বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ভোট বর্জন, সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সারা দেশে টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতালে রাজধানীর একমাত্র লঞ্চ টার্মিনাল সদরঘাটে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে যাত্রী খরায় ভুগছে সদরঘাটের লঞ্চগুলো।
আর যাত্রী কম থাকায় লঞ্চও ছেড়েছে কম।
এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন রোববার (০৭ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত হবে।
ফলে অনেকে ভোট দেওয়ার জন্য ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া সদরঘাট ও এর আশেপাশের এলাকা স্বাভাবিক ছিল।
তবে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থায় থাকতে দেখা গেছে।
শনিবার (০৬ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) ভোট বর্জনের আহ্বানে এবং সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সারা দেশে টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতালের ঘোষণা দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শনিবার ভোর ৬টায় শুরু হওয়া এ হরতাল চলবে সোমবার (৮ জানুয়ারি) ভোর ৬টা পর্যন্ত।
সরেজমিনে সদরঘাটে দেখা যায়, টার্মিনালে পল্টুনে সারিবদ্ধভাবে নোঙর করা আছে লঞ্চ। তবে ছিল না যাত্রীদের কোনো শোরগোল। সকাল থেকে বিভিন্ন রুটে নিদিষ্ট সময়ে লঞ্চ ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। তবে লঞ্চগুলোতে যাত্রীর সংখ্যা তুলনামূলক কমছিল। বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চাঁদপুর, নড়িয়া, মৃধারহাট, ইলিশাসহ আটটি রুটে লঞ্চ ছেড়ে গেছে।
চাঁদপুরের ঈদগাঁফেরি ঘাটগামী ইমাম হাসান-২ লঞ্চের ইনচার্জ রবিন্দ্র চন্দ্র দে বলেন, নদীপথে কোনো হরতাল পালন করা হয় না। চাঁদপুর রুটে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। প্রতিদিন যে হারে লঞ্চ চলে সে হারে ঢাকা থেকে লঞ্চ ছেড়ে গেছে। তবে তুলনামূলক যাত্রী কম। যারা যাচ্ছে তারা ভোট দেওয়ার জন্য যাচ্ছে। যাত্রী কম থাকার পরও লোকসান দিয়ে চলতে হচ্ছে। নির্বাচন এলে এরকম হয় সব সময়। বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচির জন্য ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষের। ক্ষতির সম্মুখীন হয় ব্যবসায়ীরা।
বিকেলে ঢাকা থেকে চরফ্যাশনের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে কর্ণফুলী-১২। লঞ্চটির কেরানি বলেন, নৌপথে কোনো অবরোধ-হরতাল থাকে না। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকলে যাত্রী কমে যায়। এছাড়া গত কয়েক মাস ধরে লঞ্চের যাত্রী কমে গেছে। আর আজকেতো আরও কমে গেছে। যারা যাচ্ছে তারা শুধু ভোট দেওয়ার জন্যই যাচ্ছে। অনেকে যাচ্ছে না ভোটের পর যদি ঝামেলা হয় তাহলে ঢাকাতে ফিরতে পারবে না। তখন চাকরি নিয়ে সমস্যা হবে। আসলে সব কিছু মিলিয়ে যাত্রী কমে গেছে।
চাঁদপুরে যাবেন আব্দুল্লাহ তিনি ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। আব্দুল্লাহ বলেন, নির্বাচনের আগে এরকম হরতালের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচি দেয়। এতে সাধারণ মানুষের চলাচলে নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি ভোট দিতে। আমরা পরিবার নিয়ে যাচ্ছি। অফিস থেকে দুই দিনের ছুটি নিয়েছি। ভোটও দেওয়া হবে পিঠা পায়েশও খাওয়া হবে।
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের বিআইডব্লিউটিএর ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মো. হুমায়ুন কবির বলেন, হরতাল হলে সাধারণভাবে যাত্রী কম থাকে। তবে আমাদের লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে হরতালে সদরঘাট এলাকায় কোনো মিছিল বা পিকেটিং করতে দেখা যায়নি। টার্মিনাল এলাকায় শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে।
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের বিআইডব্লিউটিএর কন্ট্রোল রুম থেকে জানা যায়, আজ রাত ১২ থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আটটি রুটে ১৫টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। এরমধ্যে চাঁদপুরে তিনটি, ইলিশায় তিনটি, হাটুরিয়া-২টি, ঈদগাঁ ফেরিঘাটে দুটি, হাকিমউদ্দিন একটি, নড়িয়া-একটি, মুলাদীতে একটি, মৃধারহাটে একটি লঞ্চ গেছে। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের হাতিয়া, চাঁদপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী, ঘোষের হাট, কালাইয়া, ভাষানচর, বেতুয়া, পাতার হাটসহ ১০টি রুট থেকে ঢাকায় লঞ্চ আসছে ১৮টি। অন্যদিকে স্বাভাবিক সময়ে আরও বেশি লঞ্চ ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়। আজকে যাত্রী কম দেখে লঞ্চ কম যাচ্ছে।
টাইমস ডেস্ক/ ৬ জানুয়ারি ২০২৪