Feb 22, 2015 @ 06 : 12
লাইফস্টাইল প্রতিবেদক:
দৈনন্দিন জীবনে নর-নারীর সম্বন্ধ দাম্পত্য জীবনকে সুন্দর মধুময় করে তোলবার একটি প্রধান উপায়। এবার সে সম্বন্ধেই সুন্দর ও সুষ্ঠ আলোচনা করব। দুটি তরুণ-তরুণীকে জীবন সংগ্রামের অজস্র সুখ, দুঃখ, হাসি এবং কান্নার মধ্য দিয়ে ভারসাম্য রেখে চলবার উপযুক্ত করে দেখবার জন্যেই এই নিবিড় বন্ধনে বেঁধে দেবার প্রথা- যার নাম বিয়ে।
এমন একদল লোক আছেন যাঁরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন যে যৌন মিলনের ছাড়পত্রই হচ্ছে বিয়ে। এখানে আমি তাঁদের উদ্দেশ্য করে বলছি-
তাঁরা জীবনের স্বকীয়তাকে প্রথম দৃষ্টি থেকেই ভুল ভাবে দেখতে শুরু করেছেন। বিবাহিত ধর্মপত্নী মানে যে কেবলমাত্র যৌন জীবনের দাম্পত্য সঙ্গী তা নয়।সেটা এখানে আমি বেশ বড় করে তুলতে চাই।
পুরুষের এক মধুর আচরণ বন্ধন প্রথারুপেই এই বিয়ে স্বীকৃতি ও বিশ্লেষিত হয়ে এসেছে। বিয়ের প্রধান নির্দেশ এবং আসল বিষয় হল স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক স্নেহ, প্রেম, ভালোবাসা, সুখ-দুঃখ, হাসি- কান্না, দায়িত্ব-কর্তব্য, অধিকার প্রভৃতি। যাবতীয় উপলব্ধিকে এক ও অভিন্ন করে মিলিয়ে দিয়ে একত্রিত অনুভুতিতে প্রতিষ্ঠা করা।
অনেকে হয়তো মনে করতে পারে যে এর সব একটা ঘোর অবিচার। একজন নারীর একজন পুরুষকে এবং একজন পুরুষের একজন নারীকে এক বছর ভালো লাগতে পারে। কিন্তু তার পরেই আসে একঘেয়েমী, অসাড়তা এবং আনন্দহীনতা। এতে যে যৌন জীবনকে দুঃখ-কষ্টে ভরিয়ে তোলে।
কিন্তু প্রাচীন ঋষিরা অনেক ভেবেই চিন্তেই এ রীতির প্রচলন করেছিলেন। আমিত্ব, আত্ম সংযম কঠোর সাধনা ও একাগ্রতা, বিপুল ধৈর্য ও অধ্যবসায়
দ্বারা যৌন সম্পর্কের অনেক উর্দ্ধে বিবাহিত জীবনকে একটি শাশ্বত স্থায়িত্বের ও নিড়ত্বের গন্ডিতে মানতে হবে। সংস্কৃত শাস্ত্রে স্ত্রীকে মাতা, সখী,
দাসী এবং বেশ্যা রুপে যে বর্ণনা করা তা এক বিন্দু অতিরঞ্জিত নয়। স্নেহ এবং অধিকারে স্ত্রী হবে মাতার সমান।
দৈনন্দিন জীবনে, অসংখ্য সংঘাতের দুর্বিপাক থেকে স্বামীকে কিছুটা আড়াল করবার জন্যে স্বামীর সঙ্গে সঙ্গে থেকে সে হবে সখী। স্বামীর কর্মকেই নিজের জীবনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেবার জন্যে সে হবে শিষ্যা বা সহধর্মিনী। স্বামীর নিপুণ সেবার ভার সে নিজ হাতে তুলে নেবে, সে হবে দাসী।
স্বামীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে সে যখন মেতে উঠবে তখন হবে বেশ্যা এটার মধ্যে অত্যুক্তি কিছুই নেই। দাম্পত্য জীবনে এটা প্রত্যেক নারীর কর্তব্য।
পুরুষ স্বাভবতঃই বহুকামী। একঘেয়েমী সে কোনও দিনই সহ্য করতে পারে না। একঘেয়েমী দূর করে তাকে নানারূপ পন্থায়, দাম্পত্য জীবনকে মধুময়
করে তুলতে হয়। সব সময়ই ভাবতে হবে দু’জনে যেন দুটি নবীন প্রেমিক আর প্রেমিকা। দু’জনের কথার মাঝে ফুটে উঠবে নূতন প্রেমিক-প্রেমিকার কথার সুর।
আমাদের দাম্পত্য জীবন নিরানন্দ একঘেয়ে। অপ্রীতি ও নানা মনোমালিন্যের কেন্দ্রে পরিণত হয় অনেক ক্ষেত্রেই প্রকৃত শিক্ষার অভাবে। আর দাম্পত্য
