এবার সব নায়িকাই আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত মহিলা আসনে এমপি হতে চান। নায়িকাদের দৌড়ঝাঁপ এখন সবখানে। যে কোনো অনুষ্ঠান থেকে নেতাদের বাড়ির দরজা খুললেই নায়িকারা মেকআপ দেওয়া সাজগোজ করা হাসিমুখ নিয়ে হাজির। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের ক্ষমতায় আসার পূর্বাভাস পেয়ে কিছু দিন থেকেই সিনেমা ও নাটকপাড়ার নায়িকারা ভিড় করেন আওয়ামী লীগে।
একাদশ নির্বাচনে বিশাল বিজয় অর্জন করে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ এবার ৪৩ জন মহিলাকে সংরক্ষিত আসনে এমপি করবে। এ খবরে নায়িকাদের ঢেউ উঠেছে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন যুদ্ধে। এমনকি বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে যারা ছিলেন জাসাস বা জিসাসে সক্রিয়, ছিলেন হাওয়া ভবনের মুখ, এমনকি গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের বান্ধবী সেই নায়িকারাও এখন রাতারাতি জার্সি বদলে আওয়ামী লীগ হয়ে দলের মহিলা এমপি হওয়ার দৌড়ে নেমেছেন। এফডিসি ও নাট্যপাড়া এখন নায়িকাশূন্য। সবাই নেতাদের বাড়িতেই নয়, দলের কার্যালয়েও ভিড় জমাচ্ছেন। এফডিসিতে আসা-যাওয়া করেন বা মডেলিংয়ে যুক্ত তারাও দৌড়ঝাঁপ করছেন। আওয়ামী লীগের বড় জয়ের পর মৌমাছির মতো সবাই আওয়ামী লীগে ভিড় করছেন। শুটিংয়ে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তাদের। ইতিমধ্যেই মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন কমপক্ষে ২০ জনের বেশি নায়িকা।
রুপালি পর্দায় সাড়াজাগানো নায়িকা মিষ্টি মেয়ে কবরী দীর্ঘদিন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত। ২০০৮ সালে সংসদে সরাসরি ভোটে এমপি হয়েছিলেন। এবার তিনি মহিলা আসনে এমপি হতে চান। শহীদ বুদ্ধিজীবী শহিদুল্লাহ কায়সার ও সাবেক এমপি পান্না কায়সারের মেয়ে অভিনেত্রী শমী কায়সারও দীর্ঘদিন থেকে এ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি এবার মনোনয়নপ্রত্যাশী। চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা, মৌসুমী ছাড়াও মনোনয়ন চান সুজাতা, পপি, অরুনা বিশ্বাস, অপু বিশ্বাস, মুক্তি, আনোয়ারা, শাহনূর, ফাল্গুনী হামিদ, রোকেয়া প্রাচী, তারিন জাহান, জ্যোতিকা জ্যোতি, চয়নিকা চৌধুরী, সুইটিসহ পার্শ্ব চরিত্রের অভিনেত্রী, মডেল, র্যাম্প মডেলরাও।
জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাবুল আহমেদ জানান, আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী নায়িকাদের বেশিরভাগ তাদের সংগঠনে ছিলেন। অন্যদিকে জিয়া সাংস্কৃতিক সংগঠনের (জিসাস) সভাপতি আবুল হাশেম রানা বলেন, অনেকে শুধু আমাদের সঙ্গেই ছিলেন না, জিয়া স্বর্ণপদকও নিয়েছেন। এখন সময়ের প্রয়োজনে তারা আওয়ামী লীগে গেছেন। সময় হলে আবার ফিরবেন। তিনি বলেন, আমার সংগঠনের সাবেক নেত্রী এখন আওয়ামী লীগের নির্বাচিত এমপিও হয়েছেন।
এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের জন্য দুই দিনে ১০৫০টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলটির উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া গতকাল সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে প্রথম দিন মঙ্গলবার ৬২৪টি ফরম বিক্রি হয়। দ্বিতীয় দিন বুধবার সকাল ১০টা থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা নেওয়া শুরু হয়।
প্রতিটি ফরমের মূল্য ৩০ হাজার টাকা ধরে এ খাত থেকে এ পর্যন্ত ৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা আয় করেছে দলটি। সংরক্ষিত আসনের এই মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমাদান কার্যক্রম চলবে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। এরপর দলের সংসদীয় বোর্ডের সভায় মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে। এরপর ওই মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেবে দলের হাইকমান্ড। আইন অনুযায়ী, সাধারণ নির্বাচনের ফলের গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। গত ১ জানুয়ারি গেজেট হয়েছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীদের। এ হিসেবে আগামী ১ এপ্রিলের মধ্যে সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের ভোট করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি)।
আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের সূত্র জানিয়েছে, রুপালি পর্দার ঝলসে ওঠা তারকা নয়, দলের সংরক্ষিত নারী আসনে গুরুত্ব দেওয়া হবে মাঠের ত্যাগী পরীক্ষিত নারীনেত্রীদের। যারা দলের চরম দুর্দিনে জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন। আন্দোলন-সংগ্রামের মাঠে সক্রিয় থেকেছেন। জেল-জুলুম, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এমন নারীদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। একই সঙ্গে সমাজের আলোকিত নারীদেরও দেওয়া হবে মনোনয়ন। মন্ত্রিসভার মতোই সংরক্ষিত নারী আসনে চমক দিতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন তিনি।
এদিকে বুধবার সকালে মনোনয়ন বিতরণ ও জমাদান কার্যক্রম মনিটরিং করতে যান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। মনিটরিং শেষে বের হয়ে যাওয়ার পথে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন, দলের জন্য যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন মনোনয়নে তারা অগ্রাধিকার পাবেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। তেমনি অর্ধেক ভোটারও নারী। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে নারীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। নির্বাচিত প্রতিনিধি হতে জনগণের খেদমত করার জন্য তাদেরও আকাক্সক্ষা থাকে। তারাও সংসদে যেতে চান। এ কারণে সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য তারাও বেশি আগ্রহী। ফলে উৎসবমুখর পরিবেশে মনোনয়ন ফরম বিক্রি হচ্ছে। (বিডি প্রতিদিন)
বার্তা কক্ষ
১৭ জানুয়ারি,২০১৯