তামাক আইন সংশোধন হলে লক্ষাধিক জীবন বাঁচবে

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি সংশোধন করে পাস করা হলে বছরে লক্ষাধিক মানুষের জীবন বাঁচবে।
বৃহস্পতিবার ১৯ মে কক্সবাজারের‘ সী পার্ল রিসোর্টে বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং ’ আয়োজিত‘২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জন’ শীর্ষক জাতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের প্রথম অধিবেশনে বক্তারা এসব কথা বলেন।

৩ দিনব্যাপি এ সম্মেলনে জাতীয় সংসদের ৩২ জন সংসদ সদস্য,সরকারের বিভিন্ন সেক্টরের ৫ জন সরকারি কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করছেন।

অধিবেশনে গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন,‘তামাক পণ্য ব্যবহার করে বছরে লাখ লাখ মানুষ মারা যায়। আমরা চাই আইনগুলো সংশোধন করে পাস করা হোক। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি যদি সংশোধন করে পাস করা যায় তাহলে বছরে লক্ষাধিক মানুষের জীবন বাঁচবে। সংসদ সদস্য হিসেবে জনগণের জীবন রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।’

অধিবেশনে অনলাইনে যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা.এবিএম খুরশীদ আলম বলেন,‘ জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণে সংসদ সদস্যদের এ উদ্যোগে অংশ নিতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। তামাক নির্মূল করতে আমাদের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি। আপনারা আমাকে আপনাদের পরামর্শ দেবেন। যদি আমার দিক থেকে আরও কিছু করতে হয় আমি করব। এটা সত্য যে,তামাকের ব্যবহার এখনও আমরা যথেষ্টভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। আইনেও কিছু অসংগতি রয়েছে। সেগুলো দূর করতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করা যেতে পারে।’

সংসদ সদস্য শিরীন আখতার বলেন,‘ সরকারের সদিচ্ছা,রাষ্ট্রের সদিচ্ছা তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আইনের ধারা ৪ ও ৭ বিলুপ্ত করতে হবে। তামাক কোম্পানিগুলোর সামাজিক দায়বদ্ধতা বন্ধ করতে হবে। সিগারেট পরিপূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। পরবর্তী আইনের জন্য এ বিষয়গুলো মাথায় নেয়া হয়েছে। আগামি পার্লামেন্টে এইটা যদি পাস করতে পারি, তাহলে তামাক নিয়ন্ত্রণে আমরা এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারব। আমাদের মূল কথা,শুধু আইন করাই যথেষ্ট নয়,আইনের সঙ্গে সঙ্গে কতটুকু বাস্তবায়ন করছে সেটা হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। এখন পর্যন্ত যে আইনটুকু আছে,সেটা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারছি কি না সেই বিষয়টুকুও আমাদের দেখতে হবে।’

তিনি আরও বলেন,‘ প্রকাশ্যে ধূমপান এখনও জরিমানা সাপেক্ষ। রাস্তাঘাট বাস-ট্রেন-লঞ্চ সব জায়গাতেই দেখতে পাচ্ছি প্রকাশ্যে ধূমপান করা হচ্ছে। বাসার আশেপাশে যে টং দোকানগুলো আছে সেখানেও দেদারসে তামাক বিক্রি হচ্ছে। এ জায়গাগুলোও বন্ধ করতে হবে। আর এগুলো নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব ও গুরুত্বও আছে ।’

সমাপনি বক্তব্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা.আ.ফ.ম রুহুল হক বলেন,‘তামাক নিয়ন্ত্রণের সরকারি পর্যায়ে নানা কমিটি রয়েছে। আমরা এ কমিটিগুলোকে সঙ্গে নিয়ে কিভাবে কাজ করে তামাক নিয়ন্ত্রণ করতে পারি,সেটা আমাদের ভেবে দেখতে হবে। আমরাও চেষ্টা করে একসময় শিশু মৃত্যুহার কমিয়েছি,বাল্যবিবাহ কমিয়েছি। যখন আমরা এ কাজগুলো বিশেষভাবে নিয়েছি,তখনই কেবল নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে।’

সুতরাং তামাক নিয়ন্ত্রণকে আমাদের বিশেষ কাজ হিসেবে নিতে হবে। আমরা অনেক সময় রাজনৈতিক বক্তৃতায় বলি,সমাজ সন্ত্রাসমুক্ত করতে চাই। কিন্তু আমরা কখনো বলি না, তামাকমুক্ত করতে চাই। সকল রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের এখন থেকে এটি স্লোগান হওয়া উচিৎ।’

অধিবেশনে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন ডিরেক্টর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল অধ্যাপক ডা.হারুনুর রশিদ,বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিংয়ের চেয়ারম্যান ডা.মো.হাবিবে মিল্লাত,কমিটি অব পাবলিক আন্ডারটেকিংয়ের চেয়ারম্যান আ.স.ম ফিরোজ,সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান রওশন আরা মান্নান প্রমুখ।

১৯ মে ২০২২
এজি

Share