চাঁদপুর

সত্য প্রকাশের জের : ‘ভয়ংকর বিপদে’ সিনিয়র সাংবাদিক হেলাল উদ্দিন

চাঁদপুরের মাটিতে জন্ম নেয়া অকুতোভয় কলম সৈনিক সিনিয়র সাংবাদকি হেলাল উদ্দিন। সৎ সাংবাদিকদের কাতারের প্রথম দিকেই তার নামটি প্রকাশ পায়।

দৈনিক যুগান্তরের অর্থনৈতিক সম্পাদক ও স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট সাংবাদিক হেলাল উদ্দিন-এর একটি ফেসবুক স্টাটাস নিয়ে অনলাইনে টক অব দা টাউন।

সাংবাদিক হেলাল উদ্দিন দীর্ঘ ৯ বছর দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছেন। সর্বশেষ তিনি পত্রিকাটির চীফ রিপোর্টারও ছিলেন। সিনিয়র এবং সৎ এই সাংবাদিকের জন্মস্থান চাঁদপুরে।

জানা গেছে, কাস্টমস কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির রিপোর্ট প্রকাশ করায় তিনি এখন তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি তার ফেসবুকে স্টাটাসে যা লিখেছেন তা ‘চাঁদপুর টাইমস’ এর পাঠকদের জন্য হুবহু প্রকাশ করা হলো :

‘ভয়ংকর বিপদে আমি’
যেকোন সময় গ্রেফতার হতে পারি। আর গ্রেফতার হলে জামিন পাবার সম্ভাবনা একদম নেই। কয়েকমাস জেল হাজত নিশ্চিত। আগাম জামিন নেয়া যায়। কিন্তু হাইকোর্টে নির্বাচন এবং অবকাশ। এখন হাইকোর্ট বন্ধ। খুললে জামিন পেতে পারি। কিন্তু গ্রেফতার হলে জীবন শেষ। অথচ আমি কোন অপরাধ করিনি। পেশাগত কারণে মামলা হবে এটা স্বাভাবিক। সাংবাদিকতায় মামলার আসামী হননি এমন নজির কম। কিন্তু এবার জামিন অযোগ্য ধারায় কাল্পনিক অভিযোগ এনে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা হয়েছে। যেখানে আমার পেশার উল্লেখ নেই। বাদি উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, কাস্টম কমিশনার। তবু পরিচয় গোপন করে মামলা করেছেন। আমি নাকি ২০১৩ সালে এবং এখনো তার কাছে ২ কোটি টাকা চাদা দাবি করছি। প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছি। ইন্টারনেটে তার নগ্ন ভিডিউ প্রকাশ করেছি। ইত্যাদি। —–। অথচ উল্লেখ নেই আমি একজন সিনিয়র সাংবাদিক। তার বিরুদ্ধে একাধিক রিপোর্ট করেছি। সমকাল, জনকন্ঠ, ইত্তফাকসহ অনেক পত্রিকায় রিপোর্ট হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন অনুসন্ধান করে কাস্টম বন্ড কমিশনার হাফিজুর রহমানের শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদসহ মানিলন্ডারিং এর অকাঢ্য প্রমাণ পেয়েছে। তার সম্পদ বিবরনী তলব করা হয়েছে। এখন মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
অপরদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) তদন্ত করে তার দুর্নীতি, কেলেংকারি, অর্থপাচারেরেএকাধিক অভিযোগের পুরো সত্যতা পায়। এরপর অর্থমন্ত্রীর নির্দেশে কাস্টম কমিশনার হাফিজুর রহমানকে চাকুরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এরপর থেকেই এই দুর্নীতিবাজ কমিশনার আমার প্রতি প্রচন্ড খাপ্পা ।
কয়েকমাস আগে এই হাফিজুর সমকাল, জনকন্ঠ এবং যুগান্তরকে উকিল নোটিশ পাঠায়। এসব পত্রিকাকে ক্ষমা চাইতে বলা হয়। কিন্তু এখন মামলা হয়েছে শুধু আমি, নির্যাতিত সেই মেয়ে এবং রহস্যজনকভাবে হাফিজের সবচে ঘনিষ্ট বন্ধু লাবুকে আসামী করে। এই লাবুকে আমি কখন দেখিনি। অথচ সে নাকি আমার সহযোগী!!!-।

কাস্টম কমিশনার হাফিজুর রহমানের নারী কেলেংকারি, নজিরবিহীন দুর্নীতির প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালে। সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত প্রখ্যাত সাংবাদিক জুগলুল চেৌধুরী ভাই একদিন ফোন করলেন, হেলাল, দেখতো আমার এক ভাইস্তির সংগে কাস্টমসের কোন উচ্চ পদের কর্মকর্তা অনৈতিক কাজ করেছে। বিয়ের আশ্বাস দিয়ে স্বামীস্ত্রির মত কাটিয়ে এখন অস্বীকার করছে। তুমি দেখতো কি করা যায়।
এরপরই ফোন করে সুস্মিতা নামের একজন। তার বক্তব্য অনুযায়ী প্রায় ১১ বছর শান্তিনিকতনে লেখাপাড়া শেষে দেশে ফিরে এই হাফিজুরের খপ্পরে পড়ে। বিয়ের আশ্বাস দিয়ে স্বামীস্ত্রির মত বসবাস করে দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। কাজি অফিসে ডেকে নিয়ে বাবামা আত্মীয় স্বজনের উপস্থিতে বিয়ের নাটক করে পালিয়ে গেছে। মেয়েটা আত্মহত্যার চেষ্টা করে বেচে গেছে। সে ভিন্ন কাহিনী। অনেক পত্রিকায়ই রিপোর্ট উঠেছে।
আমার জন্যে সবাই দোয়া করবেন। তবে আমার বিশ্বাস কোন অন্যায় করিনি। তাই ন্যায় বিচার পাবো’

