নৌ-ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর ঢাকার সদরঘাট থেকে দেশের বিভিন্ন রুটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে লঞ্চ। বিকেলের মধ্যে আরও কয়েকটি লঞ্চ ছাড়বে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ। তবে অধিকাংশ লঞ্চ ছাড়বে সন্ধ্যায়।
ইতোমধ্যে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন রুটে লঞ্চ ছাড়ার প্রস্তুতি চলছে। মাইকে বার বার ঘোষণা করা হচ্ছে নির্ধারিত সময়ে লঞ্চ ছেড়ে যাবে।
সোমবার দুপুরে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, বেলা ২টার দিকে মতিউর রহমান শিপিং লাইন্স মুন্সীগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, খুলনা, বরিশাল, ভোলা, লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন রুটে লঞ্চ ছাড়ার প্রস্তুতি চলছে। শ্রমিকদের একাংশ বলছে, তারা এই অবৈধ কর্মবিরতি মানে না।
এমডি লঞ্চের মালিক সাবেক সংসদ সদস্য শেখ মোহাম্মদ টিপু সুলতান বলেন,নৌযান শ্রমিকরা অবৈধভাবে কর্মবিরতি পালন করছেন। তাদের এই কর্মবিরতির কোনো যুক্তিকতা নেই। আজ সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে সব লঞ্চ ছেড়ে যাবে।। ইতোমধ্যে লঞ্চ ছাড়ার জন্য ঘাটে অনেক লঞ্চ এসেছে।
বরগুনায় যাবেন ইদ্রিস আলী। তিনি বেলা ১টায় লঞ্চ টার্মিনালে পরিবারসহ এসেছেন। বলেন, আমাদের লঞ্চ সন্ধ্যা ৬টার দিকে ছাড়বে। আরেক যাত্রী নাসিফা যাবেন বরিশাল। দুপুর ১২টায় লঞ্চ টার্মিনালে এসেছেন। তিনি বলেন, আমাদের লঞ্চ সন্ধ্যা ৭টার দিকে ছাড়বে। সে আশায় টার্মিনালে এসে বসে আছি। বাকিটা আল্লাহ ভরসা।
নৌযান শ্রমিক সোহেল বলেন, ‘আমরা এ অবৈধ কর্মবিরতি মানি না। আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি।’
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক দীপক কুমার সাহা বলেন, টার্মিনাল থেকে ইতোমধ্যে একটি ছোট লঞ্চ ছেড়ে গেছে। অধিকাংশ লঞ্চ ছাড়বে সন্ধ্যায়। লঞ্চ ছাড়ার জন্য অনেকে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আশা করছি, সন্ধ্যার মধ্যে সব লঞ্চ ছেড়ে যাবে।
এর আগে সোমবার (১৫ এপ্রিল) শ্রম অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নজান সুফিয়ানের সঙ্গে নৌযান মালিক-শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে নেতারা ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। সেই খবরের পরও ঢাকা সদরঘাটসহ দেশের বিভিন্ন নৌবন্দরে অনেকে এসে দেখেন লঞ্চ চলাচল বন্ধ। এতে বিপাকে পড়েন যাত্রীরা।
বিআইডব্লিউটিএর পরিবহন পরিদর্শক দিনেশ কুমার সাহা বলেন, সোমবার রাত ১২টার পর ঢাকা সদরঘাট থেকে কোনো লঞ্চ ছাড়েনি। তবে দক্ষিণাঞ্চল থেকে রাত ১২টার আগে ছেড়ে আসা ৪৩টি লঞ্চ আজ (মঙ্গলবার) ভোরে সদরঘাটে এসে পৌঁছেছে।
তিনি বলেন, সকালে সদরঘাটে অনেক যাত্রী এসেছিল। কিন্তু লঞ্চ না চলায় তারা ফিরে যেতে বাধ্য হন।
এর আগে গত শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে নৌ শ্রমিকদের ১১ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হলে ওইদিন মধ্যরাত ১২টা ০১ মিনিট থেকে কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেন বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ১১ দফা দাবি নিয়ে সরকার, মালিক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানানোর পরও কার্যকরী কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। যে কারণে কর্মবিরতিতে যেতে বাধ্য হচ্ছি আমরা।
শ্রমিকদের ১১ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- নৌপথে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, শ্রমিক নির্যাতন বন্ধ, সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার এবং নৌযান শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। দুর্ঘটনায় কর্মস্থলে কোনো শ্রমিকের মৃত্যু হলে তার পরিবারকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সেই সঙ্গে সমুদ্র ভাতা ও রাত্রিকালীন ভাতা নির্ধারণ করতে হবে।
(জাগো নিউজ)
বার্তা কক্ষ
১৬ এপ্রিল,২০১৯