সারাদেশ

সংস্কারের অভাবে হরিপুর জমিদার বাড়ি বিলুপ্তির পথে

ঠাকুরগাঁয়ের হরিপুরে জমিদার বাড়িটি সংস্কারের অভাবে এখন বিলুপ্তির পথে। হিমালয়ের পাদদেশের উত্তর জনপদে সীমান্ত ঘেষা ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে প্রায় ৬৫ কি.মি. দূরত্বে হরিপুর উপজেলায় রয়েছে ১শ’৩ বছরের ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ির নিদর্শনটির অবস্থান।

এ সব নিদর্শনের মধ্যে অন্যতম হলো- জমিদার মৃত যগেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীর ছেলে রবিন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী ও বিশেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীর জমিদার বাড়ির ঐতিহাসিক নিদর্শন।

এরা দু’ভাই ছিলেন হরিপুরের জমিদার। রবিন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী ছিলেন বড় তরফ নামে একটি স্ট্রেটের মালিক ও বিশেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী ছিলেন ছোট তরফ নামে একটি স্ট্রেটের মালিক।

তাঁরা স্ট্রেট দু’টিতে থেকে পৃথকভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন।

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের সময় তারা এখানে আসেন। ১৯১৩ সালে ৩ একর ২৭ শতক জমির ওপর এ জমিদার বাড়ি ও জমিদারি পরিচালনার জন্য কাচারি, ধর্মীয় উৎসবের জন্য বিভিন্ন উপসানলয়, বিনোদনের জন্য নাচমহল, নাগমহল, অন্দরমহল ও অন্ধকূপ ইত্যাদি স্থাপন করেন।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তির সময় দু’জমিদার পাক ভারতে চলে যায়। এ সময় থেকে জমিদার বাড়ি ও তাদের ওইসব দর্শনীয় ঐতিহাসিক নিদর্শন দেখা-শোনার কেউ না থাকায় লোপাট হতে থাকে এবং অযতœ অবহেলার কারণে এখন প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।

প্রাচীন স্থাপত্যের সৌন্দর্য মন্ডিত ও এ নিদর্শনগুলো যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে দেশি বিদেশি পর্যটকদের কাছে দৃষ্টি আকর্ষণ করা সম্ভব হবে। অপরদিকে সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে।

লোহার রড ছাড়াই শুধু চুন, সুরকি ও ইট দিয়ে নির্মিত তিন তলা’র জমিদার বাড়িটির একতলা পুরো অংশ অযতœ ও সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। জমিদার বাড়ির ভেতর ও বাইরে যে সমস্ত কারুকাজ করা ছিল তা’ দর্শক নন্দিত। তা’দেখতে শ’ শ’ মানুষ ভিড় করতো।

কিন্তু কালের বিবর্তনের ফলে আর প্রসাশনের অবহেলার কারণে ও সংরক্ষণের অভাবে ধীরে ধীরে তা’ বিলুপ্তির পথে। এখন শুধু কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
মরণ ফাঁদও বটে।

দূর থেকে দেখে মনে হয় এটি জমিদার বাড়ি না জঙ্গলবাড়ি। হরিপুরের নাম করণের ইতিহাসের সংবলিত জমিদার বাাড়ি স্থান ও শাসন ব্যবস্থা পর্যালোচনায় ব্যাপকতা রয়েছে।

৯০ বছর বয়সি প্রবীণ ইদ্রিস আলী সরদার বলেন, আমরা জমিদারের শাসনকাল দেখেছি। তাদের ছেড়ে যাওয়া মহামূল্যবান সম্পদ সংরক্ষণ করা সরকারের উচিত। আগামি দিনের প্রজন্ম এটি দেখে কিছু জানতে পারতো।’

হরিপুর সদর ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মংলা চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘এ জমিদার বাড়ি হরিপুরের জন্য একটি ঐতিহ্য। এতে প্রতিয়মান হয় যে, জমিদাররা এখান থেকে তাদের শাসনকার্য পরিচালনা করতো। তাদের এ রাজকীয় বাড়ি ঘর বর্তমানে শত কোটি টাকা ব্যয় করলেও এ রকম সৌখিন দর্শনীয় ও নিপুণ কারুকার্য করা ভবন তৈরি করা সম্ভব নয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের সকলের ও সরকারের এ সকল জমিদার বাড়ি সংরক্ষণ করা উচিত। সরকার চাইলে এ জমিদার বাড়ি গুলিকে সংরক্ষণ করে মিউজিয়াম বা দর্শনার্থীদের জন্য পর্যটন কেন্দ্র করে তুলতে পারে।’

জমিদার বাড়িটি সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য হরিপুর উপজেলার সচেতনমহল সরকারের প্রতœতত্ত্ব বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

হরিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম জে আরিফ বেগ চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘আমি এ উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি এবং জমিদার বাড়িটি দেখেছি। এটি হরিপুরের জন্য একটি ঐতিহ্য এবং আগামী প্রজন্মকে এর পরিচিতির জন্য সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হবে।’

: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৯:০০ পিএম, ৯ ডিসেম্বর ২০১৬, শুক্রবার
ডিএইচ

Share