সকাল বেলার ধনীরে তুই, ফকির সন্ধ্যা বেলা এতো দিন শুনেছিলেন, বাস্তবে প্রমান মিলেগেলো। খুব দুঃখ জনক একটা খবর, এক সময়ের রুপালি পর্দার জনপ্রিয় নায়িকা বনশ্রী এখন রাস্তার হকার।
বাংলাদেশি চলচিত্র জগতের এক সময়ের জনপ্রিয় নায়িকা বনশ্রীর কথা হয়ত অনেকের মনে আছে। সেই বনশ্রী এখন রাস্তায় হেটে হেটে বই বিক্রি করেন এবং বস্তিতে থাকেন, সম্প্রতি বনশ্রীর দুঃখ কষ্টের কথা শুনে বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় নায়ক অনন্ত জলিল সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
বনশ্রী অভিনীত ছবি ‘সোহরাব রুস্তম’ মুক্তি পায় ৯০ এর দশকে ছবিটি প্রযোজনা করেন সে সময়ের প্রভাবশালী প্রযোজক ফারুক ঠাকুর এবং ছবিতে বনশ্রীর বিপরীতে নায়ক হিসেবে অভিনয় করেছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন।
হিট করা সেই সোহরাব রুস্তম ছবি রাতা রাতি বনশ্রীকে এনে দিয়েছিল তারকা খ্যাতি, এর পর একে একে বনশ্রী অভিনয় করেন আরও কয়েকটি ছবিতে তবে সব কয়টি ছবি প্রযোজক ফারুক ঠাকুর নিজে, কারন ফারুক ঠাকুর বনশ্রীকে ঢাকাই ছবিতে নিয়ে আসেন এবং তিনি চাইতেন না বনশ্রী অন্য কারোর ছবিতে অভিনয় করুক। বনশ্রীর প্রতি ফারুক ঠাকুরের এমন বিধি নিষেধই এক সময় বনশ্রীর জন্য সমস্যা হয়ে দাড়ায়।
বনশ্রী যখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে তখন তিনি ফারুক ঠাকুরের বাসায় থাকতেন, কিন্তু হঠাৎ এলাকায় একটি খুনের ঘটনার সাথে ফারুক ঠাকুর জড়িয়ে গেলে তিনি গা ঢাকা দেন এবং বনশ্রীর দুর্দিন শুরু হয়। বনশ্রী এর পর বিভিন্ন পরিচালক প্রযোজকের সাথে কথা বলেও কোন ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পাননি।
এক সময় একটি বিউটি পার্লার দিলেও তা বেশীদিন টেকেনি, পরে বনশ্রী জীবন এবং জীবিকার তাগিদে অনেক কিছু করতে চাইলেও তিনি সফল হন নি, একসময় এক পুরুষকে বিয়ে করেন কিন্তু এক কন্যা শিশুর জন্ম হলেই স্বামী তাকে ছেড়ে পালিয়ে যায়।
রাস্তায় নেমে আসেন বনশ্রী, ফুটপাতে বই বেঁচে, বাসে হকারি করে কোন মতে সন্তান নিয়ে এক সময়ের রঙিন পর্দার রঙিন জীবন কাটানো বনশ্রী একজন ফুটফাতের হকারে পরিণত হন।
নিজের দূর অবস্থার কথা জানিয়ে এফডিসি শিল্পী কল্যাণ সমিতিতে সাহায্য চাইলেও কোন সাহায্য জুটেনি। সভাপতি নায়ক সাকিব খান থেকে শুরু করে ভিলেন সাধারণ সম্পাদক মিশা সওদাগরের কাছেও সাহায্যের হাত পেতে বিফল হন বনশ্রী।
বনশ্রীর কথা যখন বর্তমান সময়ের নায়ক অনন্ত জলিলের কানে এল তিনি দ্রুত বনশ্রীর খোঁজ খবর নেন এবং বনশ্রীকে আর্থিক সাহায্য করার জন্য হাত বাড়িয়ে দেন। চলচিত্রের এতো নামি দামী হর্তা কর্তারা যখন এগিয়ে এলেন না তখন বনশ্রীকে সাহায্য করতে নায়ক অনন্ত জলিল যে অবদান রাখলেন তা সত্যি তাকে প্রকৃত নায়কের আসনেই বসাল।
সাত বছর বয়সে তিনি শিবচর থেকে ঢাকায় চলে আসেন।সে সময় তার বাবা ঠিকাদারির কাজ করতেন। তার দুই বোন এবং এক ভাই রয়েছে। ছেলেবেলা থেকেই বনশ্রী সংস্কৃতি চর্চার প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন ফলে একসময় উদীচী গণসাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথেও যুক্ত হন। তিন ভালো গান করতেন। এরপর অভিনয় শেখার জন্য যোগ দেন সুবচন নাট্য সংসদে।
বিটিভির স্পন্দন অনুষ্ঠানে নিয়মিত আবৃত্তি করেছেন। এছাড়াও প্রায় দশটির মতো বিজ্ঞাপনচিত্রের মডেল হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।
সোহরাব-রুস্তম চলচ্চিত্রে ইলিয়াস কাঞ্চনের বিপরীতে অভিনয়ের মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রে তার অভিষেক ঘচে।
এরপর নেশা, মহাভূমিকম্প, প্রেম বিসর্জন, ভাগ্যের পরিহাস ইত্যাদী চলচ্চিত্রে একনাগাড়ে অভিনয় করেন। (আংশিক সূত্র উইকিপিডিয়া)
ভিডিও-