জীবন সুখময় করে তোলবার উপায় না জানবার জন্যে। বহু দাম্পত্য জীবন নারীর জন্যে সুখী হ’তে পারে না। পৃথিবীর বুকে সুখী দম্পতির সংখ্যা দিনের পর দিন কমেই আসছে। এর ফলে বিয়ের আগ্রহের অভাব আজকাল বড়ই স্পষ্ট হয়ে দেখা দিচ্ছে।
দাম্পত্য জীবনের গোড়া দিকে আগ্রহের অভাব থাকে না। এ কথা বুঝিয়ে না বললেও চলবে। তখন দেখা যায় যে দু’জনের গভীর অনুরাগ অপরীসিম
নিবিড়তা। কিন্তু যতই দিন যায় ততই যেন তা মিলিয়ে যায়। অনুরাগ তখন পরিণত হয় বিরাগে। দাম্পত্য জীবনে ঘনিয়ে আসে তখন কলহ বিবাদ, মনোমালিন্য গতানুগতিকতা। এমন নারী অবশ্য পুরুষের ঘাড়ে সব দোষ চাপিয়ে নিশ্চিন্ত হবার প্রয়াস পায়।
কিন্তু সত্যি কি তাই? এটা কিন্তু নিরপেক্ষ মনোভাবের পরিচায়ক নয়। বহু দাম্পত্য জীবন নারীর জন্যে সুখী হতে পারে না। আবার বহু দাম্পত্য জীবন অসুখী হয় পুরুষের জন্য। অবশ্য এসবের জন্যেই দায়ী আমাদের শিক্ষা। দাম্পত্য জীবনকে সুখী করে তোলার শিক্ষা আমাদের দেশের
ছেলে-মেয়েরা তাদের পিতা-মাতাদের কাছ থেকে পায় না। বড় হয়ে তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যথেষ্ট জ্ঞান লাভ করে বটে কিন্তু এই যৌন জীবন
সম্বন্ধে থাকে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। এটা মনে রাখা উচিত যে একদিন জোর করে দাম্পত্য জীবনের বোঝা তরুণ-তরুণীদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিলে প্রথম কিছুদিন
তারা এর অপব্যবহার করবে। তারপর একদিন সব কিছুর প্রতি বীতশ্রদ্ধ হ’য়ে পড়বে।
প্রথমতঃ পুরুষের কথা ধরা যাব। পুরুষ অত্যন্ত স্বার্থপর। তারা ভুলে যায় যে নারীরও ব্যক্তিত্ব বলে একটা জিনিস আছে। তারা সব সময় নারীর উপর
অধিকার এবং প্রভুত্বে দাবী ঘটায়। পান থেকে চুন খসালেই তার মনে অহেতুক ক্ষোভের সঞ্চার হয়। নারী যে দাসী নয়- জীবনসঙ্গিনী এটা মনে রাখা প্রত্যেক পুরুষের কর্তব্য। সহৃদয়তা এবং পরস্পরের প্রতি সহানুভুতি সম্পন্ন হওয়াই সবচেয়ে বড় সাধনা। তারপর নারীর কথা। এমন অনেক নারী আছে, যারা গৃহকর্ম, ধর্মীয় ইবাদত, শ্বশুর-শাশুড়ীর সেবা ও দৈনন্দিন কার্যাবলীর প্রতি ব্যস্ত। আর তাদের সে ব্যস্ততাও অত্যধিক। এই
বিভিন্ন কার্যাবলীর মধ্যে তাদের অধিকাংশ সময় কাটে। তারা হয়ত গৃহিণী পতে পারে কিন্তু স্বামীর মনতুষ্টি বিধানে অক্ষম। শারিরীক ও মানসিক মিলন
থাকা সত্বেও যৌন ব্যপারে দু’জনের মধ্যে অনেক সময় গরমিল দেখা যায়। স্ত্রীর ব্যবহারে হয়ত স্বামী আনন্দিত ও গর্বিত।
কিন্তু তার যৌন জীবনে সে স্ত্রী সাহচর্য্যে বঞ্চিত। সব নারীরই যে সমান যৌন প্রাবল্য থাকবে তা বলছি না। কিন্তু গোটা দাম্পত্য রতি পর্যায়ের প্রাধান্যকেও অস্বীকার করা যায় না।
স্বামীর কর্তব্য
১। স্ত্রীকে মিত্র ভেবে তার সঙ্গে মিত্রবৎ আচরণ করবে।
২। স্ত্রী যেন আপনাকে তার একমাত্র নির্ভরস্থল বলে মনে করতে পারে।
৩। পত্নী যদি পতির চেয়ে সুন্দর না হয়, তথাপি তাকে ঘৃণা বা উপেক্ষা করা উচিত নয়।
ভালোবেসে তাকে আপন করে নেওয়াই কর্ত্তব্য।
