সরকারি-বেসরকারি,আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, দপ্তর-অধিদপ্তর সংস্থায় সচিব নামে কোনো পদ থাকবে না। যেসব প্রতিষ্ঠানে ইতিমধ্যে সচিব নামের পদ রয়েছে সেগুলোর ক্ষেত্রে দ্রুত আইন সংশোধন করে পদবী পরিবর্তনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ নির্দেশনা জারি করেছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.শেখ ইউসুফ হারুন সাংবাদিকদের জানান, মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ছাড়া আর কোনো প্রতিষ্ঠানে সচিব নামে পদ থাকবে না। এতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে প্রতীয়মান হয়। অনেকে পুরোটা উল্লেখ না করে নিজেকে সচিব বলে পরিচয় দেন। এটা অনেক ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি তৈরি করে।
এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন,মন্ত্রণালয় বিভাগে কর্মরত সহকারী সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিবদেরও কেউ কেউ নিজেদের সচিব বলে পরিচয় দেন—এমন খবর পাওয়া যায়, এটি অনৈতিক। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় বিভাগের বিদ্যমান ব্যবস্থায় কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। শুধু মন্ত্রণালয়ের বাইরে মাঠ পর্যায়ে যেসব সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেসব ক্ষেত্রে সচিব নামে পদ থাকবে না।
এখন ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে সিটি করপোরেশন, শিক্ষাবোর্ড, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন, মেট্রোপলিটন চেম্বার, জেলা পরিষদ, পৌরসভা, বিভিন্ন সংস্থা, করপোরেশন—এ ধরনের অনেক ক্ষেত্রে সচিব নামে পদ রয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে মুখ্য পদটি সচিবের। এ ধরনের ব্যবস্থা আর থাকবে না। তবে নাম পরিবর্তিত হলেও বেতন স্কেলের কোনো পরিবর্তন হবে না।
জানা যায়,বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজের অনেক শিক্ষক তদবির করে শিক্ষা অধিদপ্তর ও শিক্ষাবোর্ডগুলোতে পদায়ন পান। পাঠ্যপুস্তকবোর্ডসহ শিক্ষা বোর্ডগুলোতে সচিব ও উপসচিব নামের পদ আছে। এসব পদে যোগ দিয়েই শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা নিজেদের শিক্ষাসচিব পরিচয় দেয়া শুরু করেন। প্রথমেেই শ্বশুরবাড়ি ও আত্মীয়-স্বজনদের কাছে নিজেকে শিক্ষা সচিব হিসেবে জাহির করেন। এভাবেই বিভ্রান্তির উৎপত্তি হয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র।শুরু হয় বিভ্রান্তি।
কয়েকবছর আগে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন সচিব মাতাল অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হন রাজধানীর একটা পাঁচ তারকা হোটেলের সামনের ফুটপাতে। গুলি খাওয়ার পর তার সঙ্গীয় মাসুদা ও অদ্বৈত কুমারসহ শিক্ষা ক্যাডারের অন্যান্যরা গুলিবিদ্ধ শাহেদকে শিক্ষাসচিব হিসেবে পরিচয় তুলে ধরেন সেখানে দায়িত্ব পালনরত পুলিশদের কাছে। এতে পুলিশরা শাহেদের চিকিৎসার জন্য তাড়াহুড়ো করেন, কিছুটা আতঙ্কও ছড়িয়ে পড়ে।
গভীর রাতে পুলিশ কর্মকর্তাদের অনেকে শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র পত্রিকা দৈনিক শিক্ষায় ফোন দিয়ে নিশ্চিত হতে চান শাহেদ আদৌ বাংলাদেশের শিক্ষাসচিব কি-না? পরে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে হাসিঠাট্টার রোল পড়ে যায়। সবাই বলাবলি করেন, গুলি খেয়ে শিক্ষাসচিব বনে গেলেন শাহেদ!
এমনকি খলিলুর রহমানও শ্বশুরবাড়ী ও বেসরকারি শিক্ষকদের কাছে নিজেকে উপ-সচিব পরিচয় দেন। বোর্ডগুলোতে উপ-সচিব পদে থাকা সরকারি কলেজ শিক্ষকরাও নিজেদের সচিব পরিচয় দেন।
দুর্নীতির দূর্গখ্যাত শিক্ষা ভবনের পরিচালক ও উপপরিচালকদের অনেকেই নিজেদের শিক্ষাসচিব পরিচয় দেন। যদিও সেখানে সচিব বা উপসচিবের কোনো পদ নেই।
এছাড়া এমপিওভুক্ত একজন স্বঘোষিত কারিগরি শিক্ষক নেতাও তার গাড়ীতে সরকারি লোগো ব্যবহার করেন এবং নিজেকে শিক্ষা মন্ত্রলয়ের বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের সচিব পরিচয় দেন। তার এহেন কাণ্ড নিয়ে পেছনে লাখ লাখ বেসরকারি শিক্ষক ‘এমপিওভু্ক্ত সচিব’ বলে হাসাহাসি করেন। ফেসবুকে এ নিয়ে লেখালেখি হয় গত কয়েকবছর ধরে।
এছাড়া দুর্নীতিবাজ ও ঘুষখোর হিসেবে টিআইবি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পরিচিত ইউজিসির ফেরদৌসও তার আত্মীয়-স্বজনদের কাছে শিক্ষাসচিব পরিচয় দেন। ইউজিসিতে সচিব পদ রয়েছে।
বার্তা কক্ষ , ২৬ ডিসেম্বর ২০২০
এজি