পায়রা বন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত, হুমকিতে কুয়াকাটা বে‌ড়িবাঁধ

উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত লঘুচাপটি বর্তমানে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সুস্পষ্ট লঘুচাপ হিসেবে অবস্থান করছে। এর প্রভাবে বৃ‌ষ্টির সঙ্গে ঝ‌ড়ো হাওয়া বিরাজ করায় পটুয়াখালী কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর বেশ উত্তাল রয়েছে। বাতাসের চাপ ও পানির উচ্চতা ৩ থেকে ৪ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কোনও সময় পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। তাই পায়রা বন্দরে স্থানীয় তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।

এদিকে বড় বড় ঢেউ কুয়াকাটা উপকূলে আছ‌ড়ে পড়ছে। এতে কুয়াকাটা বেশিবাঁধ হুমকির মুখে রয়েছে। সৈকত রক্ষার ও‌ভেন জি‌ওটিউব উপ‌চে বড় বড় ঢেউ আছ‌ড়ে পড়তে দেখা গেছে। পা‌নি উন্নয়ন বো‌র্ডের নির্বা‌হী প্রকৌশলী ই‌ঞ্জি‌নিয়ার মো. হা‌লিম সা‌লে‌হী বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করেছেন। তি‌নি জানান, কুয়াকাটা সৈকত রক্ষায় জরুরি মেরাম‌তের জন্য অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হ‌বে শিগগিরই।

গ্রিন ট্যুরিজমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হোসেন রাজু জানান, সাগরে অন্তত এক কিলোমিটার জায়গা বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন রোধে জরুরি পদক্ষেপ না নিলে কিছুদিনের মধ্যেই বেড়িবাঁধটিও ভেঙে যাবে।

স্থানীয় ইমরান হোসেন জানান, কুয়াকাটা উদ্যান থেকে অনেক দূরে সাগর ছিল। কিন্তু এখন এ উদ্যানই সমুদ্রে বিলীন হয়ে গেছে। এই উদ্যানে একসময় বিভিন্ন পশুপাখি দেখা যেতো। উদ্যানের অন্যতম সৌন্দর্য ছিল ঝাউগাছ। এছাড়াও সুন্দরি, হিজল, করমজা, অর্জুন, বাইন, আসামলতা, স্বর্ণলতা ইত্যাদি প্রজাতির গাছ নজরে আসতো। আজ সবই বিলীন হয়ে গেছে।

পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর হোসেন বলেন, আমারা জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সৈকত পরিদর্শন করেছি। বর্ষা মৌসুমের আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড যে টিউবগুলো দিয়েছে তাতে কিছুটা হলেও সৈকতে বালু ক্ষয় রোধ হয়েছে। তবে তারা যদি তার কাছাকাছি আরও একটি টিউব দিয়ে দেয় তাহলে সৈকতকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।

এ বিষয় কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, কুয়াকাটা পৌরসভায় সৈকত রক্ষায় কোনও বাজেট নেই। সৈকত রক্ষায় এই টিউব দিয়ে হয়তো সাময়িক রক্ষা হবে, কিন্তু টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা জরুরি। দুই কিলোমিটার পর পরে যদি বাঁধের একটা ব্যবস্থা করা হয় তাহলে কুয়াকাটা পূর্বের রূপ ফিরে পাবে।

পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হালিম সালেহী বলেন, কুয়াকাটা সৈকত রক্ষায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করে যাচ্ছে। পটুয়াখালীর এই পর্যটন এলাকাটি ঘূর্ণিঝড় ইয়াস, আমফান ও বুলবুলসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত। ইয়াসের পরে ৭৪ সেন্টিমিটারের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। এর পরেও আরও দুটি নিম্নচাপ অতিবাহিত হয়েছে। দুটোতেই পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে অতিক্রম হওয়ায় কুয়াকাটা তীর বরাবর কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় অস্থায়ীভাবে হলেও মেরামতের ব্যবস্থা যদি করা হয় তাহলে বর্ষা মৌসুমে স্ট্রাকচারগুলো রক্ষা করা সম্ভব হবে।

ইয়াসের পরবর্তী সময় থেকে অনেক প্রতিনিধি দল ও অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে পরিদর্শন করেছে। আমরাও বিভিন্ন সময় রিপোর্ট করেছি। সর্বশেষ জুলাই মাসের ১৭ তারিখে প্রিঅ্যাসেটমেন্ট কমিটি এসেছিল তাদের কাছে একটি প্রস্তাবনা দিয়েছি যে, জিও ব্যাগ ও জিও টিউব দিয়ে পার বরাবর ডিসি পার্ক পর্যন্ত একটা প্রোটেকশন দেওয়ার জন্য। ইতোমধ্যে একটি ডিবিপি জমা দিয়েছি। বরাদ্দ পেলে স্থায়ী কিছু হবে বলে জানান তিনি।

আবহাওয়া ডেস্ক, ৩০ জুলাই ২০২১

Share