৪। পত্নীর কাছে কোন কথা গোপন করা উচিত নয়। নিজের যা কিছু দোষগুণ খুলে বলা উচিত।
৫। কখনও পত্নীর সঙ্গে নির্লজ্জের মত ব্যবহার করা উচিত নয়।
৬। পত্নীর কাছে সর্বদা নিজের গাম্ভীর্য্য বজায় রাখা অনুচিত।
৭। সর্বদা সুমধুর ভাষায় তাকে আকর্ষণ করে নেওয়া উচিত।
৮। পত্নীর সামনে কোনও পরস্ত্রীর সঙ্গে মেলামেশা বা তার গুণগান করা উচিত নয়-
তাতে তার মনে দুঃখ বা হিংসার ভাব জাগতে পারে।
৯। পত্নী সাজসজ্জা করলে তার গুণগান করা পতির কর্ত্তব্য।
১০। পত্নী কোনও ভাল রান্না করে খেতে দিলে তার
প্রশংসা করা উচিত।
১১। পত্নীর কোনও
দোষত্রুটি থাকলে তা বুঝিয়ে বলা উচিত।
তাকে সেগুলি শুধরে নেবার জন্য উপদেশ দেওয়া উচিত।
জোর জবরদস্তি দ্বারা কখনও তাকে সংশোধন
করা যায় না তা মতে রাখা কর্তব্য।
স্ত্রীর কর্তব্য
১। পতিকে সব সময় প্রেমিক বা নিজের
সাথী বলে ভাবা উচিত। তার সঙ্গে সেই রকম ব্যবহার দ্বারা তুষ্ট করা সাধ্বী স্ত্রীর অবশ্য কর্তব্য।
২। কোন রোগব্যাধি হলে তা গোপন না করে পতির
কাছে খোলাখুলি ভাবে বলা উচিত।
৩। পতিনিন্দা শোনা উচিত নয়- কারণ তাতে নৈতিক
অধঃপতন ঘটতে পারে।
৪। বেশি খরচ পত্র করা বা পতির চেয়ে বেশি খরচ করে চালবাজী করা উচিত নয়।
৫। পতি বাইরে থেকে ফিরলে তার প্রতি যথোচিত
সম্মান ও প্রীতি প্রদর্শন করা উচিত।
৬। পতির সব জিনিসপত্র সব সময় ঠিকমত হাতের কাছে এগিয়ে দেওয়া উচিত।
৭। নারীর সব সময় মন ভার করে থাকা উচিত নয়। এতে পতি ও পত্নীর আন্তরিকতার অভাব ঘটে।
৮। সহনশীলতা নারীর শ্রেষ্ঠ গুণ- এটি প্রত্যেক নারী মনে রাখা উচিত।
৯। পতির সঙ্গে সব সময় মধুর ব্যবহার করা পত্নীর অবশ্য কর্তব্য।
১০। স্বামীকে কখনও কটু বাক্য বলা বা তার সঙ্গে ঝগড়া করা নারীর উচিত নয়।
১১। পতির নিত্যব্যবহার্য্য যে সব বস্তু-যেমন কাপড়, ছাতা, জুতো, বইপত্র এ সবের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা বুদ্ধিমতী নারী মাত্রেরই কর্ত্তব্য।
১২। সংসারের খরচ পত্রের হিসেব রাখা প্রত্যেক পত্নীর অবশ্য কর্ত্তব্য। আয় বুঝে ব্যয় করবে।
১৩। কোনও প্রদর্শণী বা উৎসব আনন্দে পতির অনুমতি ছাড়া যোগদান করা স্ত্রীর কর্ত্তব্য নয়।
১৪। পতির উপদেশ অনুযায়ী এবং তার রুচি অনুযায়ী ঘরের আসবাব পত্রাদি সাজানো এবং পরিষ্কার রাখা উচিত।
১৫। সখী বা বান্ধবীদের সঙ্গে বসে কখনও পতির নিন্দা করা উচিত নয়।
১৬। পতিকে প্রকৃত বন্ধুর মত ভাবা উচিত।
১৭। ঘর পরিষ্কার এবং ঘরের সব জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখা উচিত।
১৮। চাকরের সাহায্য ছাড়াই যতটা সম্ভব নিজ হাতে পরিবারের সব কাজ করবে।
১৯। সাধারণতঃ পরিচ্ছন্ন থাকবে- তবে বেশি বাবুগিরি ভাল নয়।
২০। স্বামীর খাদ্যদ্রব্য সম্ভব হলে নিজ হাতে রান্না করবে।
এখানে পতি-পত্নীর বিষয়ে সাধারণ বিষয়গুলি নিয়েই আলোচনা করা হলো।
তবে একটা কথা মনে রাখা উচিত। মেয়েদের পক্ষে স্বামী ও শ্বশুরের ঘর হলো একটি বিরাট পরীক্ষাগার।
উপরের নিয়মগুলি ছাড়াও আপন বুদ্ধির বলে যে মেয়ে সংসারের সব প্রয়োজনীয় কাজ খুঁজে নিয়ে করে থাকে,
সে মেয়ের স্বামীর সংসারে সকলের প্রিয় হয়।