চাঁদপুর

একজন জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল

জাতীয় পর্যায়ে দেশের শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক শিক্ষিকা চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার কৃতি সন্তান নুরুন নাহার বকুল। ব্র্যান্ডিং জেলা ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ এর রূপকার সাবেক জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন। চাঁদপুর টাইমস পাঠকদের জন্যে তা তুলে ধরা হলো।

“শিক্ষকের মর্যাদা” কবিতাটি পড়েছি বহুবার। এখন শিশুদের তা আবৃত্তি অনুশীলন করাই। কিন্তু মনে মনে বাদশাহ আলমগীরকে খুঁজে বেড়িয়েছি। পেশাগত জীবনের ঘূর্ণিপাকে এতো সহজে আমি সেই “বাদশাহ আলমগীর”এর সন্ধান পাবো,ভাবিনি ঘূনাক্ষরেও!

কিছু “কষ্ট “সৌভাগ্যের বাহনও হয়।তেমনি একটা কষ্টই এই মানুষটির ভিতরকার “বাদশাহ আলমগীর”কে আমার সামনে হাজির করেছে।

পেশাগত জীবনের ২৮ বছরে অনেক জেলা প্রশাসক মহোদয় দেখেছি,,তাঁদেরকে “জেলা প্রশাসক”এর সীমানা ডিঙিয়ে অন্যকিছু ভাবার অবকাশ আমার মত নগন্যের হবে কী করে!”

লেখকের ফাইল ছবি

প্রাথমিকের একজন সহকারী শিক্ষক আমি।একজন জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিকট পরিচিতি পাওয়ার যোগ্যতা কোথায় আমার!
কিন্তু-জাতি গড়ার কাজে নিবেদিত বলেই ২০১৫ এ শিশুদের এক প্রতিযোগিতায় স্যার এর সঙ্গে পরিচয় এবং একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে স্যার এর সাথে কালজয়ি সেই গান””মানুষ মানুষের জন্য” এ গলা মিলিয়েছিলাম।

তখনও উপলব্ধি করা হয়নি এই মানুষটির মাঝেই সেই “বাদশাহ আলগীর”এর ব্যাস।

০২ অক্টোবর,২০১৬ এ এসে উপলব্ধি করেছি -“একজন জেলা প্রশাসকের অন্তরালে তিনি দায়িত্বশীল পিতা,একজন স্নেহ পরায়ণ ভ্রাতা, নারীর মর্যাদা রক্ষকও!
একদল স্বার্থবাদির অশুভ তৎপরতায় অযাচিত ঘটনা আমাকে যখন স্তব্ধ করেছে, তখন আমি এ জগতটা ছেড়ে নিভৃত্বেই বাঁচার পণ করি। একটা অভিমান ছিল আমার, প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারের কেউ আমার সাথে এমন অন্যায় আচরণ করেছেন বলে। অভিযোগটা কী জানিনি তখনও।

ঠিক সেই সময়ে দেবদূতের মতই আমাদের সম্মানীয় জেলা প্রশাসক(বর্তমান যুগ্ম সচিব) মহোদয় তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে আমাকে ডেকে নেন, পরম স্নেহ-মমতায় আমার শিক্ষকতার মূল্য দিলেন আর বললেন,-“বকুল, আপনাকে স্যেলূট! সমাজের একদম মূল থেকে উঠে এসেছেন যুদ্ধ করে। আপনার কাজের প্রতি আমি সম্মান জানাই।

আপনি স্কুলে থাকুন-কাজ করুন আগের মত, বাকিটা আমি দেখছি।”পরিশেষে ‘ইউ মে গো নাউ’ বলে বিদায় দিলেন। এছাড়া আমার ব্যাপারে চাঁদপুরবাসীর সহমর্মিতার কথাও জানালেন।

ঘুরে দাঁড়ালাম, মন থেকে ঝেড়ে ফেললাম সমস্ত অভিমান। কাগজে-কলমে চাকরির বাইরে থেকেও স্কুল ছাড়িনি বরং আরো বেশি সময় দিয়েছি সোনামনিদের, এই কষ্ট ভুলে থাকার জন্য।

বাকিটা জানেন সবাই। কাগজি আদেশ পেয়েছি চারমাস পর।ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস পেয়েছি নগন্য এই আমি সেই জেলা প্রশাসক রূপী “বাদশাহ আলমগীর”কর্তৃক সম্মান প্রদর্শনের জন্যই।

চাঁদপুর ছেড়ে গেলেন মহান এই মানুষটি। স্যার, আপনি যখন, যেখানেই থাকুন,,মহান সৃষ্টিকর্তা আপনার সুস্থ ও সুখি জীবন দান করুন।

আমার সেই অযাচিত কষ্টের দিনে পাশে থেকে সাহস যুগিয়ে আমাকে স্বসম্মানে ফিরে আসতে সহায়তা দেয়ায় আমার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মহোদয়গনসহ পুরো চাঁদপুরবাসীর প্রতি আবারও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

লেখকের ফেসবুক ওয়াল থেকে সংগৃহীত

Share