আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংসদীয় আসন সম্পর্কে জানতে চেয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।এর আগে সীমানা নির্ধারণের পর কোনো প্রশাসনিক এলাকার সৃষ্টি, বিয়োজন ও সংকোচন হয়েছে কি-না সে সংক্রান্ত তথ্য পাঠাতে জেলা প্রশাসক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে।
ওই চিঠি অনুযায়ী, বিগত সীমানা নির্ধারণের পর ওই এলাকায় নতুন কোনো এলাকা সংযোজন বা বিয়োজন হয়েছে কি-না তার ভিত্তিতে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করবে ইসি। অন্য সংসদীয় এলাকা আগের মতোই থাকবে।
বর্তমান ক্ষমতাসীন দল বিদ্যমান সংসদীয় আসনেই নির্বাচন চায়। আর বিএনপি নির্বাচনী আসন পুনর্নির্ধারণের দাবি জানাচ্ছে। সোমবার নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব মো. আবুল কাশেম স্বাক্ষরিত এ চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, সর্বশেষ ২০১৩ সালের ৩ জুলাই নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণের গেজেট প্রকাশের পর যে সমস্ত প্রশাসনিক এলাকা সৃষ্টি, বিয়োজন ও সংকোচন করা হয়েছে তার তথ্যাদি প্রয়োজন। এসব তথ্যের প্রামাণিক দলিলসহ তা জরুরিভিত্তিতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী ভোটারের ভিত্তিতে সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাস করা হয়ে থাকে। দেশের অনেক জায়গায় ভোটার সংখ্যা বাড়লেও মাত্র কয়েকটিতে পরিবর্তন করে বর্তমান সংসদীয় আসনেই নির্বাচন করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ছিটমহলসহ বেশ কয়েকটি সংসদীয় সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হবে।
এ চিঠির মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হলো। তবে সীমানা পুনর্নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রস্তাবিত যে নতুন আইন প্রস্তুত করা হয়েছে তা আসন্ন সংসদ নির্বাচনে প্রয়োগ হচ্ছে না। পরের নির্বাচনগুলোতে প্রয়োগ হবে।
এর আগে বর্তমান ইসির সঙ্গে সংলাপ করে বিএনপি ২০০১ সালের সংসদীয় আসনে ফিরে যাওয়ার দাবি জানিয়েছিল। দলটির দাবি ২০০৮ সালে অধিকাংশ আসন পরিবর্তন করে ইসি।
এ সময় তাদের আসনগুলোকে ভেঙে দলকে বিপদে ফেলা হয়। কারণ যে এলাকায় বিএনপির দুটি আসনে ভালো সমর্থক ছিল সেখানে ১টি করা হয়েছে। ফলে দলীয় একটি আসন কমে গেছে। অন্যদিকে ইসির সঙ্গে সংলাপে আওয়ামী লীগ চেয়েছিল বর্তমান আইন দিয়ে আগামী সংসদ নির্বাচন হোক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের হাতে সময় কম। সীমানা নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রস্তাবিত নতুন আইন দিয়ে আগামী সংসদ নির্বাচন করা সম্ভব নয়। তাই বর্তমান আইন দিয়ে নির্বাচন করার কথা ভাবছে ইসি। কারণ এখন সবগুলো সংসদীয় আসন পরিবর্তন করতে গেলে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিবে।
ইসি সূত্র জানায়, নির্বাচনী রোডম্যাপ অনুযায়ী, সবগুলো সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে নির্বাচনের জন্য বেশি সময় নেই ইসির। জানুয়ারিতে ভোটার তালিকা হালনাগাদ, কিছু স্থানীয় সরকার নির্বাচন, ছিটমহলসহ কিছু সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে খসড়া প্রকাশ ও তা নিষ্পত্তিসহ নানা কাজ রয়েছে। তাই এ সময় বৃহৎ আকারে সীমানা নির্ধারণের কাজে হাত দেবে না ইসি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সীমানা পুনর্নির্ধারণ জরুরি। এটা করা না গেলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। ইসির তথ্যমতে, ২০০৮ সালে এক-এগারো পুনর্গঠিত ড. শামসুল হুদার কমিশন পার্বত্য ৩টি জেলা বাদে সারাদেশের ২৯৭ আসনেই পরিবর্তন আনে।
এর মধ্যে ১৩৩টি সংসদীয় আসনে পরিবর্তন আনা হয়। এ ব্যাপক সীমানায় পরিবর্তন করার মাধ্যমে ঢাকায় আসন বাড়ে ৮টি, জেলাতে কমে আসন সংখ্যা। সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, বরগুনা, বরিশাল ও ফরিদপুরে একটি করে আসন কমে। ২০০৮ সালের সীমানা বহাল রেখে ২০১৩ সালে অল্প কিছু আসনে পরিবর্তন এনে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেয় ইসি। এবারও অল্প পরিসরে পরিবর্তন এনে নির্বাচন করবে ইসি।
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১২ : ০০ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার
এইউ