‘ ডায়াবেটিস-সু-স্বাস্থ্যই হোক আমাদের অঙ্গীকার ’ এবারের এ প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে চাঁদপুরে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে রোড শো ও বিনামূল্যে ডায়াবেটিস রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা সেবা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন,‘ চলেন আমরা সবাই ডায়াবেটিসের ব্যাপারে সচেতন হই। আমরা সচেতন হলেই ডায়াবেটিস রোগকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।’ সারা বিশ্বেই ২০০৭ সাল থেকেই এদিনটি বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এ রোগটিতে প্রতি ১৪ জনে একজন আক্রান্ত হচ্ছে এটা অনেকেই জানেন না। আমরা একটা সময় দেখতাম রাত যখন ১০ টা বাজতো,তখন সবাই আমরা ঘুমিয়ে যেতাম, কিন্তু এখন দীর্ঘ সময় ধরে রাত জেগে থাকি। রাত জেগে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকি। এ রাত জেগে ঘুমিয়ে সকালে দেরিতে ঘুম থেকে উঠার কারণে বর্তমানে এ ধরনের রোগীর পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। ’
এছাড়াও তিনি বলেন,‘ আমাদের চাঁদপুরে কোথাও হাঁটার জায়গা নেই। ডায়াবেটিক আক্রান্ত রোগীদের নিয়মিত হাঁটতে হয়। তাই চাঁদপুরে একটি সুন্দর পরিবেশ দরকার আছে হাঁটার জন্য। ’
১৪ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯ টায় চাঁদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতাল প্রাঙ্গণে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবসে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক ও চাঁদপুর ডায়াবেটিস সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মোহসিন উদ্দিন,বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার ও চাঁদপুর ডায়াবেটিক সমিতির সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আবদুর রকিব পিপিএম।
চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব বলেন,‘ ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে আজকের এ রোড-শো করার একটাই লক্ষ্য সেটি হলো আমাদের সকলের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। আমরা যদি সবাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সচেতন হতে পারি,তাহলেই ডায়াবেটিস থেকে বাঁচতে পারি। মূলত:বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস হল বিশ্বজুড়ে ডায়াবেটিস সম্পর্কে বিশ্বময় সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি ক্যাম্পেইন, যা প্রতিবছর ১৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। ’
বিশ্বজুড়ে ডায়াবেটিস রোগ ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায়,বিশ্ব ডায়াবেটিস ফেডারেশন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৯১ সাল-এ ১৪ নভেম্বরকে ডায়াবেটিস দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এদিন বিজ্ঞানী ফ্রেডরিক বেনটিং জন্ম নিয়েছিলেন এবং তিনি বিজ্ঞানী চার্লস বেস্টের সঙ্গে একত্রে ইনসুলিন আবিষ্কার করেছিলেন। ২০০৭ সালে সিদ্ধান্ত হয়, ডায়াবেটিস প্রতিরোধ অভিযান পরিচালনার থিমটি আরও দীর্ঘ সময় ধরে থাকবে। বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস ২০০৭-০৮ এর থিম নির্ধারিত ছিল ‘শিশু ও তরুণদের মধ্যে ডায়াবেটিস’। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালের থিম নির্ধারিত হয়েছে, ‘ডায়াবেটিস শিক্ষা ও প্রতিরোধ’।
২০০৭-০৮ সালে এ অভিযানের মূল লক্ষ্য হলো-আরও বেশি শিশু ও তরুণকে এই পরিচর্যার আওতায় আনা। ডায়াবেটিসের জরুরি সংকেত সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা। এ রোগের একটি জটিলতা ‘ডায়াবেটিক কিটো এসিডোসিস’ হ্রাস করার উদ্যোগ উৎসাহিত করা। আর শিশুদের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধের জন্য স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনকে আরও জনপ্রিয় করে তোলা। এ দিবসের নীল বৃত্তের ‘লোগো’টি ডায়াবেটিসকে পরাভূত করার জন্য বিশ্বব্যাপী লড়াইয়ের সূচক। লক্ষ্য হলোঃ পৃথিবীতে কোনো শিশুই যেন ডায়াবেটিসে মারা না যায় ডায়াবেটিসের মতো ক্রনিক রোগ ব্যক্তি,পরিবার,দেশ, এমনকি সারা পৃথিবীর জন্য গুরুতর ঝুঁকি বহন করে-এমন সত্যটি জাতিসংঘ অনুধাবন করে ২০০৬ সালে একে জাতিসংঘ দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।
পৃথিবীতে ২৫০ মিলিয়ন লোক ডায়াবেটিস নিয়ে জীবন যাপন করছে। হাসপাতালের আইটি কর্মকর্তা উজ্জ্বল হোসাইনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে রোড শো ও ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প উপস্থিত ছিলেন আজীবন সদস্য স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা.সৈয়দা বদরুন নাহার,আজীবন সদস্য এমএ মাসুদ ভূঁইয়া,সুভাষ চন্দ্র রায়,ডা.এস এম সহীদ উল্লাহ,ডা.সৈয়দ নূরুল হুদা, তমাল কুমার ঘোষ,অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন, তমাল কুমার ঘোষ,ডা.এস এম মোস্তাফিজুর রহমান,শেখ মনির হোসেন বাবুল,এড.রুহুল আমিন সরকার, অ্যাড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, মাহমুদা খানম, মো.হযরত আলী, ডা.মো.সাইফুল ইসলাম সোহেল,খোরশেদ আলম পাটোয়ারী কাঞ্চন,মফিজ উদ্দিন সরকার, রহিমা বেগম কল্পনা, শেখ মহিউদ্দিন রাসেল, গোপাল চন্দ্র সাহা, হাসপাতালে চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সেবা প্রার্থীগণ।
অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন হাসপাতালের আইটি কর্মকর্তা উজ্জ্বল হোসাইন,সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল আজম। এদিন হাসপাতালে বিনামূল্যে ২শ ৬ জনকে ডায়াবেটিক পরীক্ষা । হাসপাতালের বাইরে ৩ শ ৫৮ জনকে বিনামূল্যে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা হয়। এদের মধ্যে নতুন শনাক্ত হয়েছে ৩৭ জন।
আবদুল গনি
১৪ নভেম্বর ২০২৪
এজি