েছে এতে যুক্তরাষ্ট্র সন্তুষ্ট।

সাক্ষাতের সময় গিলবার্ট মর্টন যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার হিসাবে উল্লেখ করে বলেন, সন্ত্রাস মুক্ত জঙ্গিবাদ মুক্ত একটি বাংলাদেশ গড়ে উঠুক যুক্তরাষ্ট্র তা চায়। কোন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে না। বর্তমান সরকারের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশে একটি শান্তিপূর্ণ স্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। এই পরিবেশ ব্যাহত হয় এমন কোন কাজ যুক্তরাষ্ট্র সরকার সমর্থন করবেনা। তবে সব দল ও মতের মানুষকে সুষ্ঠু রাজনৈতিক চর্চা ও মত প্রকাশ করার সুযোগ করে দিতে হবে সরকারকে।

বৈঠকে তিনি বলেন, বাংলাদেশে পর্যায়ক্রমে উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ও দেশের জনগণ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। খুব শিগগিরই বাংলাদেশ একটি মধ্যবিত্ত আয়ের দেশে পরিণত হবে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশের এই উন্নয়ন আর অগ্রগতিকে খুব কাছ থেকে দেখার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে সুসংহত করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সরকার সব ধরনের সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত।

এদিকে বৈঠক শেষে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান জানান, বৈঠক অত্যন্ত ফলপ্রসু হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বাংলাদেশ একটি মধ্যবিত্ত আয়ের দেশে পরিনত হচ্ছে এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার উৎফুল্ল এবং আনন্দিত।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট সবিস্তারে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে তুলে ধরা হয়েছে এবং ওয়াশিংটনে সদ্য অনুষ্ঠিত টিকফা বৈঠকের নানা দিক নিয়েও বৈঠকে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

সিদ্দিকুর রহমান জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের উন্নয়ন আর অগ্রগতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার অত্যন্ত আশাবাদ ব্যক্ত করেছে এবং বাংলাদেশ একটি সন্ত্রাসমুক্ত জঙ্গিবাদ মুক্ত একটি রাষ্ট্র হিসাবে বিশ্বদরবারে পরিচিতি লাভ করবে বলেও স্টেট ডিপার্টমেন্ট কর্মকর্তা গিলবার্ট মর্টন দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

প্রতিনিধি দলে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বসারত আলী, আইরিন পারভিন, শাহানারা রহমান, হিন্দাল বাপ্পা, আবুল কাশেম, মাহমুদুন নবী মোহাম্মদ আজাদ প্রমুখ।

আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০৪:০৫  পিএম, ২৬ নভেম্বর ২০১৫, বৃহস্পতিবার

এমআরআর

Share