তার এই স্টাটাসটির নিচে ফেসবুক পাঠকদের উল্লেখযোগ্য কিছু কমেন্ট-

Shephali Rahman জানিয়েছেন ‘
জোর যার মূলক তার। যেখানে মানুষের জীবনের কোন মুল্য নেই সেখানে ন্যায় বিচারের আশা করা যায়না। দোয়া করছি আল্লাহ যেন সহায় হন।‘

Jubaer Ahsan Zaber জানিয়েছেন
‘কারো চেহারা খারাপ থাকলে আয়না তো আর ভালো চেহারা দেখায় না। সাংবাদিকরা সমাজের আয়না। সেক্ষেত্রে দুর্নীতিবাজ আর অসৎ ব্যক্তিরা আয়নার ওপর রাগ করছেন।
আসুন দুর্নীতিবাজদের সর্বক্ষেত্রে বয়কট করি।‘
Harunur Rashid Khan জানিয়েছেন ‘
হেলাল…অনেক অনেক ঝুঁকির মধ্যে রিপোর্ট করেছ আর দূর্নীতিগ্রস্ত ও অনৈতিক লোকের হুমকিতে বা মামলায় ঘাবড়াবে কেন…কোন সমস্যা হবেনা আমার মনে হয়…আমাদের সবার সহমর্মিতা আছে তোমার সাথে …।

Shepon Habib জানিয়েছেন

হেলাল ভাই….আপনি অনেক সাহসী মানুষ। ভদ্র মানুষ। মানুষকে ভালোবাসেন। মানুষই আপনার হাতিয়ার। দেশের মানুষ এটা কখনই মেনে নেবে না। দেশে দূর্নীতিবাজদের ঠাই হতে পারে না। দূর্নীতিবাজদের বিজয় কখনও হয়নি।…আমরা আছি, আপনার পাশে, থাকবো। আপনি তা নিয়ে চিন্তা করবেন না। ভালো মানুষ, সৱ মানুষের উপর বিপদ ঠিকেনি। ঠিকবেও না। আল্লাহ আছেন, তিনি ন্যায় বিচারক।

Mizanur Rahman Rana জানিয়েছেন

আপনার প্রতি আমাদের সহমর্মিতা। আশা করছি সত্য প্রকাশ হবেই, আর মিথ্যার ধ্বংস অনিবার্য …

Swapan Saiful আপনি সিনিয়র সাংবাদিক আপনার এ অবস্থা, আর জুনয়ির সাংবাদিকদের কি অবস্থা তা কি বুঝেন, আর জেলা র্পযায়ে যারা কাজ করে তাদের কি হাল।

Khomenee Ehsan জানিয়েছেন
যদি যুগান্তরসহ অন্য সংবাদমাধ্যম এ ব্যাপারে শক্ত পদক্ষেপ নেয় তবে কিছু হবে না। আপনার অফিসের কবিরকে বলবেন ও জামিনের বিষয়টা দেখতে পারবে, অবকাশকালীন ছুটিতে অসুবিধা হবে না। সাংবাদিকদের ফোরামগুলোর বিবৃতিও প্রয়োজন। আর জেলখানাকে ভয় পাওয়ার কিছু নাই, ভেতরে থাকা-খাওয়ার ভাল ব্যবস্থা আছে। কুচক্রী লোকটার বিরুদ্ধে আপনাদের প্রতিনিধিদের দিয়ে মামলা করাতে পারেন। আমাদের বিপদে কেউ খবরও নেয় নাই, কিন্তু আপনার বিপদে সংহতি জানাই।

সাংবাদিক হেলালের সঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যানের আচরণের নিন্দা

জাতীয় দৈনিক যুগান্তরের বিশেষ প্রতিনিধি হেলাল উদ্দিনের সঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন অভিযোগ করে তার নিন্দা জানিয়েছে সাংবাদিকদের দুটি সংগঠন।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) এবং ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) এক যৌথ বিবৃতিতে এজন্য এনবিআর চেয়ারম্যানকে ক্ষমা চাওয়ার দাবিও জানিয়েছে।

বুধবার ডিআরইউ ও ইআরএফের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, “মঙ্গলবার  এনবিআর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নজিবুর রহমান যুগান্তরের বিশেষ প্রতিনিধি হেলাল উদ্দিনের সঙ্গে ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ আচরণ করেছেন। নিজ কার্যালয়ে আমন্ত্রণ জানিয়ে সাংবাদিকদের সাথে এনবিআর চেয়াম্যানের এই দুর্ব্যবহার এবং অকথ্য ভাষায় আক্রমণ গোটা সাংবাদিক সমাজকে মর্মাহত ও ব্যথিত করেছে।

“এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছ থেকে এমন আচরণ মোটেই কাম্য নয়। তার এ ধরনের আচরণ সরকারি চাকুরি বিধিমালারও লংঘন।”

এনবিআরের মত  গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের এই আচরণ ‘মুক্ত স্বাধীন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠার অন্তরায়’ বলেও বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

এতে বলা হয়, “এ ঘটনায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে নিঃশর্তভাবে ক্ষমা চাওয়ার জন্য  রোববার পর্যন্ত সময় দেয়া হল। এ সময়ের মধ্যে  নিঃশর্ত ক্ষমা ও তার কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে আগামী সোমবার সংগঠন দুটির যৌথ সভা থেকে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।”

 

নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০২:২২ পিএম,  ১৭ মার্চ  ২০১৫, রোববার

এমআরআর

Share